একদিনে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ৬ জনের মৃত্যু
পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৪১ শতাংশ ছুঁই ছুঁই
সুনীল ঘোষ: করোনার হট স্পট হয়ে উঠছে যশোর। প্রতিদিনই মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। দিনমজুর থেকে শুরু করে বাদ পড়ছেন না কেউ। প্রশাসনেও করোনার থাবা পড়েছে। সব শ্রেনি পেশার মানুষই বৈশ্বিক মহামারি করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় যশোরে শনাক্তের হার ৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যাও বেড়েছে। ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগেই সতর্ক করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. ইকবাল জাহিদ মনে করেন যশোরে সংক্রমণ চূড়ায় উঠেছে। ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি বেশ কিছু পরামর্শও দিয়েছেন।
যশোরসহ দেশের ১০ জেলাকে সংক্রমণে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করা হয় ১৯ জানুয়ারি। ১১ দফা বিধিনিষেধ জারী ও বাস্তবায়নে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছিল কিন্তু দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। যার প্রভাব শুরু হয়ে গেছে।
যশোর জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘন্টায় যশোরে করোনাভাইরাসে দু’জন ও উপসর্গ নিয়ে আরও ৪ জনসহ মোট ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১৯ জনে। উপসেবা তত্ত্বাবধায়ক ফেরদৌসী বেগম সূত্রের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ৩২১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৩০ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। এ হিসেবে শনাক্তের হার ৪০.৪৯ শতাংশ ছুঁয়েছে। তনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত (১ ফেব্রুয়ারি) হাসপাতালের রেড জোনে ১২ ও ইয়েলো জোনে ২০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।
যশোর সিভিল সার্জন বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তের হার বাড়তে শুরু করে জানুয়ারি মাসের শুরু থেকেই। গত একদিনে ১৩০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে পিসিআর টেস্টে ৮৫ ও র্যাপিড এ্যান্টিজেন টেস্টে ৪৫ জন। তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত যশোর জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা রয়েছে ১৫৩৮ জন। তিনি করোনাভাইরাসে ও উপসর্গে ৬ জনের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেন বলেন যশোরে ৫১৯ জনের প্রাণ নিয়েছে বৈশি^ক মহামারি করোনাভাইরাস।
তিনি বলেন, মানুষ সচেতন না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ উঠতে পারে। তিনি সব শ্রেণি পেশার মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার যশোর শহর ও বাস টার্মিনালসহ জনবহুল এলাকা ঘুরে দেখা যায় ভয়াবহ চিত্র। সকালে বড় বাজারে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ক্রেতার বিপুল সমাগম। কোনো প্রতিষ্ঠানেই স্যানিটাইজের ব্যবস্থা দেখা যায়নি। সামাজিক দূরত্ব মেনে মেনে বেচাবিক্রি করছেন না কোনো দোকানিই। ক্রেতার উপচেপড়া ভিড় দেখে মনে হয়নি করোনা প্রতিরোধে তারা সচেতন।
বেলা সাড়ে ৯টার দিকে স্টেশন বাজারে দেখা যায়, সবজি ও মাছের বাজারে নারী-পুরুষসহ নানা বয়সের মানুষ ঠেলাঠেলি করে কেনাবেচা করছেন। এ সময় কাউকেই জনসচেতনতায় কাজ করতে দেখা যায়নি।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিউমার্কেট খাজুরা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি যাত্রীবাহি বাসে ঠাসা ভীড়। অর্ধেক যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে না কোন বাস। ইজিবাইক ও রিকশাতেও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। অতিরিক্ত যাত্রী উঠয় বাধা দেয়ার পরিবর্তে টেনে-হেঁচড়ে তুলতে দেখা যায়।
শংকরপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের চিত্র আরও ভয়াবহ। দূরপাল্লার যানবাহনেও সিটের বিপরীতে অধিক যাত্রী দেখা গেছে। অনেকে সিট না পেয়ে দাঁড়িয়েই গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। সামাজিক দূরত্ব দূরে থাক, অনেকে মাস্ক পর্যন্ত পড়ছেন না। দু’একজনের থুতনিতে মাস্ক ঝুলতে দেখা যায়।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. ইকবাল জাহিদ দৈনিক কল্যাণকে বলেন, যশোরে করোনার পিক চলছে। যারা টিকা নিয়েছেন তারা আক্রান্ত হলেও থাকছে না উপসর্গ। অন্যদিকে যত নমুনা আসছে তত পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি মনে করেন, দ্রুতই মসজিদ-মন্দিরসহ উপসনালয়গুলো থেকে করোনা সচেতনতায় নিয়মিত প্রচারণা চালানো উচিত। একই সাথে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় থেকে গণহারে মাস্ক বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা উচিত। জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হলে যশোরে ভয়াবহরুপ নিতে পারে করোনা। সেই পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে বলেও মন্তব্য করেন এই অনুজীব বিজ্ঞানী।