বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি নেতারা বলেন, হামলাটি পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র; অনৈক্যই ষড়যন্ত্রকারীদের লক্ষ্য পূরণের পথ খোলে। জাতীয় স্বার্থ ও জুলাই অভ্যুত্থানের স্বার্থে দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
ঢাকা অফিস
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর সাম্প্রতিক হামলাকে ‘জুলাই অভ্যুত্থান নস্যাৎ করার পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির নেতারা।
শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত নেতারা একমত হন, রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও জাতীয় স্বার্থ এবং জুলাই অভ্যুত্থানের স্বার্থে দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল উপস্থিত ছিলেন।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে বলেন, “ওসমান হাদির ওপর হামলাটি পূর্বপরিকল্পিত এবং একটি বৃহৎ ষড়যন্ত্রের অংশ। হামলাকারীরা নির্বাচনের সব আয়োজন ভেস্তে দিতে চাচ্ছে। তারা প্রশিক্ষিত শুটার ব্যবহার করছে এবং নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে। এগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে।”
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “এই পরিস্থিতিতে আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পরস্পরের দোষারোপ থেকে বিরত থাকতে হবে। জাতীয় স্বার্থের জন্য এবং জুলাই অভ্যুত্থানের স্বার্থে আমাদের একসঙ্গে দাঁড়াতে হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করতে হবে।”
জামায়াতে ইসলামীর মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দলগুলোর মধ্যে একে অন্যকে দোষারোপের প্রবণতা বেড়েছে, যা বিরোধীদের সুযোগ দিয়েছে। তিনি বলেন, “ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থে একে অন্যকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেললে জাতি বিভক্ত হয়। সবাইকে তাদের কমিটমেন্ট ঠিক রাখতে হবে।”
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, মিডিয়া, প্রশাসন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সুসংগঠিতভাবে জুলাই অভ্যুত্থানকে খাটো করার প্রচেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, “আমাদের অনৈক্যকেই ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের বিজয় হিসেবে দেখছে। এটি রুখতে সবাইকে একত্রে দাঁড়াতে হবে।”
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, “বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক কর্মীর ছদ্মবেশে আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নকারীদের থামানো দরকার। আমাদের উচিত কৌশলগতভাবে নিরাপত্তা এবং সামাজিক ঐক্য বজায় রাখা।”
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “নিজেরা ঐক্যবদ্ধ না থাকলে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা কাজে আসবে না। রাজনৈতিক স্বার্থে দলগুলো যদি দ্বন্দ্বের খেলা চালায়, তাহলে আওয়ামী লীগ সুবিধা পাবে।”
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ভবিষ্যতের জন্য শুধু সরকার নয়, সব পক্ষকে শক্ত থাকতে হবে। রাজনৈতিক বক্তব্য থাকবে, তবে কাউকে শত্রু ভাবার বা আক্রমণের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নির্বাচনী উত্তেজনা থাকলেও তা যেন নিয়ন্ত্রিত মাত্রার মধ্যে থাকে, সেদিকে সকলকে খেয়াল রাখতে হবে।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল যোগ করেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হানাহানি শুরু হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হয়েছে। তাই শুধুমাত্র দলীয় স্বার্থ নয়, জাতীয় স্বার্থকেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।”
