অমিতেই আস্থা
গণতান্ত্রিক পন্থায় নেতৃত্ব নির্বাচন
আবদুল কাদের: বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম ছিলেন যশোর জেলা বিএনপির অভিভাবক। দলে ছিল তার একক আধিপত্য। তার নেতৃত্ব জেলা কমিটির সব পর্যায়ের নেতারা মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু পরিবার ও আত্নীয়দের নিয়ে দলে একটি পক্ষ ছিল বিরোধী। তবে সরাসরি তারা মুখ খুলতেন না। তরিকুল ইসলাম মারা যাবার পর বিরোধী পক্ষ সক্রিয় হয়ে উঠে। জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন নিয়েও তারা ছিল সরব। তবে বর্তমানে সেই অবস্থা নেই। সব পক্ষের নেতা এখন এক কাতারে বলে দাবি করছেন জেলা বিএনপির নেতারা।
দলের মধ্যে বিভেদ মিটিয়ে এক কাতারে আনার ‘একক কৃতিত্ব’ দলের খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক প্রয়াত তরিকুল ইসলামের কনিষ্ট পুত্র অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের -এমনটি দাবি করছেন জেলা বিএনপির নেতারা। তারা বলছেন, অমিতের দক্ষ নেতৃত্ব, ভদ্রতা আর মানবিক গুণাবলী তাকে নেতাকর্মীদের মনের সর্বোচ্চ আসনে বসিয়েছে। একই সাথে তিনি চালু করেছেন ভোটের মাধ্যমে তৃণমূলে নেতা নির্বাচনের। ইতোমধ্যে জেলা বিএনপির ৮টি উপজেলা ও ৮টি পৌরসভার আহবায়ক কমিটি গঠন হয়েছে। চৌগাছা বিএনপির সম্মেলন হবে আগামী ২৪ মার্চ। নগর বিএনপির ২ নম্বর ওয়ার্ড শাখার ভোট ১৬ মার্চ। কোতোয়ালি থানা বিএনপির কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে।
দলের একাধিক নেতার সাথে আলাপচারিতায় জানা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মফিজুর রহমান তৃপ্তি, টিএস আইয়ুব, আবুল হোসেন আজাদ, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাবেরুল হক সাবু, নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কমিটির আহবায়ক মারুফুল ইসলাম মারুফ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, জেলা যুবদলের সভাপতি তমাল আহমেদসহ ছাত্রদলের একাংশ তরিকুল ইসলাম পরিবার বিরোধী হিসেবে দলে পরিচিত ছিল। ২০১৮ সালে ৮ মার্চ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন নিয়েও এসব নেতা ছিল তাদের পক্ষে সরব। কিন্তু বর্তমান সময়ে সেই চিত্র বদলে গেছে।
দলের কেন্দ্রীয় পদ পেয়ে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত জেলা বিএনপির বিবদমান দু’গ্রুপের দ্বন্দ্ব নিরসনের উদ্যোগ নেন। এরপর তার যোগ্য নেতৃত্ব আর দূরদর্শিতার কারণে শেষ পর্যন্ত সফলও হয়েছেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের রাজনীতিতে হাতেখড়ি মেধাবী ছাত্র অমিত বর্তমান সরকারের আমলে আসামি হওয়া সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন। তিনি নিজেও ৬০টি মামলার আসামি। দলে করোনাযোদ্ধা হিসেবেও রয়েছে তার পরিচিতি। দলের যারাই করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদেরকে সঠিক তদারকি ও খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। প্রতিটি নেতাকর্মীদের সাথে রেখেছেন সুসম্পর্ক। যেকারণে তার পরিবারের বিরোধী পক্ষ নমনীয় হয়েছে। অনেকে বলছেন, অমিতের সাথে দলের বিরোধী পক্ষের সাথে সুসম্পর্ক গড়তে সহযোগিতা করেছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন ও সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান।
যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাবেরুল হক সাবু জানান, বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী এক কাতারে মিলিত হয়েছি। আমাদের একটাই লক্ষ্য বর্তমান সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। আর অনিন্দ্য ইসলাম অমিত তার যোগ্যতায় দলে স্থান করে নিয়েছেন। তিনি প্রবীণ-নবীন রাজনীতিকদের একসাথে নিয়ে পথ চলছেন। অমিতের সিনিয়রদের সম্মানবোধ প্রশংসনীয়।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন জানান, ২০১৬ সালে কাউন্সিলের মাধ্যমে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। তখন থেকে তিনি জেলা বিএনপি মধ্যে সব ধরণের দূরত্ব কমিয়ে আনার চেষ্টা চালান। মেধা দিয়ে দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন।
জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান বলেন, জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন নিয়ে দলে মতপার্থক্য দেখা দেয়। এরপর অনিন্দ্য ইসলাম অমিত তার দূরদর্শিতা আর মেধা দিয়ে বিরোধী পক্ষকে এক কাতারে নিয়ে এসেছেন। দলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করা হচ্ছে। এখন আমাদের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই। সবাই এক সাথে মিলে দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন গড়ে তুলতে চাই। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান অমিতের উপর সবাই আস্থা রাখছেন। তার মা জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমও সবাইকে নিয়ে চলতে শিখিয়েছেন অমিতকে। এক কথায় তরিকুল ইসলামের অভাব পূরণ করছেন তারই যোগ্য পুত্র অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
সংগঠনকে শক্তিশালী করতে ও তৎপর করতে অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠন করছে দলটি। ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশ কমিটি গঠনের কাজ সম্পাদন হয়েছে। বাকি কাজ সম্পন্নের জন্য সাংগঠনিক তৎপরতা চলছে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন বৈরি পরিবেশের কারণে দৃশ্যমান কর্মসূচি থেকে দূরে থাকলেও প্রধান দাবি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন আদায়ে কোনো ছাড় দিতে রাজি নয় বিএনপি। এবার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আন্দোলন সফলের উপযোগী সংগঠন গড়তে কার্যক্রম শুরু করেছে। মাঠ পর্যায়ে প্রতিদিনই কর্মসূচি যেমন চলছে তেমনি মূল দলের পাশাপাশি অঙ্গ সংগঠনের কমিটি গঠনের কাজও এগিয়ে চলেছে।
যশোরের ১০৫টি ইউনিয়নে বিএনপির সাংগঠনিক ইউনিট রয়েছে। সবগুলো কমিটি এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে পুনর্গঠনের কাজ চলছে। অন্যদিকে অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে যুবদল, ছাত্রদল, কৃষক দলকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা দল, শ্রমিক দল, মহিলা দল, মৎস্যজীবী দল, ওলামা দল ও তাঁতী দলের পুনর্গঠন কাজও শিগগিরই শুরু করা হবে বলে জানা গেছে।
যশোর নগর বিএনপির আহবায়ক সাবেক পৌর মেয়র মারুফুল ইসলাম জানান, আমরা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে পুনর্গঠন কাজ শুরু করেছি। বর্তমান সরকারের আমলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা হামলা মামলায় জর্জরিত। তাই সংগঠনকে শক্তিশালী করে সরকার বিরোধী আন্দোলন বেগবান গড়ে তোলার উপযোগী করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে দলে আমাদের মধ্যে কোন বিভেদ নেই। সবার একটাই লক্ষ্য বর্তমান সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশে নিরেপেক্ষ নির্বাচন আদায় করা। আমরা সবাই মিলে একসাথে এই আন্দোলন গড়ে তুলবো।
এব্যাপারে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত জানান, আমাদের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। একটি বড় রাজনৈতিক দলে মতবিরোধ থাকতে পারে। তবে আমরা এক পরিবার। দেশ ও জনগণের স্বার্থে এক সাথে কাজ করছি। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সরকার পতন আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। আমাকে যখন দলের খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয় তখন দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এবং তার পুত্র দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছিলেন প্রবীণ ও নবীনের সমন্বয়ে দল চালাতে। যশোর বিএনপিতে প্রবীণ ও নবীন এক কাতারে। আমি চেষ্টা করছি সবাই যেন রাজনীতি করার অনুকূল পরিবেশ পায়। আমাদের দলে রাজনৈতিক শিষ্টাচার রয়েছে; যা অন্য দলে দেখা যায়না। যারা আমার বাবার সাথে রাজনীতি করেছেন তাদেরকে যথাযথ মর্যাদা দেবার চেষ্টা সব সময় কাজ করে। আবার যারা নতুন দলে এসেছেন তারাও যেন মেধা অনুযায়ী রাজনীতি করার সুযোগ পান সেটিও করা হচ্ছে।