নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রেমিকা আনোয়ারা বেগম আনুর সাথে শারীরিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখায় অতিষ্ঠ হয়ে জসিম উদ্দিনকে খুন করার পরিকল্পনা করা হয়। ৪০ হাজার টাকা চুক্তিতে আনুর ভাগ্নে ইব্রাহিম খলিল ও তার তিন সহযোগী এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। আর হত্যার দিন মুঠোফোনে ডেকে নেন আনু। জসিম হত্যা মামলার পুলিশি তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে। তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। খুব শিগগিরই মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
২০২৩ সালের ২৬ জুন রাতে যশোর শহরের বকচর সাব্বির ফ্লাওয়ার মিলের সামনে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে জসিম উদ্দিনকে। নিহত জসিম উদ্দিন মণিরামপুর উপজেলার হাকোবা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। জসিম উদ্দিন মণিরামপুর বাজারে ভাই ভাই গোল্ডেন ফিসে ম্যানেজার পদে চাকরি করতেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যশোর শহরের বারান্দীপাড়া এলাকার হাবিবুর রহমান হবির স্ত্রী আনোয়ারা বেগম আনুর সাথে কয়েক বছর ধরে জসিম উদ্দিনের পরোকীয়া সম্পর্ক চলে আসছিল। আর সে কারণে জসিম প্রায়ই যশোরে এসে আনুর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতেন। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হলে আনুর পরিবারে অশান্তি চলতে থাকে। ফলে জসিমকে যশোরে আসা এবং শারীরিক সম্পর্ক থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করেন আনু। কিন্তু নাছোড় বান্দা জসিম এরপরও আনুর বাড়িতে আসা যাওয়া করতে থাকেন। ফলে পরিবারের চাপে অতিষ্ঠ হয়ে জসিমকে ভয়ভীতি দেখানোর জন্য আনুর ভাগ্নে শহরের পূর্ব বারান্দীপাড়ার রফিকুল ইসলামের ছেলে ইব্রাহিম খলিলের সাথে ৪০ হাজার টাকা চুক্তি করা হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ি ইব্রাহিম একই শহরের বেজপাড়া এলাকার রাহাত হোসেন, পোখরাজ আলম ডোবার ও নাসির উদ্দিনকে সাথে নিয়ে আনুর সাথে চুক্তি বাস্তবায়নের চেষ্টা করে। তারই অংশ হিসেবে ২৬ জুন সন্ধ্যা ৬টার দিকে আনু মোবাইল করে ‘ভাজা ছোলা খেতে মন চাচ্ছে’ এমন কথা বলে যশোরে আসতে বলেন জসিমকে। মণিরামপুর এলাকার রিপন নামে সহযোগি এক যুবককে সাথে নিয়ে যশোরে আনুর কাছে আসার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। পথিমধ্যে শহরের সিটি কলেজপাড়া ব্যাপারিপট্টি এসে দেখা করে কিনে নিয়ে আসা ছোলা আনুকে দিয়ে আবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করেন জসিম। কিন্তু তাদের পেতে রাখা ফাঁদে যশোর শহরের বকচর কোল্ড স্টোর মোড়েই অপেক্ষা করছিল সেই চার সন্ত্রাসী। সাথে থাকা রিপন মোটরসাইকেলটি ড্রাইভ করে সেখানে পৌছানো মাত্র থামতে সংকেত দেয়া হয়। গাড়িটি থামানো মাত্র কিছু বুঝে ওঠার আগেই জসিমকে তারা কুপিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। এসময় সাথে থাকা রিপন দৌড়ে পালিয়ে মুড়লী এলাকায় গিয়ে জাতীয় সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন। এরই মধ্যে আশপাশে থাকা লোকজন জসিমকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তৃব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
এই ঘটনায় নিহত জসিমের পিতা আব্দুল কুদ্দুস মোড়ল অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে পরদিন কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শরীফ আল মামুন প্রথমেই এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত জাহিদ হোসেন রাহাতকে ঢাকা থেকে আটক করেন। তার দেয়া স্বীকারোক্তিতে পোখরাজ আলম ডোবার ও নাসিরকে আটক করা হয়। সর্বশেষে যশোর টাউন হল মাঠ থেকে আটক করা হয় আনু ভাগ্নে ইব্রাহিম খলিলকে। খালা আনুর সাথে পরোকীয়ায় প্রতিনিয়ত শারীরিক সম্পর্কে পারিবারিক অশান্তির কারণে ৪০ হাজার টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন ইব্রাহিম খলিল। আর সইে চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ২৬ জুন রাত ৮টার দিকে বকচরে জসিমকে কুপিয়ে হত্যা করে তারা চারজনে।
এদিকে তদন্ত শেষে চার্জশিট দাখিলের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন এসআই শরীফ আল মামুন। তিনি জানিয়েছেন, জসিমকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুইটি বার্মিজ চাকু ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি এই হত্যা মামলায় আটক চারজনের মধ্যে দুই আসামি দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। তবে ঘটনার পর থেকেই অর্থযোগানদাতা আনোয়ারা বেগম আনু এখনও পলাতক রয়েছে। তাকে আটকের জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যরেম চেষ্টা এবং অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তা আরো জানিয়েছেন, পরোকীয়ায় প্রায়ই সময় জসিম শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য যশোরে এসে বিরক্ত করতো। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে আনোয়ারা বেগম আনু এই হত্যাকাণ্ডে অর্থযোগান দিয়ে তার ভাগ্নে ইব্রাহিমের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছে। আটক চার আসামি জেলহাজতে আটক রয়েছে।