আব্দুল্লাহ সোহান, মণিরামপুর: ১৩২৮ সনের ২২ মাঘ প্রথম মনীন্দ্র নাথ ফকির কয়েকজন ভক্ত নিয়ে মণিরামপুরের পাঁচবাড়িয়া গ্রামে মেলা আয়োজন করেন। মেলার অনুমোদন দেন ম্যাষ্ট্রিটেট।
এরপর ১৩৮৮ সালে ৬০ বছর বয়সে মনীন্দ্র নাথ পরলোক গমন করেন। তাকে সমাধিস্থ করা হয় বাড়ির আঙ্গিনায় ঠাকুর ঘরের উত্তর পাশে। মৃত্যুর পর থেকে উত্তরসূরীরা চালিয়ে যাচ্ছে তার কর্মযজ্ঞ।
প্রতিবছর তিনদিন ব্যাপী পাঁচবাড়িয়া মহীন্দ্র ফকিরের বাড়িতে বসে ফকিরের মেলা। মেলা শুরু দিন থেকে বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের আনাগোনা শুরু হয়। ভক্তসহ অন্যরা সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পাশে ঠাকুর ঘরে বসে থাকেন পুরহিত ও শিষ্যগণ। সকাল থেকে কীর্তন ও আরাধনা শুরু হয়। চলে রাত অবধি।
বাইরে থেকে আসা ভক্তগণের প্রসাদ দেয়া-নেয়ার পাশাপাশি আশির্বাদ করে পুরহিতরা। দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভক্তগণ মহীন্দ্রর বাড়িতে রাত যাপন করেন। এভাবেই ১০০ বছর ধরে চলে আসছে ফকিরের মেলা।
১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মহীন্দ্র নাথ ফকির পরিবারের আয়োজনে ২২ মাঘ থেকে শুরু হয় এই ফকিরের মেলা। তিনদিন ব্যাপী মেলার সমাপনী দিন ছিল সোমবার। দেশের সার্বিক করোনা পরিস্থিতি কথা চিন্তা করে এবছর মেলাটি তেমন জমেনি। তবে স্বল্প পরিসনে মেলার আয়োজন করেছেন মহীন্দ্র নাথ ফকিরের পরিবার।
মেলা উপলক্ষে পাঁচবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পশরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানীরা। অন্য বছরগুলোর তুলনায় করোনা পরিস্থির কারণে এবছর দর্শনার্থী ও ভক্তবৃন্দের সমাগম কম ঘটেছে বলে জানিয়েছেন মহীন্দ্র নাথ ফকিরের পুত্র অবসারপ্রাপ্ত শিক্ষক বশুবতি নাথ বিশ্বাস।
তিনি বলেন, ১৯৬৫ সালে কলেজে পড়া অবস্থায় আমি নিজেই জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে মেলার অনুমতি নিয়ে আসতাম।
মহীন্দ্র ফকিরের আরেক ছেলে নারায়ণ নাথ বলেন, বেলোকাটির গোলাম ফকিরের শিষ্য ছিলেন আমার বাবা মহীন্দ্র। আজ ১৪২৮ সন বাবা মরে যাওয়ার পর থেকে আমরা ফকিরের মেলার আয়োজন করে আসছি। ১০০ বছর পূর্ণ হলো ফকিরের মেলার।
নওয়াপাড়া উপজেলার চলকিয়া গ্রাম থেকে আসা শিষ্য পৌরপদ বলেন, মন্ত্র-তন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন গুরু মহীন্দ্র। তিনি মন্ত্রপাঠ করে অনেক রোগ সারিয়েছে। আরেক শিষ্য উর্মিলা রানী বলেন, মেলার শুরুর দিন এসে নিশান উঠায় আর নিশান নামিয়ে আমরা চলে যায়।
পাঁচবাড়িয়া কলেজের শিক্ষক বুরান বিশ্বাস বলেন, মনীন্দ্র নাথ ছিলেন আমার দাদু, বর্তমান ফকিরের মেলার আয়োজন করেন বাবা ও কাকারা। আগামীতে দাদু রেখে যাওয়া কর্মযজ্ঞ আমরা চালিয়ে যাবো।
মণিরামপুর পৌরসভার গাংড়া গ্রামের গুরুপদ দাস জানান, শুরুর দিন থেকে সমাপনী দিন পর্যন্ত রাত যাবন করি। যতদিন আছি গুরু বাড়িতে ততদিন এই কাজে আসবো।
প্রসাদ দিতে মহাদেবপুর গ্রামের সুশিল দাসের ছেলে সুজিত দাস বলেন, প্রতিবছর ফকিরের মেলা গুরুদের কাছ থেকে আশির্বাদ নিতে আসি।