সাজেদ রহমান: মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের গৌরবগাঁথার অংশীদার জনগণ, রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং তার পাশাপাশি বাঙালি সেনা সদস্য, ইপিআর, পুলিশ, আনসার ও মুজাহিদ বাহিনীর সদস্যও। যশোরের প্রতিরোধ যুদ্ধের ইতিহাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথম ব্যাটালিয়নের বিদ্রোহ এক অন্যন্য ঘটনা নিরস্ত্র অবস্থায় বাঘের খাঁচায় বন্দি থেকে ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ তারা যেভাবে স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন, যে ঝুঁকি নিয়েছিলেন সে কাহিনী শব্দমালায় গ্রথিত করা কঠিন। লেফটেন্যান্ট আনোয়ারসহ ওই বিদ্রোহে অর্ধশত বাঙালি সৈনিক জীবন দান করেন।
ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথম ব্যাটালিয়ন, যারা সিনিয়র টাইগার্স নামে পরিচিত, তারা শীতকালীন যুদ্ধ মহড়ায় ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ ভাগে গিয়েছিলেন জগদীশপুর গ্রামে। যশোর শহর থেকে পশ্চিমে ২৫ কিলোমিটার দূরে চৌগাছা। এই চৌগাছা থেকে দু’কিলোমিটার দূরে উত্তরে কোটচাঁদপুর সড়ক থেকে নেমে উত্তর-পূর্বে আরও দু’কিলোমিটার ভেতরে গ্রামটি। হাওড় (স্থানীয় ভাষায় বাঁওড়) ঘেরা, ঘন গাছ-পালা আবৃত গাঁয়ের একপ্রান্তে মহড়ার জন্য তাবু ফেলা হয়েছিল। ১ মার্চ থেকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলেও মহড়ায় অংশগ্রহণকারী সৈনিকরা তার বিন্দুমাত্র খবর জানতে পারেননি। যশোর সেনানিবাসের ১০৭ ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার দুররানির নির্দেশে ১ মার্চ থেকে কারও রেডিও শোনা বারণ। গ্রামবাসীদের সাথে আলাপেরও সুযোগ নেই, কারণ মহড়া এলাকা লোকালয় থেকে দূরে। পরিকল্পিতভাবে প্রথম ব্যাটালিয়নের সৈনিকদের বিচ্ছিন্ন রাখা হলেও তা তারা বুঝতে পারেননি। তাছাড়া ব্যাটালিয়নের রেডিও অপারেটর ও যোগাযোগের দায়িত্বে ছিলেন অবাঙালি সৈনিক।