বিধিনিষেধের তোয়াক্কা করছে না কেউ
সুনীল ঘোষ: এবার করোনা সংক্রমণের রেড জোনের তালিকায় পড়লো যশোর। উচ্চ ঝুঁকি ও সংক্রমণ বৃদ্ধি বিবেচনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বুধবার যশোরকে রেড জোন ঘোষণা করে। কিন্তু এসবের তোয়াক্কা করছে না যশোর পুলিশ ক্লাব। তাদের ‘বারেমাসি মেলা’ দুর্দান্তগতিতেই চলছে। মেলায় বিপুল লোকসমাগম ঘটাতে আয়োজক কমিটির তৎপরতাও থেমে নেই। হরেক রঙের বৈদ্যুতিক বাতির নান্দনিক আলোকসজ্জা, দৃষ্টিকাড়া পণ্যের পসরা আর সুমিষ্ট কন্ঠে বিনোদন উপভোগের প্রচারণায় সব বয়সের মানুষের সমাগম ঘটছে মেলায়। সবই হচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডোগায়। রেড জোনের মধ্যে নির্বিঘেœ বেশ জমে উঠেছে মেলা।
বুধবার সন্ধ্যায় দেখা যায়, প্রতিদিনের মতো মেলার প্রবেশমুখে চেয়ার-টেবিল পেতে হ্যান্ড মাইকে প্রচারণা চলছে। প্রধান ফটকসহ গোটা মেলার মাঠ সাজানো হয়েছে নতুন সাজে। লাল-নীলসহ রঙিন বাতির আলোর ঝলকানি নান্দনিক রূপে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। প্রতিটি স্টলে উপচেপড়া ভীড়। নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী ও শিশুসহ সব বয়সের মানুষের সমাগম ঘটেছে মেলায়। একটু এগিয়েই নজের পড়ে নাগর দোলা। ঠাসাঠাসি করেই দোল খাচেছ শিশুসহ তরুণ-তরুণীরা। দু’একজনের মুখে মাস্ক দেখা যায়। তবে আনন্দে মাতোয়ারা কাউকেই দেখা যায়নি শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে।
পণ্য কেনাকাটা, ফাস্টফুড খাওয়া ও রাইডিংয়ে চড়া নিয়েই ব্যস্ত মানুষ।
১ অক্টোবর এক মাসের জন্য তাঁত বস্ত্র, হস্ত, কুটির শিল্প বাজার-২০২১ নামে মেলার উদ্বোধন করেন যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন। তবে সেই মেলা চলছে সাড়ে ৩ মাস ধরে। যদিও পুলিশ ক্লাব মাঠে নানা ইস্যুতেই বছরভর মেলা বসে। এক দশক ধরে চলে আসছে এই মেলা। এখানে ঠাঁই পাওয়া স্টলগুলো স্থানীয় বাজার ব্যবসায়ীদের মতোই কোটি কোটি টাকার পসরা সাজিয়ে রেখেছেন।
ব্যবসায়ী নেতাদের অভিযোগ, স্থানীয় বাজার ধবংসে মেতেছে পুলিশ ক্লাব। তারা মেলার মাঠ নামে ভিন্ন বাজার গড়ে তুলেছে। এনিয়ে প্রশাসনের সাথে গত ১০ বছরে দফা দফায় বৈঠক হয়েছে কিন্তু পুলিশ ক্লাবের অনৈতিক ও নীতিবিরোধী এই ‘বারোমাসি’ মেলা বন্ধ হয়নি। এনিয়ে ক্ষোভের আগুনে পুড়ছেন বাজার ব্যবসায়ীরা। কিন্তু প্রতিবাদের ভাষা তারা হারিয়ে ফেলেছেন। এই মেলায় ধ্বংস হচ্ছে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য। শাড়ি, কাপড়, জামা, জুতো, স্যালেন্ডলসহ সব ধরণের পণ্য কিনতে মানুষ এখন কথিত মেলার মাঠে যাচ্ছেন। মেলায় রকমারি খাবার আর কিছু বিনোদনের ব্যবস্থা থাকায় ক্রেতারা বাজারের দোকানে আসছেন কম।
যশোর পুলিশ ক্লাবের কথিত মেলা সরকারের ১১ দফা বিধিনিষেধের আওতার বাইরে কি-না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ব্যবসায়ীরা।
বিভিন্ন ব্যবসায়ী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যেও এনিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। এনিয়ে ১৮ জানুয়ারি দৈনিক কল্যাণে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর পত্রিকা দপ্তরে ফোন করে অনেকে সন্তোষ প্রকাশ করেন। কেউ আবার মেলা বন্ধের দাবি করেছেন।
তাদের অনেকে প্রত্যাশা করেছিলেন-এবার মেলা বন্ধ হবে। কিন্তু তাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। উল্টো মেলার কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ী মহল। তাদের মতে, রেড জোন-এ জমে উঠেছে মেলা। ব্যবসায়ী নেতাদের অভিযোগ মাসে প্রায় কোটি টাকার লেনদেন হয়। বিভিন্ন সেক্টর প্রধানরা টাকার ভাগ পান। মিডিয়ার নেতারাও জড়িত অভিযোগ করে তারা বলেন একারণেই প্রশাসন মেলা ভাঙতে পারছে না।
এদিকে ১৯ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যশোরসহ দেশের আরও ১০ জেলাকে নতুন করে করোনা সংক্রমণের রেড জোন ঘোষণা করেছে। জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। কিন্তু যশোর পুলিশ ক্লাব কেনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না। রহস্যজনক কারণে প্রশাসনও চুপ রয়েছে। যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানান, বিষয়টি দেখছি।