যশোরে ভুক্তভোগীরা আগের মতোই সমস্যা নিয়ে আসছে থানায়
নিজস্ব প্রতিবেদক
সারা দেশের মতো যশোরের নয়টি থানার অধীনে ঘরে বসেই অনলাইন জিডির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে প্রায় দুই সপ্তাহ আগে। ভুক্তভোগীদের ২৯টি আইনি সেবা পেতে জিডির মাধ্যমে পুলিশি সহযোগিতা দিতেই এই উদ্যোগ। কিন্তু এর সুফল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভুক্তভোগীরা অনলাইনে জিডি করতে গিয়ে পূর্বের মতই ভোগান্তি বা বিড়ম্বনায় পড়ছেন বলে জানিয়েছেন। স্মার্ট ফোনে অ্যাপস ছাড়া জিডি করা যাচ্ছে না। আর ওয়েবসাইটে লগইন করতে পড়তে হচ্ছে সমস্যায়। এছাড়া অনেকেই এর ব্যবহার জানেন না। যোগাযোগের জন্য যে নাম্বারটি দেয়া আছে সেটাও রিসিভ করা হয় না। ফলে কাজীর গরু কিতাবে থাকলেও গোয়ালে নেই অবস্থার মতো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৯ জুলাই রাত ১২ টা ১ মিনিটে সারা দেশের মতো জেলার নয়টি থানায় অনলাইন জিডির উদ্বোধন করেন পুলিশ সুপার রওনক জাহান। তবে এটা নতুন কিছু নয় বলে মনে করেন কোতোয়ালি থানার ওসি আবুল হাসনাত খান। তিনি বলেছেন, অনলাইন জিডির বিষয়টি রিনিউ করা হয়েছে।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে থানায় জিডি করতে গেলে নেয়া হতো না। বলা হতো অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগ কখনো তদন্ত হতো; আবার কখনো হতো না। ফলে ভুক্তভোগীরা আইনি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মামলার করার ক্ষেত্রেও একই ধরণের ঘটনা। কয়েক বছর ধরে কমিউনিটি পুলিশিং বা শান্তি কমিটি চালু হয়েছে। একই সাথে পৌরসভার মধ্যে প্রতি ওয়ার্ডে এবং এর বাইরে ইউনিয়ন পর্যায়ে একজন করে বিট অফিসার (পুলিশ অফিসার) যার যার এলাকার আইনশৃঙ্খলা দেখাশুনা করবেন। সংশ্লিষ্ট অফিসারের সাথে যাদের ভালো সম্পর্ক থাকে কেবলমাত্র তারাই আইনি সেবা পেয়ে থাকেন। ফলে সাধারণ মানুষের শুধুমাত্র হারানো জিডি ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে থানায় এসে জিডি করতে পারে না। এভাবে দীর্ঘদিন ধরেই জিডি করা থেকে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত ছিলেন সারাদেশের সাথেগত ১৯ জুলাই রাত ১২টা ১ মিনিটের সময় যশোরের পুলিশ সুপার রওনক জাহান অনলাইন জিডির উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনকালে বলা হয় বাড়িতে বসেই ২৯ বিষয়ে জিডি করতে পারবেন যশোরবাসী। কিন্তু সাধারণ মানুষ ঘরে বসে জিডি করতে গিয়ে পড়ছেন বিড়ম্বনায়। অনলাইনে জিডির ফরম পূরণ করে ‘সেন্ট’ (পাঠানো) করতে পারছেন না। আবার থানায় এলে জিডির স্থলে বলা হয় অভিযোগ দেন। থানার আশপাশে কয়েকজন রাইটার রয়েছে তারাও পুলিশের ভয়ে জিডি করতে পারে না।
এদিকে, উদ্বোধনের পরে কোতোয়ালি থানায় শহরতলীর জামরুলতলা এলাকার রহিমা বেগম (৫১) এসেছিলেন স্বামীর নির্যাতনের ব্যাপারে আইনি সেবা পেতে। এসময় অভিযোগ দিতে এলেও তাকে দিয়ে জিডি করানো হয়েছিল।
রহিমা বেগম বলেন, ‘অ্যাপসের মাধ্যমে জিডি করার বিষয়টা আগে জানতাম না। থানার এক ডিউটি অফিসারের সহযোগিতা নিয়ে নিজের মোবাইল থেকেই জিডি করতে পেরেছি। আগে জানলে থানা পর্যন্ত আসা লাগতো না।’
এই সেবা উদ্বোধনের পর যশোরের পুলিশ সুপার রওনক জাহান বলেন, পুলিশিসেবা দ্রুত ও সহজে জনগণের দ্বোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে অনলাইনে জিডি করার এই সুবিধা চালু করা হয়েছে। এর ফলে মানুষ ঘরে বসেই ২৯টি বিষয়ে জিডি করতে পারবে। মানুষের ভোগান্তি কমবে। পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা বাড়বে।
পুলিশ জানায়, এই সেবা নিতে গুগল প্লে-স্টোর থেকে অনলাইন জিডি অ্যাপস ডাউনলোড করে একবার রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এর মাধ্যমে জিডি করার অভিযোগকারী তার জিডির সর্বশেষ অবস্থাও জানতে পারবে। যাদের অ্যাপস ব্যবহারের সুযোগ নেই, তারা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে জিডি করতে পারবে। অ্যাপস ব্যবহারে কোন সমস্যা হলে ০১৩২০০০১৪২৮ নম্বরে ফোন করলে সমাধান পাওয়া যাবে, নম্বরটি ২৪ ঘণ্টা চালু থাকবে। কিন্তু ফোন দিলে রিসিভ হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রাইটার জানিয়েছেন, জিডি আগের মতই হচ্ছে। হারানো এবং মামলার ক্ষেত্রে দু’একটি জিডি হচ্ছে। তাও আবার ডিউটি অফিসারের অনুমতি সাপেক্ষে।
এই ব্যাপারে ফারজানা নামে এক নারী তার সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে জিডি করতে এসেছিলেন কোতোয়ালি থানায়। তবে তার কাছ থেকে জিডি নেয়া হয়নি অভিযোগ নেয়া হয়েছে।
জুলফিক্কার নামে এক ব্যক্তি ব্যাংকের চেক হারানোর জিডি করতে এসেছিলেন। তাকে বলা হয়েছে আগে ব্যাংক থেকে হারানোর ব্যাপারে প্রত্যায়ন আনতে হবে নইলে অভিযোগ দিতে হবে।
এব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ওসি আবুল হাসনাত খান বলেছেন, থানায় ভুক্তভোগীদের আইনি সেবা দিতে পুলিশ প্রস্তুত। তবে জিডির ব্যাপারে বলেছেন আগের মতই হচ্ছে। এটা মূলত রিনিউ হয়েছে বলা যায়।