আবদুল কাদের
গেল ২০২২ সালে বছরব্যাপী রাজপথে ছিল যশোর জেলা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন। দলীয় অফিস ও নেতাদের বাড়িতে হামলা-ভাংচুর, প্রায় ৭ শতাধিক মামলা ও পুলিশের বাধা সত্ত্বেও আন্দোলন থেকে দূরে থাকেনি দলটি। তবে দলীয় কার্যালয়ের সামনেই বেশিরভাগ সভা-সমাবেশ করেছে দলটি। জেলা বিএনপির নেতারা বলছেন, গণতান্ত্রিক দেশে যশোর বিএনপির উপর ক্ষমতাসীন দল ও পুলিশ অব্যাহতভাবে হামলা, মামলা করে দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে। কোথাও সমাবেশে করতে দেয়া হয়নি। এরমধ্যেও দলীয় নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে বছরব্যাপী কেন্দ্র ঘোষিত সব সমাবেশ করেছে। শত বাধা পেরিয়ে কর্মীরা ছিল আন্দোলনমুখি। এই আন্দোলন চলবে সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত।
এমনই বক্তব্য যশোর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের। ২০২২ সালের সাংগঠনিক পর্যালোচনা বিষয়ে দৈনিক কল্যাণকে নেতৃবৃন্দ এসব কথা জানান। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সাবেরুল হক সাবু বলেন, গত ১৪ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। পুরো সময় ধরে তারা বিএনপির উপর দমন-পীড়ন চালিয়েছে। বিশেষ করে গেল বছর (২০২২) আমার বাড়িসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জেলা বিএনপির নেতা দেলোয়ার হোসেন খোকন, মিজানুর রহমান খানসহ বিভিন্ন নেতাদের বাড়িতে এবং দলীয় কার্যালয়ে একাধিকবার হামলা করে ব্যাপক ভাংচুর করা হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীদের নামে কমপক্ষে ৭শ মামলা করা হয়েছে। পুলিশি অভিযানে কেউ বাড়িতে থাকতে পারেনি। মামলার খরচ যোগাতে অনেকে নিঃস্ব হয়েছে। সভা-সমাবেশ করতে গেলেই পুলিশ বাধা দিয়েছে। চেয়ার টেবিল নিয়ে গেছে। তারপরও আমাদের নেতাকর্মীদের মনোবল ভাঙ্গেনি। সব সমাবেশেই বিপুল নেতাকর্মীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন জানান, শুধু শহরে নয়, সব উপজেলাতে বিএনপির অনুষ্ঠানে সরকার দলীয় কর্মীরা ও পুলিশ বাধা সৃষ্টি করেছে। পুলিশের বাধার কারণে আমরা সব উপজেলাতে বিএনপির কমিটি গঠন করতে পারছি না। এখনও চৌগাছা ও ঝিকরগাছায় একটি করে ইউনিয়নে কমিটি গঠন করতে পারেনি। এরমধ্যেও আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি আগামী ফেরুয়ারি মাসে জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, আমার নামে ৩৪টি, অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের নামে ৫৪টি, সাবেরুল হক সাবুর নামে ৫৪টি ও মারুফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৫৫টি মামলা করা হয়েছে। তারপরও আমরা আন্দোলনমুখি। গেল বছর ধরে আমরা সব কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি। কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। সামনে সরকার বিরোধী কর্মসূচিতে আমরা কর্মীদের পাশে থাকবো।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক পৌরসভার মেয়র মারুফুল ইসলাম বলেন, গেল বছর আমাদের প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে পার হতে হয়েছে। পুলিশের ব্যাপক বাধা, মামলা, গ্রেফতার আর আওয়ামী লীগের হামলার শিকার হয়েছি আমরা। তারপরও আন্দোলনে আমরা সফল। শত বাধাকে উপেক্ষা করে আমাদের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ ছিল এবং এখনো রয়েছে। কারো মনোবল নষ্ট হয়নি। বরং সরকার বিরোধী আন্দোলনে এখন আমরা সামনের কাতারে রয়েছি।
এদিকে দলের মধ্যে বিভেদ মিটিয়ে এক কাতারে সব নেতাকে এনেছে কেন্দ্রীয় নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলে দাবি করেছেন নেতারা। তারা বলছেন, অমিতের দক্ষ নেতৃত্ব, মানবিক গুণাবলী এবং বিপদে নেতা-কর্মীদের পাশে থাকার কারণে সবাই তার নেতৃত্ব মেনে নিয়েছে। এবং তারই নির্দেশনা মেনে সবাই সরকার বিরোধী আন্দোলন করছে।
জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান খান জানান, ২০১৬ সালে কাউন্সিলের মাধ্যমে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। তখন থেকে তিনি জেলা বিএনপি মধ্যে সব ধরণের দূরত্ব কমিয়ে আনার চেষ্টা চালান। তার মেধা দিয়ে দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। এজন্য শত বাধাকে উপেক্ষা করে সবাই আন্দোলনমুখি হচ্ছেন।
বিএনপি এখন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে এগোতে চায়। লক্ষ্য পূরণে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। যশোরের ১০৫টি ইউনিয়নে বিএনপির সাংগঠনিক ইউনিট রয়েছে। সবগুলো কমিটি পুনর্গঠনের কাজ চলছে। অন্যদিকে অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে যুবদল, ছাত্রদল, কৃষক দলকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা দল, শ্রমিক দল, মহিলা দল, মৎস্যজীবী দল, ওলামা দল ও তাঁতী দলের পুনর্গঠন কাজও শিগগিরই শুরু করা হবে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত জানান, ক্ষমতাসীন দল গত ১৪ বছর ধরে বিএনপির উপর দমন পীড়ন করেছে। হামলা-মামলার শিকার হননি এমন নেতা কম রয়েছেন। সব উপেক্ষা করে আমরা সফল আন্দোলন করেছি। এখনও আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। জেলা বিএনপি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। যতই বাধা আসুক না কেন, আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার বিরোধী আন্দোলন থেকে পিছপা হবে না।