সৈয়দ রাসেল
পেশাদার ক্রিকেটের সাথে যুক্ত হওয়ার পর গ্যালারিতে বসে সাধারণ দর্শকদের সাথে খেলা দেখার সুযোগ কমই হয়েছে। তবে এবার টোয়েন্টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সূচির ঠিক হওয়ার পর থেকে গ্যালারিতে বসে বাংলাদেশের খেলা দেখার আশা করেছিলাম। আমেরিকায় খেলা হওয়ায়, আমার জন্য সুবিধা হয়েছে। জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে শীর্ষ পর্যায়ের কোন প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট হয় না। এ সুযোগে গত কয়েকবছর ধরে ছুটি কাটানোর জন্য আমেরিকা আসি। এবার এসেছি তাও এক মাস হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিরিজ থেকে চেষ্টা করছিলাম বাংলাদেশের একটা ম্যাচ দেখার। তবে সেই সুযোগ আর হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ব্যাটে-বলে মিলে যায়।
বিশ্বকাপের গ্রুপ নির্ধারণ হওয়ার পর থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ নিয়ে বাংলাদেশের কোন প্রত্যাশাই ছিল না। বিশ্বকাপের কয়েকটি ম্যাচ দেখার পর আমরা আলোচনা করছিলাম, দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে যদি বাংলাদেশ আগে বল করতে পারে তাহলে ভাল সুযোগ আছে। সেই সুযোগ পেয়েও ছিলাম। তবে এদিন ভাগ্য সহায়তা করেনি। মূলত আম্পায়ারের দুই সিদ্ধান্তই ম্যাচের গতিপথ বদলে দিয়েছে।
৩টি টি-২০ বিশ্বকাপসহ নিজে ৫টি বিশ্বকাপে দলের অংশ ছিলাম। তবে গ্যালারিতে বসে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখবো বলে উত্তেজিত ছিলাম। টস হওয়ার পর সেই উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। কেননা আমি চেয়েছিলাম বাংলাদেশ আগে ফিল্ডিং করুক। বল হাতে নিয়ে বাংলাদেশের বোলাররা সঠিক কাজ করেছে। আফ্রিকার ব্যাটারদের ক্রিজে বেধে রাখে। তারা ২০ ওভারে ১১৩ রানের বেশি করতে পারেনি।
এ পিচে ১১৩ রান চেজ করা কঠিন। কেননা আগের দিনই পাকিস্তান ১২০ রান করতে পারেনি। তবে ভরসা ছিল বাংলাদেশের ব্যাটারদের উপর। ব্যাটাররা খেলছিলোও ভাল। প্রথম দিকে দ্রুত কয়েকটি উইকেট হারালেও ম্যাচ জয়ের কাছাকাছি গিয়েছিলাম। এ পিচে ব্যাটারদের দোষ দেয়ার সুযোগ নেই। আগের দিনই বর্তমান বিশ্ব ক্রিকেটের দুই মাষ্টার ব্যাটার বিরাট কোহলি ও বাবর আজমও ভাল খেলতে পারেনি। আমার কাছে মনে হয়েছে দুই আম্প্যায়ার বাংলাদেশের ম্যাচ হারাই দিয়েছে। আম্পায়াররা আঙ্গুল তোলার জন্য রেডি ছিল। তাওহীদ হৃদয়ের আউট দেখে তাই মনে হয়েছে। আফ্রিকার ফিল্ডাররা জোরালো কোন আবেদনই করেনি। তারপরও আউট দিয়ে দিয়েছে। এর আগে রিয়াদের আউটের সিদ্ধান্ত ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। রিয়াদের পায়ের অর্ধেকের বেশি অংশ লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে ছিল। পায়ে লাগার পর যখনই দেখেছে চার হয়ে যাচ্ছে। তখনই আম্পায়ার আউট দিয়ে দিয়েছে। যদিও পরে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন হলেও চার রান আর যোগ হয়নি। ওই চার হলে ম্যাচ এত দূর পর্যন্ত আসতো না। এ দুই ঘটনার পরও বাংলাদেশের ভালো সুযোগ ছিল। তবে এদিন ভাগ্য আমাদের পক্ষে ছিল না। শেষ ওভারে দুই ফুলটস কাজে লাগাতে পারেনি। রিয়াদের মারা বলটা তো মাঠে উপস্থিত দর্শকরা ছয় বলে চিৎকার করছিল। তবে বলটা হঠাৎ গতি কমে যাই। বাতাসের বিপরীত দিকে আসা বাতাসের বাধা পেয়ে বলের গতি কমে গেছে বল মাঠ থেকে দেখে মনে হয়েছে। জানি না টিভিতে দেখে কি মনে হয়েছে।
বাংলাদেশ জয়টা পেলে মাঠে বসে খেলা দেখার ষোলকলা পূর্ণ হত। তবে ম্যাচের পুরো সময়টা উপভোগ করেছি। বাংলাদেশের আগামী ম্যাচ গুলোর জন্য শুভকামনা রইলো।
লেখক : জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার