নিজস্ব প্রতিবেদক
চাঁদাবাজি ও মাদক বেচাকেনা করতে নিষেধ করায় মা-বোন তুলে গালিগালাজ করেছিলেন আলী হোসেন। এছাড়া এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরে থাকা কাটা রাইফেল দিয়ে গুলি করে আলী হোসেনকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে গ্রেফতার রবিউল ইসলাম নবাব। রোববার (২৩ জুন) ভোরে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বোধহাটা গ্রামে খালা বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করেন যশোর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম। এদিনই তাকে আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম কিবরিয়ার এজলাসে নবাব একাই আলী হোসেনকে গুলি করে হত্যা করেছেন বলে জবানবন্দি দিয়েছেন। নবাব যশোর সদর উপজেলার কিসমত নওয়াপাড়ার মবজেল হোসেনের ছেলে।
নবাব জানিয়েছেন, একই উপজেলার ভাতুড়িয়া-নারায়নপুর গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে আলী হোসেন প্রায় ৫ বছর আগে বাহাদুরপুর গ্রামে বসবাস শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে ভাতুড়িয়া-নারায়নপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম নুরু মহুরীর ছেলে ইমরোজ হত্যাসহ অর্ধডজন মামলা রয়েছে। ফলে কিসমত নওয়াপাড়ায় বসবাস করলেও এলাকার কাউকে পরোয়া করতেন না। কেউ জমি কিনলে বা বাড়ি নির্মাণ করলে আলী হোসেনকে চাঁদা দিতে হতো। শুধু তাই নয়, এলাকার বালু ও মাটি ব্যবসায়ীরা চাঁদা না দিলে তাদেরকে মারপিটসহ খুন জখমের হুমকি দিতো। এরই মধ্যে সদর উপজেলা নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা শুরু হয়। নবাব নিজে বিএনপি রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকলেও এবারের নির্বাচনে তিনি মোটরসাইকেল প্রতীকের পক্ষে কাজ করেছেন। আর এতেই নবাবের উপর ক্ষিপ্ত হয় আলী হোসেন। গত ৬ জুন রাতে যশোরের উপশহরে একটি অনুষ্ঠানে আলী হোসেনের সাথে দেখা হয় নবাবের। এসময় নবাবকে মা-বোন তুলে গালিগালাজ করে আলী হোসেন। ফলে সেখান থেকে দ্রুত বাড়িতে ফিরে আসেন নবাব। ১৫ বছর আগে ইউপি সদস্য থাকাকালে খুলনার আলামিনের কাছ থেকে কেনা একটি কাটা রাইফেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েই দেখেন দিপক নামে পরিচিত একজন মোটরসাইকেল চালিয়ে আসছে। এসময় দিপকের কাছে লিফ্ট চেয়ে তার মোটরসাইকেলে উঠে বসেন নবাব। বাহাদুরপুর মেহগনি বাগানের সামনে পৌছানো মাত্র দেখতে পান আলী হোসেনসহ তিনজন আরেকটি মোটরসাইকেলে আসছে। তাদের মোটরসাইকেল থামিয়ে কাছে থাকা কাটা রাইফেল দিয়ে ৪/৫টি গুলি করেন আলী হোসেনকে। তবে এসময় আলী হোসেনের সাথে থাকা অন্যরা পালিয়ে চলে যায়। এরপরই নবাব পালিয়ে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বোধহাটা গ্রামে খালাতো বোনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন তিনি। রোববার ভোরে সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পাশাপাশি হত্যাকা-ে ব্যবহৃত কাটা রাইফেল, ৩০ রাউন্ড নাইন এমএম পিস্তলের গুলি, মোটরসাইকেল এবং মোবাইল ফোনসেট উদ্ধার করে পুলিশ। এদিনই তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়েছেন।
এর আগে আলী হোসেন খুনে তার মা আঞ্জুআরা বেগম বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। মামলায় রবিউল ইসলাম নবাবকে প্রধান আসামি করে ছয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়। সেই সঙ্গে অজ্ঞাতনামা আরো ৬/৭ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন নবাবের ভাই সিরাজ (৪০), পাঁচবাড়িয়া গ্রামের একরামুল (৪৫), বাহাদুরপুর গ্রামের টোকন (৪৫), চাঁচড়া ভাতুড়িয়া গ্রামের ইসরাজুল (২৫) ও কিসমত নওয়াপাড়া গ্রামের এনামুল শেখ (২৮)।