সাজেদ রহমান: মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে যশোরের সব আন্দোলন সংগ্রামে তিনি ছিলেন অগ্রভাবে। পাকিস্তান বাহিনীর ছিলেন আতঙ্ক।
তাই যুদ্ধের শুরুতে তাঁকে জীবিত অথবা মৃত ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করে পাকিস্তান সরকার। এ জন্য যশোর শহরে তাঁর নামে মাইকিং করা হয়।
তিনি হলেন অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন। ছিলেন গণপরিষদের সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের অপরিহার্য একজন নেতা।
তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক এবং সাধারণ মানুষের সবচেয়ে প্রিয়। অথচ যশোরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এখন তাঁর নাম উচ্চারিত হয় না।
আমৃত্যু মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। দেশ স্বাধীনের পর নিজের জীবন দিয়ে তিনি তা প্রমান করে গেছেন।
মোশাররফ হোসেনের জন্ম অবিভক্ত বাংলার ব্রিটিশ ভারতের চব্বিশ পরগনারর বনগাঁ মহকুমার সভাইপুর গ্রামে ১৯২৫ সালের ৭ মার্চ। ভাই-বোনদের ভেতর ষষ্ঠ মোশাররফের বেড়ে ওঠা সেখানেই।
বনগাঁতে প্রথম স্কুলে ভর্তি হওয়া। সেখান থেকে পরে যশোর জেলা স্কুলে আসা। তারপরের পড়াশোনা যশোর মাইকেল মধুসূদন দত্ত কলেজে (এমএম কলেজ)।
স্নাতক সম্পন্নের পর তিনি ভর্তি হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রিপন কলেজে (সুরেন্দ্রনাথ আইন মহাবিদ্যালয়)।
সেখানে আইন অধ্যায়নকালেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন; অবশ্য সেটাই প্রথম নয়। স্কুল জীবনেই ব্রিটিশ বিরোধী মিছিলে তাঁর অভিষেক হয়েছিল।
১৯৪৬ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হলে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সমমনাদের সাথে তিনি দাঙ্গার বিরুদ্ধে অবস্থা নেন। ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ হয়। ভাগ হয় বাংলাও।
যশোরের ৫টি মহাকুমার মধ্যে বনগাঁ চলে যায় চব্বিশ পরগনার মধ্যেম যা ভারতের অংশে পড়ে। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া পারিবারিক ভূ-সম্পত্তিও ভাগ হয়ে যায় ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের সীমানার মধ্যে।
মোশাররফ হোসেনের বড় ভাই হাবিবুর রহমান তখন পূর্ব পাকিস্তানে। তিনি যশোরের প্রতিষ্ঠিত আইনজীবীদের একজন।
মোশাররফ হোসেন থিতু হওয়ার কথা ভাবলেন বানগাঁতে। আইনজীবী হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু হলো সেখানেই।
বনগাঁয় মোশাররফ হোসেন কংগ্রেসের রাজনীতিতে জড়িত হন; প্রার্থী হন নির্বাচনেও। মোশাররফ হোসেন ভারতে থাকাকালীন ১৯৫২ সালে অনুষ্ঠিত হয় সাধারণ নির্বাচন।
]সেখানে বনগাঁ থেকে কংগ্রেসের হয়ে তাঁর মনোনয়ন পাওয়ার কথা। কিন্তু কংগ্রেসের মনোনয়ন দেয়া হয় জীবন রতন ধরকে। জীবন রতন ধর যশোরে কংগ্রেসের নেতা ছিলেন।
তিনি ১৯৫০ সালে পাকিস্তান (যশোর) ছেড়ে ভারতের বনগাঁতে যান এবং সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হন। কংগ্রেসের রাজনীতিতে থেকেও তাঁকে শেষ পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হয়।
অভিযোগ ছিল ১৯৫২ সালের ওই নির্বাচনে সহিংসতার জেরে ভোট গণনা স্থগিত থাকে মুসলিম অধ্যুষিত অনেক ভোটকেন্দ্রে। ব্যালট ছিনতাই করে জীবন রতন ধরের সমর্থকরা। ৪০ শতাংশেরও কম ভোটার-উপস্থিতির বানগাঁ আসনের সে নির্বাচনে জয়ী হন জীবন রতন ধর।
নির্বাচনের পর ক্রমেই মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে কংগ্রেসের দূরত্ব বাড়তে থাকে। ভারতে সব মিলিয়ে পরিস্থিতি খারাপ হতে হতে যখন তাঁর প্রাণনাশের আশঙ্কা প্রবল হয়ে ওঠে, তখন তিনি চলে আসেন পাকিস্তানের অংশে যশোরে ১৯৫২ সালের শেষ দিকে। তবে ১৯৫৪ সালে চূড়ান্তভাবে যশোরে থিতু হন মোশাররফ হোসেন।
ভাই হাবিবুর রহমানের মতো মোশাররফ হোসেনও যশোর বারে যোগ দেন, হন আওয়ামী লীগেরও সদস্য। সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে ১৯৬৬ সালে তিনি যশোর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তবে এর আগেই বেসিক ডেমোক্র্যাসির অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি যশোর ইউনিয়ন কমিটির (পৌরসভার) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন (বিডি চেয়ারম্যান) ১৯৬৪ সালে।
১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উত্থাপন করেন বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা। ছয় দফার বিরোধিতায় আওয়ামী লীগের ভেতর থেকেই একটি অংশ বিরোধিতা শুরু করেন।
যশোর আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট মশিয়ুর রহমান ও অ্যাডভোকেট রওশন আলীর মত নেতারা পিডিএমে যোগ দিলে শোচনীয় হয়ে পড়ে যশোর আওয়ামী লীগের অবস্থা। তখন দৃঢ় হাতে দলের হাল ধরেন মোশাররফ হোসেন।
এরপর আগরতলা মামলায় শেখ মুজিবুর রহমানকে অভিযুক্ত করা হলে সারা দেশের মতো যশোর অঞ্চলেও প্রবল গণআন্দোলনের সূচনা হয়। যশোর অঞ্চলে যার নেতৃত্ব দেন মোশাররফ হোসেন।
১৯৭০ সালে যশোর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত করা হয় তাঁকে। একই সাথে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সদস্যপদ পান তিনি। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে যশোর সদর আসন থেকে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন মোশাররফ হোসেন।
অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও তাঁর ধারণা ছিল দেশকে স্বাধীন করতে হলে প্রয়োজন সশস্ত্র লড়াইয়ের। তাই আগে ভাগে উপলব্ধি করেছিলেন দেশের পরিস্থিতি কোনদিকে মোড় নিচ্ছে। এই কারণে নিজের দলের মধ্যে একটি সচেতন বিপ্লবী গ্রুপ তৈরি করেছিলেন।
১৯৭১ সালের ৩রা মার্চের মিছিলে প্রথমে ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে পাকিস্তানিরা। প্রথমে ছত্রভঙ্গ হলেও মৃত্যুর ভয় উপেক্ষা করে মিছিল চলতে থাকে। মিছিলের একটা অংশ টেলিফোন এক্সচেঞ্জের কাছে পৌঁছালে আবার গুলি শুরু হয়। তখন উপায়ন্তর না দেখে আরও সামনে যাওয়ার জন্য মোশাররফ হোসেন সবাইকে অনুরোধ করেন। মিছিলের অনেকে তখন সমাবেত হন তাঁর বাড়ির আঙিনায়। মোশাররফের গুরুদাস বাবু লেনের দোতলা বাসার এক পাশের খোলা ছাদে অবিরাম গুলি করতে থাকে টেলিফোন এক্সচেঞ্জের ছাদে অবস্থান নেয়া পাকিস্তানিরা। সেই গোলাগুলির এক পর্যায়ে প্রাণ হারান চারুবালা কর। চারুবালা করের মৃত্যুতে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে যশোর। হত্যার প্রতিবাদে আবারও মিছিলে-শ্লোগানে মুখরিত হয় যশোর।
স্বাধীনতার এক দফা দাবি বাস্তবায়ন ততদিনে অনিবার্য হয়ে উঠেছে। অসহযোগ আন্দোলনে বেকায়দায় পড়া যশোর সেনানিবাসের রসদ সরবরাহের নিশ্চয়তার অনুরোধ ছিল যশোর সেনানিবাসের। পাকিস্তানি কর্নেল তোফায়েল ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ সকালে চা-চক্রের অনুরোধ করে যশোর আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে, যাতে করে খাদ্য-পানীয়ের সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়।
যশোর সেনানিবাসে থাকা বাঙালি সদস্যদের কথা মাথায় রেখে সকালের চা-চক্রে যেতে সম্মত হন নেতারা। সেনা কর্মকর্তারা দেখেন যে আওয়ামী লীগ নেতাদের বহনকারী গাড়িতে লাগান বাংলাদেশের পতাকা! সে মিটিং থেকে ফেরার সময় দেখা গেল গাড়িতে লাগান বাংলাদেশের পতাকা খুলে ফেলেছে পাকিস্তানিরা। আরও বড় বিস্ময়ের মুখোমুখি হতে হয় পাকিস্তানি কর্নেল তোফায়েলকে। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের পতাকা ছাড়া সেখান থেকে ফেরত যেতে অস্বীকৃতি জানায়। মোশাররফ হোসেনসহ উপস্থিত অন্য নেতাদের দৃঢ়তায় পাকিস্তানি কর্নেল তোফায়েল গাড়ি থেকে খুলে নেয়া বাংলাদেশের পতাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়।
ঘটনা সেখানেই শেষ নয়। কর্নেল তোফায়েল হাজির করে নতুন আবদার। রাতে আলোচনার জন্য ডিনারের আমন্ত্রণ জানান তিনি। কিন্তু ততক্ষণে নানান দিক থেকে খবর আসতে শুরু করেছে মোশাররফ হোসেনের কাছে। যশোরের সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা তাঁর কাছে খবর পাঠিয়েছেন যশোরে পাকিস্তানিদের সামরিক প্রস্তুতির বিষয়ে। ঢাকা থেকেও আসে খবর, ‘পরিস্থিতি যুদ্ধের দিকে যাচ্ছে’।
ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর) -এর সেক্টর কার্যালয় তখন যশোরের ভোলা ট্যাংক রোডে। সেখান থেকে ইপিআরে কর্মরত সেকেন্দার আলী নিয়ে এলেন ভেতরের খবর। সব মিলিয়ে তখন আর আলোচনা নয়, যুদ্ধ প্রস্তুতিই একমাত্র কর্তব্য হয়ে উঠেছে। রাতে ডিনারে যাওয়ার বিষয়ে আলাপ হলে মোশাররফ হোসেন দৃঢ়ভাবে তার বিরোধিতা করেন। তাঁর বক্তব্য হল, যদি তাঁরা সেখানে যান, তাহলে পাকিস্তানিরা আর তাদের ফিরতে দেবেনা। ওখানেই সব শেষ হয়ে যাবে। যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে মতভিন্নতার সমাধান করতে ছাত্রনেতারা স্পষ্টভাবে মোশাররফের পক্ষ নিলেন। যুবনেতাদের ভেতর আলী হোসেন মনি, রবিউল আলম, শেখ আব্দুস সালাম, মশিয়ার রহমান প্রমুখ যুদ্ধপ্রস্তুতির পক্ষে এবং সেনানিবাসে যাওয়ার বিপক্ষে অবস্থান নেন।
এরপরও মশিয়ুর রহমানের সাথে মোশাররফ হোসেনের কথা হয় ফোনে। তাঁকে যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে পরামর্শ দেন বাসা ছাড়তে। কিন্তু মশিয়ুর রহমান শেষ পর্যন্ত বাসাতেই থাকেন। মশিয়ুর রহমানকে বাসা থেকে আনতে ছাত্রনেতা আব্দুস শহীদকে পাঠান মোশাররফ হোসেন। কিন্তু বাসা ছাড়েননি তিনি। ২৬ শে মার্চ পাকিস্তানি আর্মি তাঁকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। প্রায় এক মাস নির্মম নির্যাতনের পর ৩ এপ্রিল তাঁকে হত্যা করে। তাঁর লাশটি পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
২৬ মার্চে যশোরে পাকিস্তানি সেনারা ঘোষণা দেন, মোশাররফ হোসেনকে জীবিত বা মৃত ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কার দেয়া হবে। মাইকিং শোনার পর মোশাররফ হোসেনের পরিবারের সদস্যরা শহরের যে বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তার গৃহকর্তা জরুরি কাজের কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এতে সন্দেহ হয় মোশাররফ হোসেনের বড় মেয়ে রওশন জাহান সাথীর। তাঁরা দ্রুত সেখান থেকে চলে যান যশোর কোতোয়ালি থানার কাছে আর এক আত্মীয়ের বাসায়। সেখান থেকে পরিবারটি তিন ভাগে ভাগ হয়ে ভারতে যায়।
১৯৭১ সালের ২৭ শে মার্চেই মোশাররফ হোসেন ভারতে পৌঁছান। যশোরের বয়রা বর্ডার দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করার পর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কর্মকর্তা নেগি তাঁকে তাকে গ্রহণ করেন এবং মোশাররফ হোসেনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বনগাঁ বারের আইনজীবী কংগ্রেস নেতা অখিল রায় চৌধুরীর বাসাতে পৌঁছে দেন। সেখান থেকে মোশাররফ যান সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের কাছে, যিনি পরবর্তীতে পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হন। সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের সহযোগিতাতেই মোশাররফ হোসেন দেখা করেন ভারতের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের সাথে।
ভারতে অবস্থানকালে মোশাররফ হোসেন সর্বাত্মকভাবে আত্মনিয়োগ করেন যুদ্ধে। বয়রা এবং বনগাঁতে ছাত্র-যুবকদের সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য স্থাপিত যুবশিবিরের ব্যবস্থাপনা শুরু করেন। সেখানে মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড (টেড) কেনেডির সাথেও দেখা হয় মোশাররফের। মুক্তিযুদ্ধের একপর্যায়ে ইন্দিরা গান্ধী বনগাঁ এলে আবারও তাঁর সাথে দেখা হয় মোশাররফ হোসেনের।
বাংলাদেশ থেকে যাওয়া যুবকদের যুদ্ধের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা তো বটেই, সীমান্ত পেরিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে রসদ, অস্ত্র, গুলি বহনও করেছেন মোশাররফ নিজে। নির্বাচিত এমপিএ হিসেবে রাজনৈতিক তদারকিতেও তাঁকে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। বন্ধু অখিল রায় চোধুরী মোশাররফ হোসেনের লিয়াজো অফিসের জন্য নিজের বাসার একটা কক্ষ ছেড়ে দেন।
সব মুক্তিযোদ্ধার জন্য বিজয়ের পরের সময়টা একদিকে যেমন ছিল আনন্দের, তেমন ছিল বিষাদের। হানাদার বাহিনী আর তাদের সহযোগী রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসের মতো হিংস্র হায়েনাদের হাতে নিহত লক্ষ লক্ষ নিরস্ত্র মানুষ ও যুদ্ধে প্রাণ উৎসকারী মুক্তিযোদ্ধাদের শোকে সবাই ছিল মুহ্যমান।
দেশ স্বাধীনের পর শোককে শক্তিতে পরিণত করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করেন মোশাররফ হোসেন। উন্নয়ন কাজ থেকে শুরু করে লঙ্গরখানার ব্যবস্থাপনার কাজ তদারকির জন্য নিজে অকুস্থলে উপস্থিত হতেন তিনি।
কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে স্বাধীন বাংলাদেশে। ফলে ১৯৭২ সালের সেপ্টম্বর মাসেই মোশাররফ হোসেন পদত্যাগ করেন আওয়ামী লীগ থেকে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান কেন তিনি আওয়ামী লীগ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
১৯৭২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মোশাররফ হোসেনের সংসদ থেকে পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়।
১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর সকালে এক সভায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।
১৯৭৩ সালের মে মাসে জাসদের প্রথম পূর্ণাঙ্গ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলে মোশাররফ হোসেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতির পদ গ্রহণ করেন। মোশাররফ তৎকালীন যশোর জেলা জাসদের সভাপতিও হন।
জাসদ গঠনের পর আওয়ামী লীগের সাথে তাঁর দূরত্ব বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে তিনি গ্রেফতার হন। কারাবন্দী থাকা অবস্থাতেই মোশাররফ হোসেনের মা মারা যান। তার কয়েক মাস পর ডিসেম্বরে তাঁকে গণভবনে আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চাচ্ছেন মোশাররফ হোসেনকে ফিরিয়ে নিতে। কিন্তু তিনি আওয়ামী লীগে আর ফিরে যাননি।
১৯৭৪ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারি একটি শোকের দিন। ওই দিন আততায়ীরা এসেছিল মোশাররফ হোসেনের চেম্বারে। একজন পিস্তল হাতে আর একজন স্টেনগান হাতে। খুব কাছ থেকে ট্রিগার চাপে তারা।
আততায়ীর গুলিতে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মোশাররফ হোসেনের নিহত হওয়ার সংবাদ পেয়ে তাজউদ্দিন আহমদ যশোরে আসেন। শোকসন্তপ্ত পরিবারের হাতে সরকারের পক্ষ থেকে তুলে দিতে চান পঞ্চাশ হাজার টাকা ও একটা ট্রাক। সরকারি সাহায্য তাৎক্ষণিক প্রত্যাখ্যান করেন মোশাররফ হোসেনের পরিবার।
মোশাররফ হোসেনের মৃত্যুর পর যশোর জেলা জাসদের সহ-সভাপতি আইনজীবী হাসান ইমাম মামলা করেন। জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয় মোশাররফের হত্যাকান্ডের বিষয়টি। শোকবার্তা পাঠান প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান, যোগাযোগমন্ত্রী মনসুর আলী, ড. আলীম আল রাজীসহ অনেকে।
লেখক : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক