নিজস্ব প্রতিবেদক
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৩ আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত করেছে অন্তত ৭টি দল। এরমধ্যে ৫টি দল অর্থাৎ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, জাকের পার্টি ও এলডিপি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। আর বিএনপি, এনসিপিসহ ২টি দল প্রার্থী ঘোষণা না করলেও তাদের একক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি, এনসিপি থেকে একক প্রার্থী হওয়ায় বলা যায়, তারাই দলের প্রার্থী। দলীয় ঘোষণা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
সূত্র মতে, যশোর-৩ আসনটির অবস্থান জেলা সদরের হওয়ায় নির্বাচনী আলাপ-আলোচনা সবসময়ই তুঙ্গে থাকে। কোন দলের কে হচ্ছেন প্রার্থী হচ্ছেন তা নিয়ে সরব থাকে রাজনীতি। এছাড়া অতীতে এ আসনে প্রধান প্রধান দলের হেভিওয়েট প্রার্থীরা নির্বাচন করেছেন। পালন করেছেন দল ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। যশোরের রাজনীতির সেই খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব তরিকুল ইসলাম, খালেদুর রহমান টিটো ও আলী রেজা রাজু মারা গেছেন। কিন্তু নির্বাচনসহ বিভিন্ন সময় ঘুরেফিরে তাদের অবস্থান-সম্প্রীতি ও ভাবনা আলোচনায় স্থান পায়। খালেদুর রহমান টিটো ও আলী রেজা রাজুর সন্তানরা রাজনীতিতে সক্রিয় নেই। তবে পিতা সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ‘রাজনীতির হাল ধরেছেন’ ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। গত এক যুগ রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা অমিত রাজপথে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। দায়িত্ব পেয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকের। এজন্য নেতাকর্মীদের কাছে তিনিই এ আসনে চূড়ান্ত প্রার্থী। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে তাই অমিতের ছবি সম্বলিত ধানের শীষের বিলবোর্ডও শোভা পাচ্ছে। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সভা-সমাবেশ করে ভোটের আমেজ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। অমিতের সাথে এ কাজে সক্রিয় রয়েছেন বিএনপি, যুবদলসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
জানতে চাইলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, দীর্ঘ বছর রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার কারণে জনগণের সাথে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে। সভা, সমাবেশ, গণসংযোগ অব্যাহত রয়েছে। মানুষের স্বস্তি ও শান্তি নিশ্চিতে আমি মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গড়তে চাই। তিনি আরো বলেন, যশোরের রাজনীতিতে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্যরে চর্চা ছিল। ছিল রাজনৈতিক সহাবস্থান। সেটা ফিরিয়ে আনতে চাই। আর গত ১৯ বছর থমকে থাকা উন্নয়নের চাকা সচল করতে চাই।
এ আসনে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী ঘোষণা করেছে কয়েক মাস আগে। ভোট যেদিনই হোক প্রার্থী মনোনয়নের কাজ সেরে নিয়েছে দলটি। সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি আব্দুল কাদের যশোর সদরে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন। তিনিসহ সংগঠনের নেতাকর্মীরা পাড়া-মহল্লায় ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন সকাল-সন্ধ্যা।
জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী আব্দুল কাদের বলেন, দলের সিদ্ধান্তে প্রার্থী হয়েছি। তৃণমূলে সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছি। আমিসহ দলের নেতাকর্মীরা উঠান বৈঠক ও নারী সমাবেশে অংশ নিচ্ছি। এছাড়া আগে থেকেই ফেস্টুন, হ্যান্ডবিল ছাপানো হয়েছে। আমরা নারী ও পুরুষ পৃথক সমাবেশও করে চলেছি।
তিনি আরো বলেন, প্রার্থী হিসেবে আমি এখন পর্যন্ত কোন প্রতিবন্ধকতা পাইনি। তবে সাধারণ ভোটার যারা রাজনীতির সাথে নেই। তাদের ভোট কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করার খবর মিলছে।
হাতপাখা নিয়ে প্রচার-প্রচারণায় আছেন বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। দলটির পক্ষ থেকে যশোর-৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মাওলানা অধ্যক্ষ শোয়াইব হোসেনকে।
এ বিষয়ে দলের যশোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সরদার বলেন, গত দুই মাস আগে মাওলানা অধ্যক্ষ শোয়াইব হোসেনকে দলের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর থেকেই তাকে নিয়ে আমরা বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রামে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। পোস্টার, লিফলেট বিতরণ করছি। তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে এ কার্যক্রম আরো জোরদার হবে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ৮৪ জন প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে। যশোর-৩ আসনে দলটির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন খালেকুজ্জামান রিপন। তিনি এলডিপি যশোর জেলার সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, দলের মনোনয়ন পেয়েছি। দু-একদিনের মধ্যেই বিলবোর্ড দিবো। প্রস্তুতির কাজ চলছে। তবে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের মাধ্যমে কোন সিদ্ধান্ত হলে তখন ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।
এদিকে, যশোরের ৬টি সংসদীয় আসনেই দলের প্রার্থী ঘোষণা করেছে খেলাফত মজলিস। যশোর-৩ সদর আসনে দলটির প্রার্থী জেলা সভাপতি হাফেজ মাওলানা আব্দুল্লাহ। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা সংবাদ সম্মেলন করে ৬টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছি। তবে যশোর সদরে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু করিনি। এ মাসের শেষে কার্যক্রম শুরু করবো।
অন্যদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরবর্তী গড়ে উঠা রাজনৈতিক দল এনসিপির প্রার্থী হতে চান কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য খালিদ সাইফুল্লাহ জুয়েল। তিনি বলেন, আমি যশোর সদর আসনে একক প্রার্থী। আসন সমঝোতা হলে কিংবা জোটগত নির্বাচন হলে দলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ করতে হবে। তবে এখন নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচারণা করছি।
অপরদিকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জাকের পার্টিও। যশোর জেলা শাখার সভাপতি মহিদুল ইসলামকে সদর আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। তিনি বলেন, জেলার ৬টি আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতিটি সমাবেশে ব্যাপক লোকসমাগম হচ্ছে।
