নিজস্ব প্রতিবেদক: নিখোঁজের দুইদিন পর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ব্যবসায়ী মফিজুর রহমানের (৬৫) গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে যশোরের পুলিশ। এ সময় নিহতের মোবাইল ফোন ও টাকা উদ্ধার করা হয়। শনিবার দুপুরে শহরের মুজিব সড়কের পঙ্গু হাসপাতালে লিফটের আন্ডার গ্রাউন্ড থেকে ওই মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ওই হাসপাতালের ম্যানেজার, লিফটম্যানসহ ৭/৮জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নিহত মফিজুর রহমান ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। বিল পরিশোধের বিষয় নিয়ে বাকবিত-ার পর ডাক্তার আব্দুর রউফের ইশারায় চাঁচড়ার রায়পাড়া কয়লাপট্টির সজলের নেতৃত্বে গত ৩১ মার্চ দুপুরে হাসপাতালের গেট থেকেই তাকে অপহরণের পরে খুন করেছে বলে পরিবারের দাবি।
নিহতের ভায়রার ছেলে ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, গত ২৭ মার্চ সকালে মফিজুর রহমানের মা আছিয়া বেগম (৯০) বাড়িতে পড়ে গিয়ে ডান পা ভেঙে যায়। তাকে নিয়ে মফিজুর রহমান যশোরের পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করে ৭ তলায় রাখেন। গত ৩১ মার্চ দুপুর ২টার দিকে মফিজুর রহমান নিচে আসেন বিলের টাকা দিতে। ওই সময় ডাক্তার আব্দুর রউফের সাথে মফিজুর রহমানের বাকবিত-া হয়। কিছুক্ষণ পর হাসপাতালের গেটে আসার পরে আর তার কোন খোঁজখবর পাওয়া যায়নি। এছাড়া তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ থাকে। ওইদিনই তার ছেলে সোয়েব উদ্দিন কোতোয়ালি থানায় জিডি করেন। কোতোয়ালি থানা, জেলা গোয়েন্দা, পিবিআই এবং সিআইডি পুলিশ মফিজুর রহমানের সন্ধানে মাঠে নামে। শনিবার দুপুরের দিকে হাসপাতালের লিফটের কাছ থেকে দুর্গন্ধ পায় উপস্থিত লোকজন। এরপর খবর পেয়ে চাঁচড়া ফাঁড়ি ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক আকিকুল ইসলাম হাসপাতালে গিয়ে কর্মচারীদের কাছ থেকে চাবি নিয়ে লিফটের নিচে আন্ডার গ্রাউন্ড থেকে মফিজুর রহমানের লাশ উদ্ধার করে। লাশের মুখে কাপড় দেয়া ছিল। গলার নিচে ও ডান পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। তার কাছে থাকা বেশ কিছু টাকা ও মোবাইল ফোনসেট উদ্ধার করা হয়। এসময় ওই হাসপাতালের ম্যানেজার আতাউর রহমান, লিফটম্যান জাহিদ গাজী ও আব্দুর রহমানসহ ৭/৮ জনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
অপরদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছে, পঙ্গু হাসপাতালের সত্ত্বাধিকারী ডাক্তার আব্দুর রউফ। দীর্ঘদন ধরে ওই হাসপাতালে চিকিৎসার নামে গলাকাটা ব্যবসা শুরু করেছেন। দূরদুরান্ত থেকে আসা রোগী ও তার তাদের স্বজনদের সাথে চরমভাবে দুর্ব্যবহার করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। আর ওই সব অপকর্মে সেল্টার হিসেবে ষষ্ঠীতলার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ম্যানসেল, রায়পাড়া কয়লাপট্টির পলিথিন বাবু, সজল, বাপ্পি, আশিক, শিমুল, রমজান ও মৃদুলসহ অনেককে ব্যবহার করছেন। ঘটনার দিন ৩১ মার্চ দুপুরে যখন মফিজুর রহমানের সাথে ডাক্তার রউফের বাকবিত-া হয়! তখন ওই সন্ত্রাসীদের ডেকে আনেন ডাক্তার রউফ। সজলের নেতৃত্বে বাপ্পি, আশিক, শিমুল, রমজান ও মৃদুলসহ একদল সন্ত্রাসী এসে মফিজুর রহমানকে হাসপাতালের গেট থেকেই অপহরণ করে নিয়ে যায় রায়পাড়ায়। সেখানকার এক আইনজীবীর দ্বিতীয়তলার বাড়িতে আটকে রেখে মফিজুর রহমানকে কুপিয়ে হত্যার পরে লাশটি রাতেই পঙ্গু হাসপাতালের লিফটের নিচে গ্রাউন্ড ফ্লোরে ফেলে রাখে।
তাছাড়া এই ঘটনার পূর্ব মুহূর্ত থেকে পঙ্গু হাসপাতালের সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে রাখে কর্তৃপক্ষ। নিহত মফিজুরের ভাগ্নে সাইফুদ্দিন ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ম্যানেজার আতিয়ার রহমানের কাছে তাদের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে চান। কিন্তু আতিয়ার রহমান বলেছেন তাদের সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক নষ্ট। নিহতের ছেলে সোয়েব উদ্দিনের দায়ের করা থানার জিডি তদন্তকালে চাঁচড়া ফাঁড়ি ইনচার্জ আকিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে যান। ওই সময় পুলিশ কর্মকর্তার সামনেও ডাক্তার আব্দুর রউফ নিহতের ছেলেকে ধমক দিয়ে বলেছেন আমরা রোগীর নিরাপত্তা দিবো। কিন্তু তার স্বজনদের নয়।
এই ব্যাপারে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি তাজুল ইসলাম বলেছেন, ডিবি পুলিশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এনেছে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করার জন্য এখনো কোন এজাহার দেয়নি।
র্যাব ক্যাম্প যশোরের কমান্ডার লে. কমান্ডার এম নাজিউর রহমান বলেছেন, ঘটনার দিন থেকেই হাসপাতাল এলাকায় আমাদের নিজস্ব গোয়েন্দা দিয়ে ছায়া তদন্ত করা হয়েছিল। লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্ত করে হত্যার কারণ উদঘাটন ও খুনিদের সনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।