আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ, কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি: পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে ভবদহ প্রকল্পের যশোরের কেশবপুরে জলাবদ্ধতায় চলতি বছর ১৬ বিলের ৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ঘের মালিকরা ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে বিলের পানি নিষ্কাশনের শর্তে ঘের লিজ নিলেও পানি নিষ্কাশনের নামে তারা সময় ক্ষেপণ করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বীজতলা তৈরির সময় পার হয়ে গেলেও এখনও বিল সংলগ্ন এলাকার কৃষকরা পানি নিষ্কাশনে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বছরের একমাত্র ফসল বোরো আবাদ ও গো-খাদ্যের জোগান কি ভাবে হবে তানিয়ে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
কেশবপুর শহরসহ পূর্ব এলাকার পাঁজিয়া, সুফলাকাটি ও গৌরীঘোনা ইউনিয়নের বিলখুকশিয়া, গরালিয়া, টেপুর, বলধালী, বুড়–লি, ডহুরী, বাগডাঙ্গা, ভায়না বিলসহ ১৬ বিলের ৪ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমির মধ্যে গত বছর ২ হাজার ৬৮১ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছিল। বিলের চারপাশের প্রায় ১৫ হাজার কৃষক পরিবার বেঁচে থাকার জন্য ও গো-খাদ্যের জোগান মেটাতে বছরের একমাত্র ফসল বোরো আবাদ করে থাকেন। এক যুগ আগে ঘের মালিকরা পানি নিষ্কাশনসহ কৃষকদের বোরো আবাদের প্রলোভন দেখিয়ে বিলের চারপাশে বেঁড়ি বাধসহ ব্রিজ, কালর্ভাটের মুখ বন্ধ করে মাছ চাষ শুরু করেন। শুষ্ক মৌসুমে প্রশাসনের নীরবতার সুযোগে ঘের মালিকরা ভূগর্ভস্থ পানি তুলে বিল ভরাট করে মাছ চাষ শুরু করেন। ফলে বর্ষা মওসুমে যেনতেন বৃষ্টিতে মানুষের বসত বাড়ি তলিয়ে যায়।
গড়ভাঙ্গা গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান গাজী জানান, প্রতি বছর ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে বিলের পানি নিষ্কাশনের শর্ত থাকলেও পানি নিষ্কাশনের নামে ঘের মালিকরা সময় ক্ষেপণ করে। ডোঙ্গাঘাটা, হরিণাসহ আশপাশের বিলের পানি নিষ্কাশনে ঘের মালিকরা আসাননগর খাল পাড়ে শতাধিক স্যালো মেশিন দিয়ে ঘেরের পানি নিষ্কাশন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। কৃষকরা না থাকলে ঘের মালিকরা মেশিন বন্ধ করে দিচ্ছে। এ জন্যে তারা বাধ্য হয়ে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বলেন, চলতি বছর ১৫ হাজার ৪শ’ হেক্টর জমি বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে মাত্র ৯ হাজার হেক্টর জমি। গত বছর ভবদহ সংলগ্ন ১৬ বিলের ১ হাজার ৫৫৪ হেক্টর জমি পতিত ছিল। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় চলতি বছর প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমি পতিত থাকার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এরপরও মণিরামপুরের পূর্ব এলাকার বিলের পানি কেশবপুরের ২৭ বিল এলাকায় ফেলা হচ্ছে। যে কারণে দিন দিন পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির পর আর কৃষকরা ধান রোপণ করতে পারবেন না।
কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুন্সি আছাদুল্লাহ বলেন, ভবদহ সংলগ্ন ২৭ বিলের পানি কাটাখালির স্লুইস গেট হয়ে ডায়ের খালের ৮ ব্যান্ড স্লুইস গেট দিয়ে শ্রী নদীতে নিষ্কাশন হয়ে থাকে। কিন্তু শ্রী নদী পালিতে ভরাট হওয়ার কারণে পানি সরছে না। ভবদহ প্রকল্পে শ্রী নদী অন্তর্ভুক্ত আছে। ভবদহ প্রকল্প অনুমোদন না হলে এ সমস্যার সমাধান হবে না।