নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে চারটি নদীর ওপর নির্মাণাধীন আটটি সেতুর তালিকায় রয়েছে দাইতলা, রাজারহাট ও ছাতিয়ানতলা সেতু। স্কুল, কলেজ, ব্যবসা ও অন্যান্য কাজে চলাচল করতে চরম বিপাকে পড়েছেন নদী পাড়ের কয়েক হাজার মানুষ। যা নিয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষও বিপাকে।
স্থানীয়রা বলছেন, তিন বছর ধরে ব্রিজের কাজ বন্ধ। তারা শুনেছেন ব্রিজ নিচু হয়ে যাওয়ায় ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন নামে সংগঠন আদালতে মামলা দিয়েছে। তারা এখন দুশ্চিন্তায়, কবে মিলবে আদালতের রায়, আর কবে মিলবে ব্রিজ। এই অপেক্ষায় এখন সদর উপজেলার ওই তিনটি ব্রিজ সংলগ্ন মানুষ।
সূত্র বলছে, বিআইডব্লিউটিএর অনুমোদন না নিয়ে সেতুগুলো নির্মাণ করতে গিয়ে বিপাকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। সেতুগুলোর ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে এখন পর্যন্ত গড় অগ্রগতি প্রায় সাড়ে ৭৮ ভাগ।
স্থানীয় নদ-নদী রক্ষা আন্দোলনের সংগঠকদের অভিযোগ, সেতুগুলোর উচ্চতা যথাযথ না হওয়ায় নৌ চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সার্ভে করে সেতুগুলোকে ত্রুটিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছে।
তবে, নদী রক্ষা আন্দোলনকারীরা সেতুগুলো নৌ চলাচলের উপযোগী করে নির্মাণের আর্জি জানিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করে। এলজিইডি কর্তৃপক্ষ আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থণা করে এবং ছয় মাসের মধ্যে যথাযথ শর্ত মেনে কাজ শুরুর প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু প্রায় দুই বছরেও এর কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় জনদুর্ভোগ লাঘবে এলজিইডির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করার চিন্তা করছে বাদী পক্ষ।
সেতুগুলো পুনঃনির্মাণ কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন হাজারো মানুষ। কোথাও কোথাও অস্থায়ী সাঁকো তৈরি করে মানুষ নদী পার হচ্ছেন। এসময় অনেকেই সাঁকো পার হতে যেয়ে পানিতে পড়ে গিয়ে নাস্তানাবুদ হচ্ছেন।
যশোর সদর উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের ঘোপ গ্রামের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র পারভেজ মুন্না জানায়, সে ছাতিয়ানতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। স্কুলে যেতে তার খুব বেগ পেতে হয়। মাঝে মধ্যে আঁকাবাঁকা বাঁশের তৈরি সাঁকো পার হতে গিয়ে নদীতে পড়ে যেতে হয়।
সে আরো জানায়, দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে সে ওই বাঁশের সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যায়। কবে ঠিক হবে ব্রিজ সেই প্রশ্ন তার।
সূত্র জানায়, ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টে (ডব্লিউবিবিআইপি) এর আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) যশোরে গুরুত্বপূর্ণ চারটি নদীর ওপর আটটি সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করে। সদর উপজেলার ভৈরব নদের ওপর তিনটি সেতু নির্মাণ শুরু করা হয় প্রায় তিন বছর আগে।
মোজাহার এন্টারপ্রাইজ (প্রাইভেট লিমিটেড) ও শামিম চাকলাদারের যৌথ উদ্যোগে (জয়েন্ট ভেঞ্চার) তিনটি, আইসিএল প্রাইভেট লিমিটেড দুটি এবং মেসার্স এনবি কনস্ট্রাকশন ও মেসার্স এআরপিআই-এআরএনআই এন্টারপ্রাইজ একটি করে সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পায়। জেলার মোট আটটি সেতুর মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৪১ কোটি ৬৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা ।
পুরনো সেতুগুলো ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণ শুরু হলে ২০২৩ সালে ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলনসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ঘেরাও, স্মারকলিপি প্রদান, প্রতিবাদ সভা, মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করতে থাকে। তাদের অভিযোগ, উক্ত সেতুগুলোর উচ্চতা যথেষ্ট কম। এতে নৌ চলাচল ব্যহত হবে।
এদিকে এলজিইডির হিসাব অনুযায়ী, যশোর সদর উপজেলার দাইতলা ভৈরব নদের ওপর সেতুর কাজ ৮০ শতাংশ, রাজারহাট সেতুর কাজ ৩২ শতাংশ, ছাতিয়ানতলা সেতুর কাজ ৬০ শতাংশসহ অন্যান্য সেতুগুলোর ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার গড় হার প্রায় সাড়ে ৭৮ ভাগ।
ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলনের উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, বিধি অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ জলপথে প্রথম শ্রেণির নৌপথের ক্ষেত্রে সেতুর উচ্চতা হবে কমপক্ষে ৬০ ফুট, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৪০ ফুট, তৃতীয় শ্রেণিতে ২৫ ফুট এবং চতুর্থ শ্রেণিতে অন্তত ১৬ ফুট। কিন্তু যশোরের নির্মাণাধীন সেতুগুলো ৪ দশমিক ৫৯ ফুট থেকে ১১ দশমিক ৫০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতার। কিন্তু তা না মেনেই নির্মাণ করা হচ্ছিল এসব সেতু।
আরও পড়ুন: বেনাপোলে পৌনে ১০ হাজার ভারতীয় যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট জব্দ