শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি
অবৈধভাবে সুন্দরবনে প্রবেশ করে বিষ দিয়ে মাছ ধরার সময় তিন জেলেকে আটক করেছেন বনরক্ষীরা। শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে শরণখোলা রেঞ্জের ভোলা টহল ফাঁড়ির ইসমাইলের ছিলা এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
পূর্ব সুন্দরবনে হঠাৎ করেই বিষ অপরাধীদের দৌরাত্ম বেড়েছে। সুন্দরবনের নদী ও খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরার সময়ে গত ৩ দিনের ব্যবধানে পৃথক দুটি অভিযান চালিয়ে বনরক্ষীরা বিষমিশ্রিত মাছ, বিষের বোতল, জাল ও নৌকাসহ ৫ দুর্বৃত্তকে আটক করছে।
আটক জেলেরা হলেন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার মধ্য সোনাতলা গ্রামের আসাদুল মল্লিক, মিরাজুল মল্লিক ও নঈম মুন্সি। এ সময় একই গ্রামের জাকির মল্লিক নামের তাদের সঙ্গী এক জেলে পালিয়ে যান। এদের কাছ থেকে কীটনাশক পাউডার, একটি ডিঙি নৌকা এবং একটি মাছ ধরার ভেসাল জাল জব্দ করা হয়।
এর আগে গত সোমবার সকালে চাঁদপাই রেঞ্জের তুলাতলা খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরার সময়ে ধানসাগর স্টেশনের বনরক্ষীরা সজিব হাওলাদার ও লুৎফর তালুকদার নামে দুই দুর্বৃত্তকে হাতে নাতে আটক করে। এসময় তাদের কাছ থেকে বিষ দিয়ে ধরা আধা মণ চিংড়ি মাছ, ৮ বোতল রীপকর্ড (কীটনাশক), একটি জাল ও ডিঙি নৌকা আটক করা হয়।
আরও পড়ুন:ঝিনাইদহে ‘স্পিরিট পানে’ ৩ মৃত্যু
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, সকাল থেকে ফাঁড়ির বনরক্ষীরা নিয়মিত টহলে ছিলেন। বনরক্ষীরা ইসমাইলের ছিলার কাছে গেলে চার জেলেকে খালে মাছ ধরতে দেখেন। জেলেরা বনরক্ষীদের দেখে পালানোর চেষ্টা করলে তিনজনকে আটক করা হয়।
সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ ধরার এ ধ্বংসযজ্ঞে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদ ও বন রক্ষায় কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সুন্দরবন সহব্যবস্থাপনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ ফরিদ খান মিন্টু গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, কিছু অতিলোভী জেলে কম সময়ে ও কম পরিশ্রমে বেশি মাছ ধরার আশায় বনের নদী ও খালে বিষাক্ত কীটনাশক ঢেলে দিচ্ছে। মুহূর্তেই নদী ও খালে থাকা মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী লাফিয়ে লাফিয়ে তীরে উঠে নিস্তেজ হয়ে মারা যাচ্ছে। এতে মৎস্য ভান্ডার খ্যাত সুন্দরবনের প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক সাংবাদিক নজরুল ইসলাম আকন বলেন, ভয়ংকর এ ধ্বংসযজ্ঞ চলতে থাকলে এক দিকে সুন্দরবনের নদী ও খাল মৎস্য শূন্য হয়ে পড়বে। এতে মৎস্য আহরণের উপর নির্ভরশীল এ অঞ্চলের কয়েক হাজার জেলে তাদের পেশা হারাবে। অন্যদিকে সুন্দরবনের বাঘ, কুমির, সাপ, হরিণ ও বানরসহ অন্যান্য প্রাণী বিষাক্ত পানি পান করে নানা রোগাক্রান্ত হয়ে পড়তে পারে। বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকারিদের দমন করতে না পারলে বনের জীব বৈচিত্র্য চরম হুমকির মুখে পড়বে বলে অভিমত দিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা শামসুল আরেফিন বলেন, সুন্দরবনে সব ধরনের অপরাধ দমনে বন বিভাগ তৎপর রয়েছে। তবে, বিষ প্রয়োগকারীদের দমনের জন্য সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ও অপরাধীদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
আরও পড়ুন:১২ বছর পর র্যাবের হাতে আটক যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী বিল্লাল হোসেন
১ Comment
Pingback: দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে মাছবোঝাই ট্রাকের ধাক্কা, ২ হেলপার নিহত - দৈনিক কল্যাণ