শাহারুল ইসলাম ফারদিন
যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চুরি অনেকটা নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর পর স্বজনদের কান্নায় যখন পরিবেশ ভারি হয়, তখই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চুরির ঘটনা ঘটে। হাসপাতালে ১৬টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হলেও এর মধ্যে ৮টি বর্তমানে অকেজো। যেকারণে অনেক সময় চুরির ঘটনা ধরা পড়ছে না। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন রোগীর স্বজনরা। টাকা না থাকায় অনেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ না কিনেই বাড়ি চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানান, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন সাড়ে ৩শ রোগী ভর্তি থাকে। এছাড়া বহিঃবিভাগ থেকে চিকিৎসা নেন প্রতিদিন এক হাজারের বেশি রোগী। যশোর ছাড়াও নড়াইল, মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলার রোগীরা এখানে আসেন। কিন্তু চোরের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা।
গত ৬ মে হাসপাতালের আউটডোরে টিকিট সংগ্রহের সময় সদরের চুড়ামনকাটির বাগডাঙ্গা গ্রামের রমজানের স্ত্রী আর্জিনা বেগমের সাড়ে ৪ হাজার টাকা বোরখার পকেট কেটে নিয়ে নেয় পকেটমারের দল। একই সময়ে কল্পনা রাণী হাসপাতালের ওয়ার্ডে গড়াগড়ি করে কান্না করতে দেখা যায় ৩ হাজার ৪শ’ টাকা চুরির ঘটনায়। মাগুরার শালিখার বিষু কর্মকারের স্ত্রী এই কল্পনা রাণী বলেন, মা হার্টের রোগী। সকালে মাকে হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্র্তি করি। বেলা সাড়ে ১০টার দিকে রাউন্ডের চিকিৎসক মাকে দেখার পর জরুরি ওষুধ আনার জন্য ব্যবস্থাপত্র দেন। ওষুধ কেনার জন্য শরীরে লুকিয়ে রাখা টাকা বের করে রাখার পর পলকেই দেখি টাকা নেই।
গত সপ্তাহে সদরের বাগডাঙ্গা গ্রামের বিশ্ব নাথের স্ত্রী অধিলক্ষি নামের আরেক মহিলার দেড় হাজার টাকা, তাহসিনের ও জবেদ আলী বিশ^াস নামের দুজনের দুটি মোবাইল হারিয়েছে পকেট থেকে। অনেকে ঘটনাস্থলে সিসি ক্যামেরা দেখে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তার কার্যকারিতা নেই।
হাসপাতালের কর্মচারীদের কয়েকজন জানান, এই চোরেরা বহিরাগত পকেটকাটা দল। অধিকাংশ চুরির ঘটনা ঘটছে টিকিট কাউন্টার ও চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে রোগীদের জটলার মধ্যে। কেউ কেউ বলেছেন, নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিরা এসব চুরির সঙ্গে জড়িত। এরা ভর্তি রোগীদের থালা-বাসনও নিয়ে যায়। সেবা নিতে আসা ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা নারীদের টার্গেট করে হাসপাতালে চোরদের উপদ্রব বেড়েই চলেছে। হাসপাতাল প্রশাসনকে মৌখিকভাবে অভিযোগ দিলে বলা হয় থানায় অভিযোগ করতে।
এদিকে হাসপাতালের কর্তব্যরত টাকা না দিলে আটকে দেয় ট্রলি, স্ট্রেচার। এতে করে সেবা নিতে আসা রোগীরা পড়ছে ভোগান্তিতে। ৬ মে বিকেলে নাভারণ হাসপাতাল মোড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ঝিকরগাছার বেরুরিপানি গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা মুনছুর আলীর ছেলে গোলাম মোস্তফা জানান, বাবার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় জরুরিভাবে হাসপাতালে নিয়ে আসি। স্ট্রেচারে করে জরুরিভাবে ওয়ার্ডে নেয়া হয়। সেখান থেকে সার্জারি ওয়ার্ডে নেওয়ার পরেই স্ট্রেচারম্যান টাকা দাবি করে। কি জন্য টাকা জিজ্ঞাসা করতেই জানাল, টলি ঠেলে নিয়ে আসলাম তার জন্য বখশিস। এমন অভিযোগ শুধু গোলাম মোস্তফার না। প্রতিদিন দুরদূরন্ত থেকে আসা অধিকাংশ রোগীর স্বজনদের একই অভিযোগ, স্ট্রেচারে উঠালেই বখশিস দিতেই হবে।
এবিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হারুন অর রশীদ বলেন, এখানে জনসাধারণের অবাধ চলাচল থাকে তো, এই জন্য মাঝে মাঝে মোবাইল ও টাকা চুরি ঘটনা ঘটে। আমাদের ১৬টি সিসি ক্যামেরার মধ্যে আটটি সচল আছে। বাকিগুলির ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে জানানো হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি সচল করা হবে। চুরির ঘটনায় আমরা বেশ কয়েক জনকে ধরে পুলিশেও দিয়েছি। তবে এগুলো পুলিশ প্রশাসনের দেখার দায়িত্ব আমাদের না। আর আয়া বা হাসপাতালের দায়িত্বরতদের সেবার বিনিময় বখশি নেওয়ার সুযোগ নেই। এই বিষয় কোন অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।