আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ, কেশবপুর
যশোরের কেশবপুর উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা সুনীল মন্ডলের বিরুদ্ধে ভিজিএফ ও ভিডব্লিউবি’র চাল ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ উপজেলায় সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ২৯২.৮৬ মেট্রিকটন চালে বস্তায় প্রতি (৯৭৬২ বস্তা) এক কেজি করে কম দিয়েছেন। যা সরকারি মূল্য ৪ লাখ ২৯ হাজার ৫২৮ টাকা। এছাড়া তিনি বস্তাপ্রতি ১০ টাকা হারে মোট ৯৭ হাজার ৬২০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন অভিযোগ করা হয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সরকারের বরাদ্দকৃত চাল খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক উপজেলা খাদ্য গুদাম থেকে ৩০ কেজি ৩শ গ্রাম করে বস্তায় সরবরাহ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা সরকারের এ নির্দেশনা মানেন না। তিনি ভিডব্লিউবি কর্মসূচি থেকে বস্তায় ১ কেজি করে মোট ২ হাজার ৫৮৩ কেজি চাল কম দিয়ে যাচ্ছেন। যার সরকারি মূল্য ১ লাখ ১৩ হাজার ৬৫২ টাকা। অনুরূপভাবে ঈদুল ফিতরের বরাদ্দকৃত ভিজিএফ কর্মসূচির ২১৫ দশমিক ৩৭০ মেট্রিকটন চালের মধ্যে প্রতি বস্তায় ১ কেজি করে কম করে ৭ হাজার ১৭৯ কেজি চাল কম দিয়েছেন। যার সরকারি মূল্য ৩ লাখ ১৫ হাজার ৮৭১ টাকা। এছাড়া বস্তাপ্রতি ১০ টাকা হারে নিয়ে তিনি ৯ হাজার ৭৬২টি বস্তায় ৯৭ হাজার ৬২০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর অসচ্ছল নারীদের খাদ্য সহায়তা বাবদ তাদের তালিকাভূক্ত সুবিধাভোগীদের প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল বস্তায় সরবরাহ করে থাকে। ২০২৩-২০২৪ চক্রের সরকারের ভলনারেবল উইমেন বেনেফিট (ভিডব্লিউবি) কার্যক্রমের আওতায় দুঃস্থ মহিলাদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ১১টি ইউনিয়নে ২ হাজার ৫৮৩ টি কার্ডের অনুকুলে ৭৭ দশমিক ৪৯০ মেট্রিক টন ও খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপণা মন্ত্রণালয়ের মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ঈদ উৎসবে প্রতিটি কার্ডধারীকে ১০ কেজি হারে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ১৬ হাজার ৯১৬টি কার্ডের জন্যে ১৬৯ দশমিক ১৬০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। এছাড়াও পৌরসভায় ৪৬ দশমিক ২১০ মেট্রিক টনসহ মোট ২৯২ দশমিক ৮৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। গত ২২ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের আগে এসব চাল ১৯ হাজার ৪৯৯টি কার্ডধারী দুঃস্থ অসহায় পরিবারের মাঝে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বারদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে।
সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভালুকঘর গ্রামের মেম্বার জাকারিয়া বলেন, খাদ্য গুদাম থেকে সরবরাহকৃত প্রতি বস্তায় ২৮ থেকে ২৯ কেজির বেশি চাল পাওয়া যায় না। চাল কম দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে গুদাম কর্মকর্তা জানান, ৬ মাস আগে চাল ওজন দিয়ে বস্তাবন্দি করে রাখা হয়। যে কারণে একটু কম হতে পারে। কিন্তু সুফলভোগীরা সরকারি চাল কম নিতে চান না। এনিয়ে দুঃস্থ গরীব অসহায় মহিলাদের সাথে মাঝেমধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়।
পাঁজিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীন জানান, আমি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ভিডব্লিউবি ও ভিজিএফ’র চাল ওজনে কম পেয়ে আসছি। গত ২০ এপ্রিল চাল দেয়ার সময় বস্তা মেপে ১ থেকে দেড় কেজি চাল কম পাওয়া গেছে। এরপরও প্রতি বস্তায় ১০ টাকা করে দারোয়ানকে দিতে হয়।
সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুল ইসলাম মুক্ত বলেন, সাধারণত বস্তায় ৫শ’ গ্রামের বেশি চাল কম থাকে। আমাদের ওজন করে চাল বুঝে দেয়া হয় না। ৩০ কেজির বস্তা গুনে চাল দেয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা সুনীল মন্ডল বলেন, প্রত্যেক চেয়ারম্যান তার ইউনিয়নের জন্য বরাদ্দকৃত চাল বুঝে নিয়ে যান এরপর তারা চাল নদীতে ফেললো বা অন্য কোথাও দিলো তা আমাদের দেখার বিষয় নয়।