তবিবর রহমান
যশোর জেলা পরিষদে গত বছর ইফতার মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠান করা হয়নি। অথচ ইফতার আয়োজনের নামে তিন লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, হিসাব রক্ষক ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী শরিফুল আলম চৌধুরী এই টাকা উত্তোলনে জড়িত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিল উত্তোলনের কাগজপত্রে তাদের স্বাক্ষর রয়েছে। যার ডকুমেন্ট এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, জেলা পরিষদের দাবি অনুযায়ী ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ ইফতার আয়োজন করা হয়েছিল। এ আয়োজনে জেলার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, উপজেলা চেয়ারম্যানবৃন্দ, ভাইস চেয়ারম্যানবৃন্দ, সকল পৌরসভার মেয়র, জেলার সব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সমন্বয়ে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। কিন্তু ইফতার অনুষ্ঠান যাদের নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়; তারাই বলছেন, এমন কোন অনুষ্ঠানে তারা যাননি। আবার জেলা পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সবাই বলছেন ইফতার অনুষ্ঠানই তো হয়নি। তাহলে টাকা উত্তোলন করা হলো কেন ? তথ্য সংগ্রহকালে জড়িতরা প্রথমে অস্বীকার করেন। পরে টাকা উত্তোলনে স্বাক্ষর করার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে জানতে চাইলে তারাও এক পর্যায়ে স্বীকার করেছেন ইফতার অনুষ্ঠান তো হয়নি।
জেলা পরিষদের উচ্চমান সহকারী আলমগীর হোসেন (তার রুমে গত তিনদিন আগে কথা হয়) বলেন, গতবছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে যশোর জেলা পরিষদের ইফতার আয়োজন করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত হয়নি। একই কথা বলেছেন চেয়ারম্যান ও সিইও এর পিএ (সাঁটলিপিকার) মো. আসাদুজ্জামান।
ইফতারের কোন দাওয়াত পাননি বলে জানিয়েছেন অতিথির নামের তালিকায় থাকা ব্যক্তিরাও। বর্তমানে পলাতক থাকা একজন পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হোটাসঅ্যাপে জানিয়েছেন, যতদূর মনে পড়ে ইফতার মাহফিলে তো তাদের দাওয়াতই দেয়া হয়নি।
এদিকে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান করার নামে দুর্নীতি করার বিষয়টা প্রথমে পুরোটাই অস্বীকার করেন জড়িতরা। অথচ অনুষ্ঠান ব্যয়ের টাকা পেতে ২০২৪ সালের ৪ এপ্রিল প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান বরাবর আবেদন করেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী শরিফুল আলম চৌধুরী। আর ৮ এপ্রিল জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা লুৎফর রহমান সরদার, হিসাব রক্ষক আবু হুরাইয়া স্বাক্ষর করে টাকা উত্তোলনে সহযোগিতা করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান প্রথমে বলেন, এমনটা কোনভাবেই হওয়া সম্ভব না। তিনি এ প্রতিবেদককে ডকুমেন্ট দেখাতে বলেন। পরে এক ঘণ্টা পর নিজেই ফোন করেন। বলেন, ইফতারের নামে টাকা উত্তোলন করা হয় ঠিকই। ইফতার না হওয়ায় ওই টাকা ঈদের আগে বিভিন্ন খাতে খরচ করা হয়েছিল। বোঝেন তো আগে জেলা পরিষদ অন্যভাবে চলতো।
আর ইফতার আয়োজন না করেও টাকা উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে যেন আকাশ থেকে পড়েন উপ-সহকারী প্রকৌশলী শরিফুল আলম চৌধুরী। তিনি বলেন এটা তো হওয়ার কথা না। আমি তো ধারের কাছেও থাকিনা। এটা জানতে পারেন লুৎফর সাহেব।
আর প্রশাসনিক কর্মকর্তা লুৎফর রহমান সরদার বলেন, আমার বদলি করে দেওয়া হয়েছে। মনে পড়ছে না। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার স্বাক্ষর রয়েছে ! তাহলে কিসে কি হলো।