নিজস্ব প্রতিবেদক
বেনাপোল দিয়ে ডিম আমদানির পরই যশোরের বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে। ডিম প্রতি পাইকারি দাম কমেছে দেড় টাকা। সোমবার সকাল থেকে এ দামে ডিম কিনেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। ফলে তারা আগের দিনের থেকে এক থেকে দেড় টাকা কমে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করছেন। এতে ভোক্তারা খুশি হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, ভারতীয় ডিম বাজারে আসার আগেই দেশীয় উৎপাদকরা কিভাবে দাম কমিয়ে দিল? উৎপাদন খরচ কি কমে গেছে? তারা ইচ্ছা করে ডিমের দাম একের পর এক বৃদ্ধি করছিল।
যশোরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি ডিম আগের দিনের ১৩ টাকার স্থলে সোমবার ১১ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। আবার কেউ কেউ ১২ টাকায় বিক্রি করছেন। যশোর শহরের কেশবলাল সড়কের এনকে স্টোরের খুচরা ব্যবসায়ী দীপঙ্কর বিশ্বাস বলেন, ১৩ টাকার ডিম বিক্রি করছি সাড়ে এগারো টাকায়। রোববার পাইকারি দাম ছিল ১১ টাকা ৫০ পয়সা। আজ সোমবার কিনেছি ১০ টাকা ৫০ পয়সায়। বিক্রি করছি ১১ টাকা ৫০ পয়সায়। অবশ্য কেউ কেউ ১২ টাকায় বিক্রি করছেন।
লালদীঘিপাড়ের খুচরা ব্যবসায়ী জগদীশ বোস বলেন, রোববার প্রতিটি ডিম বিক্রি করেছি ১৩ টাকা। আজ সোমবার বিক্রি করছি ১২ টাকা করে। পাইকারি দাম কম হওয়ায় আমরাও কমে বিক্রি করতে পারছি।
যশোরের জেল রোডের বিসমিল্লাহ ডিম হাউজের পাইকারি বিক্রেতা আকরাম হোসেন পাপ্পু বলেন, ডিম পতি এক টাকা করে কমেছে। বেনাপোল দিয়ে ডিম আমদানির পর বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে।
শহরের ডিসি বাংলো রোডের গৃহবধূ ফেরদৌসী খাতুন বলেন, ‘ডিম আমদানি পরই দাম কমে গেল কিভাবে? আজ সোমবার দেশীয় উৎপাদনের ডিমই তো দেড় টাকা কমে কিনছি। ১৩ টাকার ডিম একদিনেই সাড়ে ১১ টাকায় তারা বিক্রি করছে কিভাবে। একদিনেই কি উৎপাদন খরচ কমে গেল? এতেই বোঝা যায় তারা ইচ্ছেমতো দাম বৃদ্ধি ও কমায়। বাজার এখন পুরোই সিন্ডিকেট চলে।’
কাঠমিস্ত্রি মেহের আলী মোল্লা বলেন, ডিম আমাদের শ্রেণির একমাত্র পুষ্টির ভরসা। এই ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে এটি আমাদের জন্য একটু হলেও সুখবর। নিত্যপণ্যের দাম কমুক এটাই আমাদের দাবি।
যশোরের আফিল এগ্রো’ লিমিটেডের এজিএম তোফায়েল আহমেদ জানান, আফিল এগ্রোর প্রতিটি ডিম সোমবার পাইকারি বিক্রি করা হয় ১০ টাকা ৫০ পয়সা করে। রোববার এর দাম ছিল ১১ টাকা ৫০ পয়সা। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, উৎপাদনের উপর ডিমের দাম ওঠানামা করে। শীতকালে উৎপাদন বেশি হয়। প্রতি শীত মৌসুমেই ডিমের দাম কমে। আমাদের উৎপাদিত ডিমের দাম আরও কমবে। আমদানি করা হয়েছে মাত্র ৬০ হাজার ডিম। বাজারে প্রভাব ফেলার জন্য তেমন কিছু না। আমদানির কারণে আমরা দাম কমায়নি। আর আগের তুলনায় এখন ডিমের উৎপাদন খরচ অনেক বেশি।
প্রসঙ্গত, দেশের বৃহত্তর স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে দুইটি ট্রাকে ৬১ হাজার ৯৫০ পিস মুরগির ডিমের চালান বাংলাদেশে প্রবেশ করে। দেশের বাজারে ডিমের দাম বৃদ্ধির কারণে ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেই মোতাবেক ভারত থেকে প্রথম চালান এলো। প্রতি পিস ডিমের ভারতে ক্রয় মূল্য দাঁড়িয়েছে ৫ টাকা ৩০ পয়সা। ট্রাক ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে খোলাবাজারে এসব ডিম প্রতি পিস ১০ টাকার মধ্যে বিক্রি সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মোট ১০টি প্রতিষ্ঠানকে ১০ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। আমদানি শর্তে বলা হয়েছে, ডিম অবশ্যই ভাইরাসমুক্ত থাকতে হবে।
ডিম চালান ছাড়কারী সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান এমই এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি মহিদুল হক জানান, ভারত থেকে প্রথম চালানে ৬১ হাজার ৯৫০ পিস ডিম আমদানি হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ডিমের বাকি চালান খুব দ্রুত বেনাপোল স্থলবন্দরে আসবে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের প্রাণিসম্পদ কোয়ারেন্টাইন অফিসের ইনচার্জ বিনয় কৃষ্ণ ম-ল জানান, ডিমবাহী ট্রাক বন্দরে প্রবেশের পর সেটি ভাইরাস মুক্ত বা খাওয়ার উপযোগী কিনা পরীক্ষা করা হয়। পরে তা মানসম্পন্ন হওয়ায় বন্দর থেকে ডিমের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ভারত থেকে আমদানি করা ডিমের চালানটি বন্দর থেকে দ্রুত ছাড় করতে সহযোগিতা করা হয়।