ঢাকা অফিস
১০ দফা দাবি আদায় এবং বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ১৬ জানুয়ারি দেশব্যাপী গণমিছিল করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। বুধবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে এ ঘোষণা দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
কর্মসূচিটি সারাদেশের প্রতি জেলা-উপজেলায় পালন করা হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে আজকের এই গণঅবস্থান কেন্দ্রীয় গণঅবস্থানে পরিণত হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের সহযোদ্ধারা অবর্ণনীয় কষ্টে কারাগারে রয়েছেন। গত ৭ তারিখ এই জায়গায় আমাদের এক সহযোদ্ধাকে শহীদ করা হয়েছে; এ পর্যন্ত আমাদের ১৫ জন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন।”
‘মিথ্যা মামলায়’ বেগম খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দী করা রাখা হয়েছে, ১৫ বছর ধরে তারেক রহমানকে নির্বাসনে রাখা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, “আজকে সরকার আমাদের গণঅবস্থান কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে সমাবেশ পণ্ড করেছে।”
বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, “রুহুল কবির রিজভী, আব্দুস সালাম,খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীসহ অসংখ্য নেতাকর্মীদেরকে কারাগারে বেআইনিভাবে রাখা হয়েছে। আওয়ামী লীগ বেআইনিভাবে ক্ষমতা রয়েছে। তারা এখন আর রাজনৈতিক দল নয়, তারা রাজনৈতিক দলের সকল চরিত্র হারিয়ে ফেলেছে।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে এবং ১০ দফা দাবি মনে নিতে হবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, “চাল-ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমাতে হবে। সরকারের কর্মকর্তারা আজ হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। প্রত্যেকটি ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে,”
৯ তারিখ কারামুক্তির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যারা আমাদের [ফখরুল, আব্বাস] মুক্তির জন্য বিবৃতি দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই, মিডিয়ার ভাইদের ধন্যবাদ জানাই। আরো ধন্যবাদ জানাই যারা আমাদের গ্রেপ্তার করার পরও সারাদেশে রাস্তায় নেমেছেন তাদেরকে,”
“জেগে উঠি, নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলি,” যোগ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানের সভাপতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “এই সরকারের পক্ষে আর বাংলাদেশকে মেরামত করা সম্ভব নয়, রাষ্ট্র মেরামত সম্ভব নয়। এই সরকার শুধু বাংলাদেশের জনগণই নয়, সারাবিশ্বের কাছেই ঘৃণিত। সরকারকে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতন ঘটিয়ে এই রাষ্ট্র মেরামত করবো।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “[জেলখানায়] একটা সেলে খুব বেশি হলে দুইজন থাকতে পারবে; সেখানে ৭-৮ জন লোক রাখা হচ্ছে। আজ জেলখানায় জায়গা নেই বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে আটকের কারণে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা কাউকে ধাক্কা দিয়ে ক্ষমতায় থেকে নামাতে চাইনা। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করে সরকার পতন ঘটাবো। শান্তিপূর্ণ মিছিল মিটিংয়ের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটাবো।”
যা আছে বিএনপির ১০ দফায়
১. বর্তমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।
২. ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮ খ, গ ও ঘ-এর আলোকে একটি দলনিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে।
৩. নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বর্তমান অবৈধ নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। এই নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করতে হবে।
৪. খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি, দেশে সভা-সমাবেশ ও মত প্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা, সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দলের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা, স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার না করা।
৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪-সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালাকানুন বাতিল করতে হবে।
৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস, সার ও পানিসহ জনসেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।
৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেটমুক্ত করতে হবে।
৮. গত ১৫ বছর ধরে বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ার বাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন/দুর্নীতি চিহ্নিত করে অতি দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৯. গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।
আরও পড়ুন: যশোরে বিশৃঙ্খলা করার টেষ্টা করো, তাহলে তার ঝাল বুঝাই দিবো : শাহীন চাকলাদার এমপি