নিজস্ব প্রতিবেদক
তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দামই অতিরিক্ত। কোন ভাবেই এসব নিত্যপণ্যের দাম কমছে না। বেশিরভাগ সবজিই কেজি প্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
যশোরের বাজারে সবজির দাম একটুও কমেনি। আগের মতোই অধিকাংশ সবজি কেজিতে ৮০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। প্রকারভেদে মাছের কেজিতেও গত এক সপ্তাহে বেড়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। ফলে বাজারে গিয়ে ক্রেতাদের পড়তে হচ্ছে আগের মতোই চড়া দামের চাপে।
তবে ইলিশের সরবরাহ কম, নাগালের বাইরে ইলিশের দাম। বাজারগুলোতে এক কেজি ওজনের ইলিশ কেজি ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা, ৭০০ গ্রামের ইলিশ ১ হাজার ৮০০ টাকা, ৫০০ গ্রামের বেশি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ২০০ টাকা, ৩০০ গ্রামের ইলিশ ১ হাজার টাকা ও ১৫০ থেকে ২০০ গ্রামের ইলিশ ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
শুক্রবার যশোর বড়বাজার এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে বেগুন ও কাঁচা মরিচ। গোল বেগুনের কেজি এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ১১০ থেকে ১২০ টাকা, আর কাঁচা মরিচ গত দুই মাস ধরেই ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঢ্যাঁড়স, ঝিঙা, কচুরমুখী ও শসা কেজি প্রতি ৮০ টাকা, টমেটো ১২০, কাঁকরোল ৭০, পেঁপে ৩০, করলা, লম্বা বেগুন ও বরবটি ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পটোল ও চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, পেঁয়াজ ৭৫ টাকা কেজি। ছোট লাউ ৫০ ও বড় লাউ ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে আলুর দাম কিছুটা স্বস্তিদায়ক, কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা। চায়না গাজরের দাম কমে ১০০ টাকায় এসেছে, যা এক সপ্তাহ আগে আরও বেশি ছিল।
বাজারের সবজি বিক্রেতা ইদ্রিস আলী বলেন, আরো কিছুদিন সবজির দাম এমন বাড়তি থাকবে। কারণ এখন বেশিরভাগ সবজির মৌসুম শেষ হয়েছে। বাজারে নতুন করে সবজি ওঠার আগ পর্যন্ত এমন বেশি দাম থাকবে। বাজারে নতুন সবজি ওঠা শুরু করলে ধীরে ধীরে সবকিছুর দাম কমে আসবে। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বাজারে সবজি চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। যে কারণে পাইকারি বাজারেই বেশি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে। এর প্রভাব খুচরা বাজারগুলোতেও পড়েছে। চড়া দামে অস্বস্তি জানিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মমিনুর রহমান বলেন, “গত দুই-তিন মাস ধরেই সবজির দাম চড়া। একটা সবজি কিনতেই ১০০ টাকা শেষ। মাছ-মাংসের হিসেব তো বাদই। আগেও যেমন ছিল, এখনও তেমন আছে। অন্তর্বর্তী সরকার কোনও পরিবর্তনই আনতে পারেনি।”
মাছের বাজারেও একই চিত্র। ইলিশসহ চিংড়ি মাছের দাম ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। প্রতি কেজি বড় ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৩০০ থেকে ২৫০০ টাকায়। ৭০০ গ্রামের ইলিশ ১৩০০ থেকে ১৭০০ টাকা এবং ৪০০-৫০০ গ্রামের ইলিশ ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাষের চিংড়ির দাম বেড়ে কেজিতে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। অন্য সময়ে এই দামে ৫০ থেকে ২০০ টাকা কম থাকে। দেশি শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়, চাষের শিং ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। চাষের রুই, কাতলা ৩৫০-৪২০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০-২৬০ টাকা ও পাঙাশ ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগের তুলনায় ২০ থেকে ৫০ টাকা বেশি।
মাছ ব্যবসায়ী হরেকৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, “মাছ হলো কাঁচা মাল। শুক্রবার ক্রেতা বেশি থাকে বলে দামও বেশি থাকে। অন্যদিন ক্রেতা কম হলে দামও কমে যায়। আসলে আড়তে দাম তেমন বাড়ে নাই।”
অন্যদিকে অপরিবর্তিত রয়েছে ডিম ও মুরগীর দাম। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়, সোনালি জাতের মুরগি ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি। প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়।
মুরগি বিক্রেতা শাহ আলম বলেন, “মুরগির দাম তেমন বাড়েনি। ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। মাছের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষ এখন মুরগিই বেশি কিনছে। সে কারণেই চাহিদা বাড়ায় দামও সামান্য বেড়েছে।”