কল্যাণ ডেস্ক
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের পর ক্যাম্পাসে অনুমতি ছাড়া সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
এর আগে শুক্রবার রাত নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফটকের সামনে চায়ের দোকানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কথা কাটাকাটির জের ধরে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এতে প্রক্টর ও শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৮জন আহত হন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থী সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাত নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ফটকের সামনে একটি চায়ের দোকানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সাদেকা শাহানী উর্মির সঙ্গে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী স্বপনের ধাক্কা লাগে। স্বপন এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশও করেন। এরপর তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে প্রধান ফটকের সামনে সাদেকার বন্ধুরা সিএসই বিভাগ নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন। তখন কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীরা সাদেকার বন্ধু ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিব আহমেদ শানকে ডেকে নেন। এটা দেখে সাদেকা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মীদের ফোনে জড়ো করেন। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
উভয় পক্ষকে নিবৃত্ত করতে সেখানে হাজির হন প্রক্টর আমজাদ হোসেন। উভয় পক্ষের ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে প্রক্টর আমজাদ হোসেন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে দ্রুত শহরে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়া সংঘর্ষে আহত উভয় পক্ষের আটজনের মধ্যে চারজনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় ডিন’স কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. জাফিরুল ইসলামকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আগামী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে সভা, সমাবেশ, মানববন্ধন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
শনিবার বিকেলে প্রেসক্লাব যশোর মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে সাদেকা শাহানী ঊর্মি বলেন, অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গালিবকে বহিষ্কারের সূত্র ধরে ক্যাম্পাসে মারামারি হয়েছে। ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা ধারণা করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে অধ্যাপক ড. গালিবকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এজন্য তারা আমাদের টার্গেট করে হামলা করার চেষ্টা করছে। শুক্রবার প্রতিরোধ করায় অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা এক হয়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। ফ্যাসিস্টের দোসররা ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে ক্যাম্পাসে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি ও আমার ব্যাচমেট হাবিবসহ কয়েকজন চায়ের দোকানে বসে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলাম। তখন সিএসই বিভাগের স্বপনের সঙ্গে আমার ধাক্কা লাগে। আমি বিরক্ত হলে স্বপন ও তার এক বন্ধু সরি বলে। এরপর ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে কম্পিউটার বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী হাবিবকে ডাকে। এটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে আমি হলে চলে যাই। আমাকে ফোন করে বলা হয়, প্রক্টর অফিসে স্যার ডাকছেন। আমি প্রক্টর অফিসে যাই। সেখানে যাওয়ার পর দেখি বাইরে শিক্ষার্থীদের চিৎকার চলছে। আমার সহপাঠীরা বেরিয়ে এলে তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তি ও সংঘর্ষ হয়।
অপরদিকে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম এস লিমন বলেন, ঊর্মি আপুর সঙ্গে ঘটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য সরি বলায় ওখানেই মিটে গেছে। কিন্তু পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের কাছে হাবিব আহমেদ শান ভাই কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গালিগালাজ করেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলে বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি ও সংঘর্ষ বেধে যায়।
তিনি আরও বলেন, অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গালিব স্যারের বহিষ্কারের বিষয়টি প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এজন্য বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা শুক্রবার দুপুরে প্রতিবাদ করেছি। আমরা বলেছি, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও তদন্তের ভিত্তিতে দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আমরা ড. গালিব স্যারের বহিষ্কারের প্রতিবাদ করায় আমাদের ওপর তারা ক্ষুব্ধ ছিল। স্বৈরাচারের দোসরের সঙ্গে আমাদের আপস নেই। আমরাও স্বৈরাচারের দোসরের বিচার চাই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, শুক্রবার যবিপ্রবি ক্যাম্পাসে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এমন পিকেটিংয়ের ঘটনা ঘটেনি। শিক্ষার্থীদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল। এ ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের সংঘর্ষ নয়। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের কোনো কমিটি নেই। সাংগঠনিক কাঠামো নেই। তবে সংঘর্ষের ঘটনায় দুই একজন কর্মী ছিল। আমাদের সবাইকে সতর্ক হতে হবে স্বৈরাচারের ইস্যুতে কোনো আপস নেই। সংঘর্ষের ঘটনায় কারা ইন্ধন দিয়েছে তদন্ত হওয়া উচিত।
কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আহ্বানে পুলিশ রাতে ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করে। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি, কাউকে আটক করা হয়নি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আমজাদ হোসেন জানান, আমার ধারণা, এই সংঘর্ষের নেপথ্যে ডক্টর গালিবের সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি থাকতে পারে। তা না হলে শুধুমাত্র চায়ের দোকানে দুই শিক্ষার্থীর কথা কাটাকাটির ঘটনায় ক্যাম্পাসে এত বড় সংঘর্ষ ঘটার কথা না। রাতেই সকল সহকারী প্রক্টর একসঙ্গে হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মিছিল- মিটিং, মানববন্ধন- সমাবেশ করা যাবে না। করলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যবিপ্রবি ভিসি অধ্যাপক ড. আবদুল মজিদ বলেন, এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের নবনির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর