শাহারুল ইসলাম ফারদিন
যশোরে সরকারি ছুটির দিনে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ উঠেছে। রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা মেলে না। ইন্টার্ন চিকিৎসক, নার্স ও আয়ার উপর ভরসা রোগীদের। এমন অভিযোগ উঠেছে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি, মেডিসিন, শিশু ও পেয়িং ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী ও স্বজনদের। চলতি মাসের ৬, ১৩, ২০, ২৭ জানুয়ারি শুক্রবার সরেজমিনে ঘুরে সত্যতাও পাওয়া গেছে।
হাসপাতাল সূত্র মতে, চলতি মাসের ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন দুই হাজার ১৩২জন রোগী। সুস্থ ও রেফার হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন দুই হাজার ২৪ জন। মারা গেছেন ১০৮ জন। এর মধ্যে শুধুমাত্র শুক্র ও শনিবার মারা গেছেন ৩১ জন।
সূত্র মতে, প্রতিদিন গড়ে ১শ’ থেকে দেড়শ রোগী ভর্তি হয় যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে। প্রতিদিন গড়ে ভর্তি থাকেন পাঁচশ থেকে সাড়ে পাঁচশ রোগী। তবে হাসপাতালে সরকারি ছুটির দিনে রোগীরা অসহায় হয়ে পড়েন। তখন ইন্টার্নি চিকিৎসকরা সেবা দেন। অনকলে ও রাউন্ডে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের থাকার কথা থাকলেও একাধিক রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ চিকিৎসকরা সরকারি ছুটির দিনে আসেন না।
হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের ৬ জানুয়ারি শুক্রবার হাসপাতালের সার্জারি বিভাগ ইউনিট-১ এর অনকল, সকাল ও সন্ধ্যাকালীন রাউন্ডে দায়িত্ব পালন করার কথা সহকারি রেজিস্টার ডা. মো. রায়হানুল ইসলাম ইমন ও সহকারী অধ্যাপক ডা. সাইদুর রহমানের, ১৩ জানুয়ারি শুক্রবার রেজিস্ট্রার ডা. খন্দকার মাশহুরুল হক ও সহকারী অধ্যাপক ডা. শরিফুল আলম খানের, ২০ জানুয়ারি শুক্রবার সহকারি রেজি ডা. রায়হানুল ইসলাম ইমন ও সহকারী অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলামের, ২৭ জানুয়ারি শুক্রবার রেজিস্ট্রার ডা. খন্দকার মাশহুরুল হক ও সহকারী অধ্যাপক ডা. সাইদুর রহমান অথবা ডা. রফিকুল ইসলামের। ৬ ও ২০ জানুয়ারি শুক্রবার সার্জারি বিভাগ ইউনিট-২ এর সকালের রাউন্ডে দায়িত্ব পালন করার কথা সহকারী অধ্যাপক ডা. আহাদ আলী মহলদার এবং ১৩ ও ২৭ জানুয়ারি শুক্রবার সিনিয়র কনসালটেন্ট আব্দুর রহিম মোড়লের দায়িত্ব ছিল। অনকল ও সন্ধ্যাকালীন রাউন্ডে দায়িত্ব পালন করার কথা সহকারি রেজিস্টার ডা. মো. ফিরোজ মাহমুদের।
আরও পড়ুন: যশোর আইটি পার্ক হচ্ছে রিসোর্ট!
একই ভাবে চলতি মাসের মেডিসিন বিভাগে রোস্টার অনকল, সকাল ও সন্ধ্যাকালিন রাউন্ডে সহকারী অধ্যাপক (নিউরোলজি) এসএম শফিকুর রহমান, জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডা. জাহাঙ্গীর হোসেন, ডা. মধুসুদন পাল, সহকারী অধ্যাপক (মেডিসিন) ডা. মঈনুল হক, ডা. দেবাশীষ দত্ত, ডা. গৌতম কুমার আচার্য্য, ডা. গৌতম কুমার ঘোষের। সকালে রাউন্ড দেয়ার কথা ছিলো ডা. খালিদ শামস, ডা. শাহেদ জামীল, ডা. উবায়দুল কাদির উজ্জল, ডা. সেলিম রেজা, ডা. আবু হায়দার, ডা. মো. মনিরুজ্জামান, ডা. মনিরুজ্জামান তুষার, ডা. হেমন্ত পোদ্দার, ডা. মোর্তজা মোর্শেদের। কিন্তু রোগী ও স্বজনদের দাবি ইন্টার্নি চিকিৎসক ছাড়া কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রাউন্ডে ছিলেন না।
হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি মণিরামপুরের বাহির গড়িয়া গ্রামের মাহফুজ আহমেদের বাবা হাশেম আলী বলেন, গত ২৫ জানুয়ারি বুধবার হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে ছেলেকে ভর্তি করি। বুধ ও বৃহস্পতিবার রাউন্ডে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আসলেও শক্রবার কোন বিশেসজ্ঞ চিকিৎসক আসেননি। একই অভিযোগ মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি সদরের পুলেরহাটের তৌহিদুল ইসলামের, শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি শহরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোড এলাকার ১৭ দিনের শিশু কন্যা তানজিলার মা তহমিনা বেগমের, সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি মহেশপুরের রেজাউল মন্ডলের ছেলে ইয়াছিন মন্ডলসহ বেশ কয়েকজন রোগী ও রোগীর স্বজনদের। তাদের দাবি, শুক্রবার বা সরকারি ছুটির দিনে হাসপাতালে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎক পাওয়া যায় না। রোগীর অবস্থা খারাপ হলেও শনিবার সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় বিশেষজ্ঞদের জন্য। শুক্রবার বিশেষজ্ঞ চিকিৎকদের দেখা মেলে বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে।
হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারি রেজিস্টার ডা. খালিদ শামস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শুক্রবার বা সরকারি ছুটির দিন রোস্টার ডিউটির দায়িত্বরত চিকিৎসকরা প্রতিটি রোগীকে দেখেন। এছাড়াও অনকালেও রোগীদের সেবা দিয়ে থাকেন বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান জানান, তথ্যটি সঠিক নয়। প্রতি শুক্রবার বা সরকারি ছুটির দিনে রোস্টার ডিউটি পালন করে থাকেন দায়িত্বরত চিকিৎসকগণ। গত শুক্রবারেও ডা. মধুসূদন পাল ও ডা. জুয়েলসহ দায়িত্বরত চিকিৎসকরা দুইবার করে রাউন্ডে ছিলেন।
আরও পড়ুন: যশোরের ব্যাংকগুলোতে ৩২ হাজার ৭৭০ কোটি টাকার নগদ লেনদেন