ঢাকা অফিস
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জব্দ করা প্রায় দুই কেজি কোকেনের গন্তব্য ছিল ভারতের নয়াদিল্লি। আফ্রিকার দেশ বেনিন থেকে আনা এই চালান মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কা থেকে কাতারের দোহা হয়ে আসে ঢাকায়। বাংলাদেশ ছিল পাচারের ট্রানজিট। তদন্তকারীরা বলছেন, দেশেও ভয়াবহ মাদক কোকেনের বাজার তৈরির পরিকল্পনা ছিল আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানে জড়িত চক্রের গ্রেপ্তার নারী সদস্যের। তাই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।
সালোমে লাল রামধারি নামের এক ভারতীয় নারীকে গত শনিবার ১ কেজি ৮০০ গ্রাম কোকেনসহ বিমানবন্দরে আটক করে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। জব্দ কোকেনের মূল্য প্রায় ১২ কোটি টাকা। এ ঘটনায় কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আজিজুল বারী বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় গতকাল রোববার গ্রেপ্তার নারীকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। তাঁর বাড়ি ভারতের মিজোরাম রাজ্যে।
সূত্র জানায়, পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই নারী বলেছেন, বেনিনে এক বান্ধবীর মাধ্যমে কোকেনের চালানটি হাতে পান। বাংলাদেশে এক দিন রাখার পর চালানটি নেপাল হয়ে নয়াদিল্লিতে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। ঢাকায় ওই এক দিন থাকার জন্য মুম্বাই থেকে উত্তরার একটি আবাসিক হোটেলে তাঁর জন্য কক্ষের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তিনি আন্তর্জাতিক একটি মাদক চক্রের সদস্য বলে স্বীকার করেছেন। বাংলাদেশে থাকা কয়েকজন নাইজেরীয়র সঙ্গেও চক্রটির যোগাযোগ রয়েছে। ঢাকায় তাঁদের সঙ্গে তাঁর দেখা হওয়ার কথা ছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, ওই নারীর তথ্যে নাইজেরীয় এক যুবকের খোঁজে নেমেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। গ্রেপ্তার নারী এর আগে একাধিকবার পাপুয়া নিউগিনি, ইন্দোনেশিয়া, দুবাইসহ কোকেন পাচার হয় এমন দেশে গেছেন। তিনি মিজোরামের একটি প্রতিষ্ঠানের স্টেনোগ্রাফার। তাঁর সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাদক পাচারকারীদের সম্পর্ক খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তর বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার তোহিদুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁর দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। তাঁর বিষয়ে জানতে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাজমা জ্যাবিন বলেন, অধিদপ্তরের কর্মতৎপরতায় এই চোরাচালান প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে।
দেশে হেরোইন, ইয়াবাসহ অন্য মাদক পাওয়া গেলেও কোকেনের প্রচলন কম বলেই ধারণা। এর আগে ২০১৩ সালে পাউডার কোকেনের বড় একটি চালান আটক করা হয়েছিল। বিশ্বের দুটি প্রধান মাদক উৎপাদন ও চোরাচালানের কেন্দ্র গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল ও গোল্ডেন ক্রিসেন্টের ঠিক মাঝখানে অবস্থান হওয়ায় বাংলাদেশকে ট্রানজিট করার ঝুঁকি আগে থেকেই রয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, ২০১৩ সালের পর ২০১৫ সালের ৬ জুন কোকেনের সবচেয়ে বড় চালান ধরা পড়ে চট্টগ্রাম বন্দরে। উরুগুয়ে থেকে জাহাজীকরণ করা সূর্যমুখী তেলের চালান জব্দ করে ১০৭টি ড্রামের মধ্যে একটি ড্রামের নমুনায় তরল কোকেন শনাক্ত হয়। জব্দ করা ৩৭০ লিটার কোকেনের মূল্য প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। তরল কোকেনকে গুঁড়া বা পাউডার কোকেনে রূপান্তরের প্রযুক্তি বা যন্ত্রপাতি বাংলাদেশে নেই।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উত্তরের উপপরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের বিমানবন্দরের স্ক্যানারগুলো মাদক শনাক্ত করার মতো আধুনিক নয়। তাই অনেক ক্ষেত্রে মাদক ধরা পড়ে না। মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এই প্রবেশপথগুলোতে নজরদারি বাড়াতে হবে।