সালমান হাসান: দামে আগুনের হলকা। তাই আমিষ এখন গরীবের থলেতে উঠেছে না। গরু-খাসি কেনার সামর্থ হারিয়েছেন অনেক আগেই। স্বস্তার পোল্ট্রি কেনাও এখন দুঃসাধ্য। গরীবের আমিষ বলে খ্যাত পোল্টির কেজি এখন ২০০ টাকা। তবে পুরো আস্ত একটি পোল্ট্রি কিনলে দামের সাশ্রয় হলেও সে রকম সামর্থ সবার নেই। প্রাণীজের মত উদ্ভিদজাত আমিষ ডালের দামও চড়া। ফলে উচ্চদামে ক্রেতার নাস্তানাবুদ অবস্থা।
ক্রেতারা বলছেন, এক মাংশ কিনতেই পকেট হচ্ছে ফাঁকা। আলু, পেঁয়াজ, শাকসবজি কেনার টাকা থাকছেনা। ফলে পরিবারের আমিষের চাহিদা মেটাতে গিয়ে পড়তে হচ্ছে সংকটে। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য আমিষ কেনা রীতিমতন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।
বাজার ঘুরে জানা গেছে, আস্ত হিসেবে পুরো একটি পোল্ট্রি মুরগি কিনলে বাজার দর প্রতি কেজি ১৫০ টাকা। তাই গোটা একটি মুরগি কিনতে গেলে ৩০০ টাকার উপর খরচ হয়। বাজারে সচরাচর দুই কেজির কম ওজনের মুরগি পাওয়া যায় না। ফলে অনেকের পক্ষেই পুরো আস্ত একটি মুরগি কেনা সম্ভব হয় না।
বেলা তখন ১১টা। শুক্রবার হওয়ায় ভিড়ে উপচানো যশোর শহরের রেলবাজার। সকিনা বেগম নামে এক নারী কেটে বিক্রি করা পোল্টির দাম জানতে চাইলে দোকানি জানালেন একেক কেজি ২০০ টাকা। দাম শুনে ট্রেতে রাখা চামড়া ও মুরগির পায়ের দরদাম শুরু করলেন। ৫০ টাকা কেজি দরে ২ কেজি মুরগির পা ও চামড়া কিনলেন ওই নারী। আলাপচারিতায় জানালেন, একটি মেস বাড়িতে রান্নার কাজ করেন। স্বামী রিক্শা চালান। দু’জনের যা আয় তা দিয়ে বাসাভাড়াসহ দিনকার বাজার খরচ যোগানো কঠিন। তিনি বলেন-স্বল্প আয় দিয়ে দিনকার খায়-খরচা জোটানো কষ্টকর। চেয়েছিলাম কেটে বিক্রি করা পোল্ট্রির মাংশ কিনব। কিন্তু সম্ভব হলো না। ২০০ টাকা দিয়ে এক কেজি মাংশ কিনলে সাত সদস্যের পরিবারে এক বেলার বেশি চলবে না। এছাড়াও অন্যসব বাজার সদাই আছে।
যশোরের বাজারে আস্ত পোল্ট্রি মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। ১৩০ টাকার আস্ত পোল্ট্রির এক কেজির দাম ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। কেটে বিক্রি পোল্ট্রির দাম ১৭০ থেকে ২০০ টাকা ছুঁয়েছে। এছাড়া লেয়ার মুরগির দামও কেজিতে বেড়েছে ৬০ টাকা। ২৩০ টাকা কেজির লেয়ার মুরগি এখন ২৯০ টাকা কেজি। ২৮০ টাকা কেজি দরের প্যারেন্টস’র দাম ৩২০ টাকা। দেশি মুরগি দাম আকাশ ছোঁয়া। ৪৫০ থেকে বেড়ে কেজি দর ৫০০ টাকা।
মুদি দোকান শফিকুল স্টোর থেকে চাল-ডালসহ অন্যান্য সামগ্রী কিনছিলেন জামাল উদ্দিন। আলাপচারিতায় জানান, ভাড়ায় চালিত ইজিবাইক চালিয়ে জীবনধারণ করেন। তিনি বলেন, ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকবে গরীব মানুষ তার উপায় নেই। ৯০ টাকা কেজির মসুর ডালের দাম ১২০ টাকা। মুগ ডাল কেনার চিন্তাও করিনা। একেক কেজি মুগ ডাল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। মুরগি বিক্রেতা আব্দুস সালাম জানান, তারা মুরগি উৎপাদন করেন না। খামারিদের কাছ থেকে কিনে বিক্রি করেন। খামার মালিকরা বেশি দামে সরবরাহ করছেন। তাই দাম বাড়িয়েছেন।
খামার মালিকরা বলছেন, মুরগির খাবারের দাম অনেক বেড়ে গেছে। এছাড়াও ওষুধসহ অন্যান্য সামগ্রীর দামও চড়া। তাই তাদের বেশি দামে বাজারে মুরগি বিক্রি করতে হচ্ছে। মোহাম্মদ আসলাম নামে পোল্ট্রি মুরগির এক খামার মালিক জানান, খাবারের দাম প্রতি বস্তায় ১১০ টাকা বেড়েছে। ওষুষপত্রের দাম লাগাতার বাড়ছে। তাই আগের চেয়ে বেশি দামে মুরগি বিক্রি করতে হচ্ছে।