ঢাকা অফিস
প্রতিবছর কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে চাহিদার অর্ধেক চামড়ার জোগান আসে। তাই এই উৎসবকে ঘিরে বেশ সরগরম থাকেন খাতসংশ্লিষ্টরা। এ সময় আলোচনার তুঙ্গে থাকে ন্যায্য দাম, সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা এবং সংরক্ষণ পদ্ধতি।
ইতোমধ্যে কোরবানির চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দাম নির্ধারণ প্রক্রিয়া এবং কোরবানিতে গবাদি পশুর চাহিদার ওপর ভিত্তি করে ব্যবসায়ীরা চলতি বছর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন ৯০ লাখ থেকে এক কোটি।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এ বছর কোরবানিযোগ্য মোট গবাদি পশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ১১ হাজার ৯৪৪টি বেশি। এর মধ্যে ৪৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫২টি গরু-মহিষ। ৭৬ লাখ ৯০ হাজার ছাগল-ভেড়া। আর ২ হাজার ৫৮১টি অন্যান্য প্রজাতির গবাদি পশু।
কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৮ লাখ ৯৫ হাজার ৪৫৪টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ লাখ ৫৩ হাজার ১২৮টি, রাজশাহী বিভাগে ৪৫ লাখ ১১ হাজার ৬১৪টি, খুলনা বিভাগে ১৫ লাখ ১১ হাজার ৭০৮টি, বরিশাল বিভাগে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ২০৬টি, সিলেট বিভাগে ৪ লাখ ১০ হাজার ২২৫টি, রংপুর বিভাগে ১৯ লাখ ৬২ হাজার ৯৫১টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৪৭টি কোরবানিযোগ্য গবাদি পশু রয়েছে। এ বছর কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি।
কোরবানিকৃত পশুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় গত বছরের চেয়ে ৩ টাকা বাড়িয়ে ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। গত বছর এই দাম ছিল ৪৭ থেকে ৫২ টাকা। ঢাকার বাইরে গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৪ টাকা।
ঢাকায় প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা, বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকায় ও ঢাকার বাইরে বকরি ও খাসির চামড়ার দাম একই রেখেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এ বছর চামড়া সংগ্রহে প্রস্তুতি সম্পর্কে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি আফতাব খান বলেন, ‘বরাবরের মতোই আমাদের প্রস্তুতি বেশ ভালো রয়েছে। শুধু রাজধানী নয়, সারা দেশের ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। আমরা আশা করছি এক কোটির কাছাকাছি চামড়া সংগ্রহ করতে পারব।’
প্রতি বর্গফুটে তিন টাকা বৃদ্ধিতে চামড়া সংগ্রহে কোনো সমস্যা হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যে দাম নির্ধারিত হয়েছে তাতে চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রায় কোনো বাধা তৈরি হবে না। আশা করছি সুন্দরভাবেই চামড়া সংগ্রহের কার্যক্রম পরিচালিত হবে।’
আড়তদারদের বকেয়া টাকা পরিশোধের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএইচএসএমএ সভাপতি বলেন, ‘গত বছরের পাওনা টাকা ট্যানারি মালিকরা শতভাগই দিয়েছেন। এ ছাড়া আগের যেসব বকেয়া টাকা রয়েছে তাও আংশিক দিয়েছেন। কেউ কেউ দিতে পারেননি, তারাও পরিশোধের চেষ্টা করছেন।’
দাম এবং সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে একই সুরে কথা বললেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুটে সামান্য বেড়েছে। এতে কোনো সমস্যা হবে না। আশা করছি এ বছর চামড়া সংগ্রহ হবে অন্তত ৯০ লাখ পিস। সবকিছু সঠিক এবং ভালোভাবে হোক, এটাই প্রত্যাশা।’
এদিকে চামড়া খাতে ২৫৯ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ১২টি ব্যাংক। গত বছর যার লক্ষ্য ছিল ৪৪৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ডজনখানেক ব্যাংক চামড়া খাতে ঋণ দেয়। এ বছর কোরবানির চামড়া প্রক্রিয়াকরণে ঋণ বিতরণের লক্ষ্য প্রায় অর্ধেক কমানো হয়েছে। কারণ ২০২১ ও ২০২০ সালে তা ছিল যথাক্রমে ৫৮৩ কোটি ও ৬৪৪ কোটি টাকা।