নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দেশের প্রথম বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্টের শতভাগ সুবিধা নেয়া যাচ্ছে না। গত চার বছরে কোটি টাকা খরচ করে জৈব সার উৎপাদন হয়েছে মাত্র ১০ লাখ টাকার। অন্যদিকে বায়োগ্যাস ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে নেই কোনো অগ্রগতি। এরই মধ্যে প্ল্যান্টটি পূর্ণাঙ্গরূপে চালু করতে দাতা সংস্থার শর্ত অনুযায়ী তৃতীয় পক্ষকে লিজ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
যশোর পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে যশোর শহরতলীর হামিদপুরে ময়লার ভাগাড়ে নির্মাণ করা হয় দেশের প্রথম বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট। শুধু যশোর পৌরসভা না, ঝিকরগাছা পৌরসভাসহ নিকটবর্তী শহর সংলগ্ন এলাকার বর্জ্যও প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে নেয়ার পরিকল্পনা ছিল পৌরসভার।
এ ছাড়া সেপটিক ট্যাংকের বর্জ্য থেকে পরিবেশবান্ধব জৈব সার ও বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদিত হবার লক্ষ্য ছিল তাদের। যা পাইপলাইনের মাধ্যমে আশপাশের এলাকার বাসাবাড়িতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সরবরাহ করবে বলেও পরিকল্পনা ছিল পৌরসভার। ময়লা রাখার জন্যে ঝুমঝুমপুরে ১৩ দশমিক ২৫ একর আয়তনের ময়লা প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে সেই সব আশা জাগাতে পারেনি।
প্রতিদিন প্রায় ৭০ টন বর্জ্য প্ল্যান্টে আনা হলেও কেবল অব্যবস্থাপনার কারণে মাত্র ১০ শতাংশকে প্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব হচ্ছে। বাকি বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে জড়িতদের দাবি, মাত্র ১৫ জন কর্মী নিয়ে চালানো হচ্ছে প্ল্যান্টটি। এতে প্ল্যান্টের সব সেকশনে একসঙ্গে কাজও করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে গত চার বছরে প্ল্যান্টটি সচল রেখে ব্যয় হয়েছে এক কোটি চার লাখ টাকা। বিপরীতে ১৪৫ মেট্রিক টন সার উৎপাদন করে আয় হয়েছে ১০ লাখ ১৫ হাজার টাকা।
প্ল্যান্টের সুপারভাইজার জিএম ফরহাদ হোসেন বলেন, শহরের নয়টি ওয়ার্ডে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য ১৩০টি কনটেইনার দেয়া আছে। প্রতিদিন সকালে ময়লাভর্তি কনটেইনারগুলো ইয়ার্ডে আনা হয়। এরপর কর্মীরা সেগুলো বাছাই করে কেবল পচনশীল দ্রব্যগুলো সংগ্রহ করেন। ১৫ জন কর্মী দিয়ে ৭-৮ টন ময়লা বাছাই করা সম্ভব হয়। তা দিয়েই কম্পোস্ট সার ও বায়োগ্যাস উৎপাদন করা হয়ে থাকে।
প্ল্যান্টের ম্যানেজার অমিত কুমার বলেন, বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করতে প্ল্যান্টটি নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা প্রতিদিন ৭০ টন ময়লা সংগ্রহ করি। এ ময়লা বাছাই করতে শতাধিক কর্মী দরকার। যেখানে ১৫ জন দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। কম্পোস্ট বিভাগ, বায়োগ্যাস বিভাগে কোনো কর্মী নেই। ময়লা বাছাই করা ১৫ জনকে দিয়েই ওই দুই বিভাগের কাজ করা হয়। ফলে পুরো প্ল্যানটি মাত্র তিন দিন সচল রাখা যায়। বাকি ২৭ দিন কেবল ময়লা বাছাই করতে হয়। অথচ পরিপূর্ণ শ্রমিক পেলে ময়লা বাছাই, কম্পোস্ট সার প্রস্তুতকরণ ও মেশিন পরিচালন এবং বায়োগ্যাস উৎপাদনের কাজ একযোগে করা সম্ভব হতো। এটা সম্ভব হলে দৈনিক ৭-৮ টন সার উৎপাদন করা যেত।
আরও পড়ুন: দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে ধাক্কা, অ্যাম্বুলেন্স চালক নিহত
তিনি বলেন, ‘এখানে উৎপাদিত কম্পোস্ট সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতিমাসে প্রায় ১০০ টন সার এখনই বিক্রি করা সম্ভব। অথচ আমরা মাসে উৎপাদন করছি মাত্র সাত টন।’
যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (পানি ও পয়ঃনিস্কাশন) বিএম কামাল আহমেদ বলেন, প্ল্যান্টটি তৃতীয় পক্ষকে ইজারা দিয়েই পরিচালনার কথা রয়েছে। সেই অনুযায়ী শুরুতে মাহবুব ব্রাদার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেয়া হয়েছিল। কিছুদিন পর প্রতিষ্ঠানটি কেটে পড়ায় বাধ্য হয়ে প্ল্যান্টটি স্বল্প পরিসরে চালু রাখা হয়েছে। বাস্তবে প্ল্যান্টটি চালানোর সক্ষমতা নেই পৌরসভার।
তিনি আরও বলেন, গত চার বছরে প্ল্যান্টটি সচল রেখে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ টাকা। বিপরীতে ১৪৫ মেট্রিক টন সার উৎপাদন করে আয় হয়েছে ১০ লাখ ১৫ হাজার টাকা।
এদিকে যশোর পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত পৌর মেয়র (প্যানেল মেয়র) মোকসিমুল বারী অপু বলেন, ‘প্ল্যান্টটি পরিচালনায় যে পরিমাণ জনবল, গাড়ি ও ময়লা প্রয়োজন, তার কোনোটাই সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। নীতিমালা অনুযায়ী তৃতীয় পক্ষকে ইজারার মাধ্যমে এটি চালু রাখতে হবে। আমরা ভালো কোনো ইজারাদার পাইনি। প্ল্যান্টটি যাতে অকেজো না হয়ে যায়, সে জন্য স্বল্প পরিসরে এটি চালু রাখা হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফ হাসান জানান, ২০১৬ সালের শেষের দিকে প্রকল্পটি হাতে নেয় যশোর পৌরসভা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন এজেন্সি অর্থ সহায়তা দিয়েছে। প্রকল্পটি ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৫০ কোটি টাকা। দাতা সংস্থার শর্ত ছিল তৃতীয় পক্ষকে ইজারা দিয়ে পরিচালনা করা হবে।
আরও পড়ুন: যশোর পৌরসভার যানজট ও শব্দদূষণ বিরোধী অভিযান
১ Comment
Pingback: রং-তুলির আঁচড়ে ফুটে উঠেছে ভাষা সংগ্রামের নানান দৃশ্যপট - দৈনিক কল্যাণ