বিবিসি
একজন কানাডীয় ব্যক্তি স্থানীয় ভাগাড়ে স্তূপ করা আবর্জনার ভেতর তল্লাশি চালান। তার এই সাহসী, রোমান্টিক ও শেষ পর্যন্ত সফল প্রচেষ্টায় তিনি স্ত্রীর অসাবধানতাবশত ফেলে দেওয়া বিয়ের আংটিগুলো খুঁজে বের করেন।
কাহিনির শুরু যখন স্টিভ ভ্যান ইসেলডাইক ও তার ২৬ বছরের স্ত্রী জ্যানিন সিনেমা থেকে পপকর্নের একটি ব্যাগ নিয়ে বাড়ি ফেরেন এবং তা বাগানে ছড়িয়ে পড়ে। মাখন মেশানো পপকর্নগুলো পরিষ্কার করার সময় জ্যানিনের আংটিগুলো সম্ভবত সেই পপকর্নের ব্যাগেই পড়ে যায়, যা পরে ফেলে দেওয়া হয় জৈব বর্জ্যের পাত্রে।
বর্জ্যগুলো তাদের বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার পর দম্পতি বুঝতে পারেন আংটিগুলো তাদের কাছে নেই। পর দিন ভ্যান ইসেলডাইক ১৮ টন জৈব বর্জ্যের ভেতর থেকে আংটি খুঁজে বের করার দুরূহ কাজ শুরু করতে ভাগাড়ে যান। তিনি বিবিসিকে জানান, তিনি বেশ আশাবাদী ছিলেন। তাকে অবশ্যই খুঁজে পেতেই হবে।
কারণ ‘স্ত্রীর আংটিগুলো তো লাগবেই, তাই না?’
বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে ঠিক কোন মুহূর্তে হীরার আংটিগুলো হারিয়ে গেছে, তা চিহ্নিত করার পর স্টিভ ভ্যান বুঝতে পারেন, তাকে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার মিশন স্যানিটারি ল্যান্ডফিলে সেগুলো খুঁজতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী খুবই সন্দিহান ছিল। আমি বলেছিলাম, আগামীকাল সকালে ভাগাড়ে যাব এবং জিজ্ঞেস করব সেখানে খুঁজতে পারি কি না। তখন সে বলে, ওরা তোমাকে খুঁজতে দেবে না।
আর আমি বললাম, তুমি জানো না, চেষ্টা করতেই হবে।’
পরে ১৫ আগস্ট একটি বেলচা ও গ্লাভস হাতে স্টিভ ভ্যান সিনেমা হলের পপকর্নের যেকোনো চিহ্ন খুঁজতে পচা ঘাস ও খাবারের বর্জ্যের মধ্যে তল্লাশি শুরু করেন। দিনটা বৃষ্টিভেজা ছিল ও খুব বেশি গরম ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, এই সৌভাগ্যজনক আবহাওয়া ‘দুর্গন্ধ কমাতে সাহায্য করেছিল’।
ভাগাড়ে কর্মরত ডেনি ওয়েবস্টার এক্সকাভেটরের সাহায্যে বর্জ্যের স্তূপ তুলে খোঁজার কাজে সহযোগিতা করেন। ঘটনাটি প্রথম প্রকাশ করা সিটিভিকে তিনি বলেন, ‘মাথায় চলছিল, কিভাবে তাকে বলব যেন নতুন আংটি কিনে দেন।
’
ওয়েবস্টারের মতে, যেভাবে ভ্যান ইসেলডাইক কাদা-মাটিতে হাত-পা ডুবিয়ে খুঁজছিলেন, স্বাভাবিক কেউ এটা করতেন না। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, প্রথম আংটিটি দ্রুতই পাওয়া যায়, যখন তিনি তার পরিবারের ফেলে দেওয়া কিছু সসেজ চিনতে পারেন। এক ঘণ্টার মধ্যে দুটি আংটিই উদ্ধার হয়। তিনি তখনই স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন, যিনি তখন আংটি খোঁজার জন্য একটি মেটাল ডিটেক্টর কিনতে বের হয়েছিলেন। খবর শুনেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
ভ্যান ইসেলডাইক বিবিসিকে বলেন, ‘অনেকেই এই গল্প শুনে বিস্মিত। আমিও সমানভাবে বিস্মিত। আপনি সব আশা নিয়ে যান এবং যা পারেন তাই করুন।’
অন্যদিকে জ্যানিন বলেন, এই ঘটনাটি তাদের দাম্পত্য সম্পর্ক আরো দৃঢ় করেছে। তিনি হাসতে হাসতে সিটিভিকে বলেন, ‘আমি জানি, সে আমাকে কতটা ভালোবাসে—যে পচা, দুর্গন্ধযুক্ত বর্জ্যের ভেতর খুঁজতে রাজি হয়েছে।’