বিভিন্ন সড়কে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে সোলার স্ট্রিট লাইট
রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখভাল করেনি যশোর পৌর কর্তৃপক্ষ
সৌরবাতি সরকারের লস প্রজেক্ট বলছেন সংশ্লিষ্টরা
শাহারুল ইসলাম ফারদিন
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে যশোর পৌর এলাকার বিভিন্ন সড়কে স্থাপন করা হয়েছিল সোলার স্ট্রিট লাইট বা সৌরবাতি। প্রায় ত্রিশ লাখ টাকার খরচ করে পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছিল বাতিগুলো। কিন্তু স্থাপনের মাত্র সাড়ে ৬ বছরেই সেইসব সৌরবাতি এখন অকেজো। যশোর পৌরবাসীর অভিযোগ, উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখভালের অভাবে এসব লাইট নষ্ট হয়ে গেছে। এতে করে অন্ধকারে হারিয়ে গেছে ‘আলোর প্রকল্প’।
পৌরবাসীর দাবি, দ্রুত ওইসব স্থানে নতুন করে আবারো টেকসইভাবে বাতি স্থাপন করা হোক। পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, সৌরবাতি সরকারের একটি লস প্রজেক্ট ছিলো। বর্তমানে পৌর কর্তৃপক্ষ ওই সকল স্থানের কিছু কিছু স্থানে আঁধার ঘোচাতে অধিক আলোদায়ী সোলার স্ট্রিট লাইটের বদলে এলইডি স্ট্রিট লাইট স্থাপন করা হয়েছে।
পৌরসভার প্রকৌশলী বিভাগের ইলিয়াস মিয়া জানান, ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ২৯ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘সোলার স্ট্রিট লাইট’ স্থাপন করে যশোর পৌরসভা। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে প্রথম পর্যায়ে পৌর এলাকায় ‘সোলার স্ট্রিট লাইট’ লাগানোর কার্যক্রম শুরু হয়। সেসময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষাণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় ১০ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৪টি সোলার স্ট্রিট লাইট লাগানো হয়। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে দ্বিতীয় পর্যায়ে ১১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১৪টি সোলার স্ট্রিট লাইট লাগানো হয় ও ২০১৯-২০ অর্থ বছরে তৃতীয় পর্যায়ে ৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১০টি সোলার স্ট্রিট লাইট লাগানো হয়। এ লাইটগুলো সৃজনী বাংলাদেশ নামে একটি এনজিও স্থাপন করে। ২০২০ সালের ৩০ জুনের মধ্যে সৌর বাতিগুলো স্থাপন করা হয়। এরপর তিন বছর নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের মেরামতের দায়িত্ব ছিল। তারপর থেকে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল পৌর কর্তৃপক্ষ।
শহরের আরএনরোড নতুনবাজার এলাকার বাসিন্দা সজিব আহমেদ বলেন, সৌরবাতিগুলো স্থাপনের পাঁচ থেকে ছয় মাস পর থেকেই নষ্ট হতে থাকে। সৌরবাতি ঠিকমতো জ্বলছে কি না, মাঝে মাঝে তা পরীক্ষা করার কথা থাকলেও স্থাপনের পর কাউকে আমরা বাতিগুলো মেরামত করতে দেখিনি। আমার বাড়ির গেটের সামনেই একটি সৌরবাতি প্রায় দুই/তিন বছর ধরে অকেজো হয়ে আছে। পৌরসভার থেকে কেউ এখনও খোঁজ নিতে আসেনি। ওইসব স্থানে আলো না থাকায় বেড়েছে চুরি-ছিনতাইর মত ঘটনাও।
শহরের শহিদ সড়ক রোডের মাহবুবুর রহমান বলেন, শহরের প্রাণ কেন্দ্র দড়াটানা মোড় এলাকায় বিদ্যুৎ চলে গেলে ঘুটঘুটে অন্ধকার থাকে। সৌরবাতির খুঁটি থাকলেও তা জলে না। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে শহরের বিভিন্ন স্থানে সৌরবাতিগুলো বসানো হলো। এখন একটিও জ¦লে না। তাহলে তো কোন লাভ হলো না। রাতে ওই সকল অন্ধকার স্থানে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে। বর্তমান সময়ে বিদ্যুৎ গেলে আতংকে থাকতে হয়।
পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) সাইফুজ্জামান তুহিন বলেন, ঝড়, বৃষ্টি ও বজ্রপাতের কারণে সোলার স্ট্রিট লাইট নষ্ট হয়ে গেছে। আবার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেক লাইট কার্যকারিতা হারিয়েছে। তিনি বলেন, এ সমস্যা সমাধানের জন্য নতুন করে ওইসব স্থানে এলিডি লাইট স্থাপন করা হচ্ছে।
নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সমন্বয়ক শেখ মাসুদুর রহমান মিঠু বলেন, ৩০ লক্ষ টাকা খরচ করে পৌরবাসীর সুবিধার জন্য সৌরবাতিগুলো বসানো হয়েছিল। অথচ এই বাতিগুলো কয়েক বছরের মধ্যেই পুরো অকেজো হয়ে গেল। এখন বাতিগুলো দেখভাল করারও কেউ নেই। নতুন প্রকল্প হলে যতটা আগ্রহ দেখায় পৌর কর্তৃপক্ষ; নষ্ট হলে তার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে। যেহেতু এই প্রকল্পটি জনগণের কোন কাজে আসছে না। তাই আমরা পরিস্কারভাবে বলতে পারি, এই সৌরবাতি প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যেই ছিল লুটপাট করা। তাই করা হয়েছে।
জানতে চাইলে যশোর পৌরসভার মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা হায়দার গনি খান পলাশ বলেন, শহরের সৌরবাতি স্থাপনের কাজ আগের মেয়রের আমলে হয়েছিল। মেয়াদ শেষ হওয়ায় তা নষ্ট হয়ে গেছে। আমি মেরামতের বাজেটের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছিলাম। এখনো কোন সাড়া মিলেনি। অনেক সময় ওই সকল অন্ধকার স্থানে চুরি ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি ওই সকল স্থানে অন্ধকার দূর করতে ‘স্ট্রিট এলিডি লাইট’ স্থাপন করার জন্য।