আবদুল কাদের
যশোর জেলা সঞ্চয় অফিস থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন গ্রাহকরা। চলতি অর্থ বছরের ৮ মাসে সঞ্চয় অফিস থেকে ১২০ কোটি ৯৩ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন গ্রাহকরা। ব্যাংকাররা বলছেন, সঞ্চয় অফিস থেকে উঠানো টাকা আমানত হিসেবে ব্যাংকগুলো পাচ্ছে। তবে তা বেশি পরিমাণে নয়। কারণ অস্বাভাবিক বাজার ব্যবস্থার কারণে মানুষ জমানো টাকা ভেঙ্গে খাচ্ছে। আবার অনেকে জমি কিনে রাখছেন।
যশোর জেলা সঞ্চয় অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে (জুলাই-ফেরুয়ারি) তাদের আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্র ছিল ২৮৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এসময় বিভিন্ন সঞ্চয়পত্রে গ্রাহকরা বিনিয়োগ করেছেন ৭০ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এই ৮ মাসে গ্রাহকরা ১২০ কোটি ৯৩ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। অনেকে পূর্ণ মেয়াদ না হওয়ার আগেই তুলে নিচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি উত্তোলন হয়েছে পরিবার সঞ্চয়পত্র থেকে ৫৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। ৩ মাস সঞ্চয়পত্র ভেঙ্গে টাকা উত্তোলন হয়েছে ৩৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, পেনশনার সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ কোটি ৯ লাখ টাকা এবং ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র থেকে গ্রাহকরা তুলে নিয়েছেন ৯ কোটি ৭ লাখ টাকা।
যশোর জেলা সঞ্চয় অফিসের সহকারী পরিচালক মো. আলাউদ্দিন জানান, গত কয়েক মাস ধরে গ্রাহকরা মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই সঞ্চয়পত্র ভেঙ্গে টাকা উত্তোলন করছেন। গ্রাহকরা উত্তোলনের সময় বলছেন, আয়ের চেয়ে খরচ বেড়েছে, যেকারণে টাকা তুলছেন। আবার অনেকে জমি কিনছেন।
জানা গেছে, নতুনভাবে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কম হচ্ছে। কারণ নানা শর্ত আর আয়কর দাখিল করতে হচ্ছে গ্রাহকদের। আবার অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম হওয়ায় অনেকে এখাতে নতুনভাবে বিনিয়োগ না করে ব্যাংকে চলে যাচ্ছেন। এতে করে ব্যাংকগুলোও নতুন আমানত পাচ্ছেন।
আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকের খুলনা-বরিশাল জোন প্রধান আবু সাঈদ মো. আবদুল মান্নাফ জানান, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে নানা শর্তযুক্ত করেছে সরকার। যে কারণে ঝামেলা এড়াতে অনেকে ব্যাংকে আমানত রাখছেন। এজন্য আমাদের ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে আমানতের হার বেড়েছে। তবে সব টাকা ব্যাংকে আসছে না। অনেকে জমি কিনছেন, অথবা অন্যান্যভাবে খরচ করে ফেলছেন।
ঢাকা ব্যাংক যশোর শাখার ব্যবস্থাপক হুমায়ন কবীর জানান, বেসরকারি ব্যাংকে এখন আমানতে মুনাফার হার বেড়েছে। এতে করে অনেকে টাকা রাখতে আসছেন। সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক যশোর শাখার ব্যবস্থাপক আনিছুর রহমান বলেন, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে বিভিন্ন শর্তের কারণে গ্রাহকদের একটি অংশ ব্যাংকমুখি হচ্ছেন। অনেক ব্যাংক মুনাফার হারও বাড়িয়েছে। ফলে সব ব্যাংকে কিছুটা আমানত সংগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক খুলনাজোনের সাবেক প্রধান ফকির আক্তারুল আলম বলেন, সব ধরণের জিনিসের দাম বেড়েছে। বাজার অস্বাভাবিক। যেকারণে মানুষের খরচ বেড়েছে। অনেকে সঞ্চয়পত্র ভেঙ্গে খাচ্ছেন। আবার অনেকে আয়কর ঝামেলায় না যাওয়ার কারণে ব্যাংকে আমানত রাখছেন।
রূপালি ব্যাংক যশোরের সহকারী উপমহাব্যবস্থাপক শহিদুল ইসলাম জানান, গত ৩-৪ মাস ধরে আমাদের আমানত বেড়েছে। অনেকে টাকা তুলে নিয়ে বাড়িতে রেখেছিল। তারা ব্যাংকে আবারও ফিরে আসছেন। সঞ্চয়পত্র ভেঙ্গেও ব্যাংকে রাখছেন গ্রাহকরা। এর কারণ হলো ব্যাংকগুলো তাদের আমানতের বিপরীতে মুনাফার হার বাড়িয়েছে। যেকারণে গ্রাহকরাও তাদের টাকা রাখতে ব্যাংকগুলোতে আসছেন।
২ Comments
Pingback: মীমাংসায় গেলেন ইউপি সদস্য, কুপিয়ে মারল প্রতিপক্ষরা
Pingback: সাংবাদিকদের ওপর হামলায় ডিএমপি কমিশনারের দুঃখ প্রকাশ