রুকুনউদ্দৌলাহ: আব্দুল হামিদ রায়হান। একটি নাম। একটি অধ্যায়। একটি ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধকালীন নয়টি মাস ক্যামেরা হাতে চরকির মতো ঘুরে বেড়িয়েছেন। তার ক্যামেরায় ধারণ করা হয় ইতিহাসের বিশ^স্ত সব ছবিগুলো। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, কষ্ট শ্রম স্বীকার করে ১৯৭১ এর নয়টি মাস তিনি ছবিগুলো ধারণ করে হয়েছেন যুদ্ধ আলোকচিত্রী। জাতির এই শ্রেষ্ঠ সূর্য সন্তানকে দৈনিক কল্যাণের পক্ষ থেকে টুপি খোলা স্যালুট।
মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরকে তিনি প্রায় ৩শ ছবি দান করেছেন। আব্দুল হামিদ রায়হানের ছবি মানুষ যতবার দেখবেন ততবারই মুগ্ধ হবেন।
১৯৭১ এর দুঃসহ দিনে পরিবারসহ জীবন বাঁচাতে সওে পড়েছিলেন। যোগ দিয়েছিলেন ভলান্টিয়ার নার্ভিস কোরে। ক্যামেরার মানুষটি চারণের মতো ঘুরে ঘুরে ছবি তোলেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় তিনি দুই হাজারের মতো ছবি তোলেন। তার তোলা ছবি ভারত ও পশ্চিমা দেশের পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়। তাতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
তিনি প্রবাসী সরকারের নেতাদের মুক্তাঞ্চল সফরের ছবি ধারণ করেছেন। আব্দুল হামিদ রায়হানের ঐতিহাসিক ছবিগুলো আজ ইতিহাসের মূল্যবান দলিল। তার ছবি দর্শকদের দারুণভাবে আলোড়িত করে।
এই মানুষটির জন্ম ১৯৩২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। তার নিবাস কুষ্টিয়া। তিনি একজন ভাষা সংগ্রামী। এক সময় পৌর জনপ্রতিনিধিও ছিলেন। পরিণত বয়সে রাজনীতি ও সমাজ সেবার সাথে ঘনিষ্টভাবে জড়িত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মিশে আছে তার সমগ্র সত্তায়।
তিনি বড্ড শৌখিন মানুষ। তার বাড়ির ছাদে কমপক্ষে ২০০ জাতের নামি দামি গোলাপ ফুল আছে। তিনি আন্তর্জাতিক রোজ সোসাইটির একজন সদস্য।
১৯৪৬ সালে কোডাক ক্যামেরা দিয়ে তার ছবি তোলা শুরু হয়। ১৯৬৯ সালে তিনি ৫০০ টাকা দিয়ে একটি ইয়াশিকা ক্যামেরা কেনেন। এই ক্যামেরা দিয়েই শুরু হয় তার নতুন জীবন। ১৯৬৯ এর গণ আন্দোলনের ছবি তুলে অভিষেক ঘটে এই ক্যামেরার। এই ক্যামেরা দিয়েই তোলা মুক্তিযুদ্ধের সব অবিস্মরণীয় ছবি।
আজকের যে মাঠে, যে মঞ্চে মহান এই গুণী সংবর্ধিত হচ্ছেন এটিরও একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আছে। এই টাউন হল মাঠেই শত্রুমুক্ত বাংলাদেশের প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এ জনসভা যখন চলছিল তখন যশোরের আশপাশে যুদ্ধ চলছিল। এই ঐতিহাসিক জনসভায় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ ভাষণ দেন। এই জনসভার ছবিটি তুলে স্মরণীয় হয়ে আছেন আমাদের আব্দুল হামিদ রায়হান।
প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে আব্দুল হামিদ রায়হান মিশে যাবেন মৃত্তিকায়। কিন্তু তিনি তার কীর্তির মাঝে সগৌরবে বেঁচে থাকবেন।