নিজস্ব প্রতিবেদক, বেনাপোল
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখন সংকটাপন্ন। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে তৃণমূল পর্যন্ত গভীর উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। তবে ব্যতিক্রম শার্শা উপজেলা বিএনপির মধু-হাসান-লিটন ও তাদের কিছু অনুসারী। দলীয় প্রধানের সংকটময় সময়ে তারা মনোনয়ন পেতে নানা কূটকৌশলে ব্যস্ত। শুধু তাই নয়, দলের কর্মীদের শার্শা বলফিল্ডে জড়ো করে ধানের শীষের প্রার্থী বদলের স্লোগান দিতে বলেন। এক পর্যায়ে তাদের নির্দেশে যশোর-বেনাপোল সড়ক অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটা দলীয় বিষয়। বিএনপি চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিব কিংবা স্থায়ী কমিটির নেতাদের কাছে দাবি করলেই যথেষ্ট। মহাসড়ক অবরোধ করে জনদুর্ভোগ কাম্য নয়। এতে জনগণের মধ্যে খারাপ প্রতিক্রিয়া হয়। বিএনপির সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। এছাড়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা খালেদা জিয়াকে যখন চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেয়া নিয়ে চিন্তিত হাইকমান্ড; ঠিক সেদিনই মহাসড়ক অবরোধ, কর্মীজমায়েত করে হৈ-চৈ করে দলকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা বলে মনে করছেন কর্মীরা।
শার্শার ১১টি ইউনিয়ন ও বেনাপোল পৌরসভা নিয়ে যশোর-১ আসন। এখানে ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক দফতর সম্পাদক ও সাবেক এমপি মফিকুল হাসান তৃপ্তি। বঞ্চিত হয়েছেন শার্শা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খায়রুজ্জামান মধূ, বর্তমান সভাপতি আবুল হাসান জহির, সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটন। অতীতে তৃপ্তি, মধু, হাসান, লিটন একমঞ্চে উঠে সারা উপজেলায় কর্মসূচি পালন করেন। সব মিটিংয়েই বলেন, যেই মনোনয়ন পাবেন তার পক্ষেই থাকবেন বঞ্চিতরা। কিন্তু মনোনয়ন ঘোষণার পর অন্য তিনজন কথা রাখেননি। তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। আর সর্বশেষ শনিবার তিনজন এক হয়ে তাদের সমর্থকদের দিয়ে শার্শা বলফিল্ডে সমাবেশ ও কাফনের কাপড় পরে যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক অবরোধ করেন। শনিবার যেদিন এই কর্মসূচি হলো সেদিন বিএনপির জন্য খারাপ সময় বলছেন দলের কর্মীরাই। কারণ বর্তমানে দলের প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জীবন সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। বেগম জিয়ার এই কঠিন পরিস্থিতিতে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ঢাকামুখী হয়েছেন। একনজর দেখতে ছুটে গেছেন হাসপাতালে। যশোর-১ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন পাওয়া মফিকুল হাসান তৃপ্তি নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ রেখে শনিবারই গেছেন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে। তিনি হাসপাতালে গিয়ে খালেদা জিয়ার খোঁজ নেন এবং সুস্থতা কামনা করেন।
এদিকে, যশোরে অনুষ্ঠিত প্রয়াত তরিকুল ইসলাম স্মৃতি আন্তঃইউনিয়ন ফুটবল স্থগিত করা হয়েছে। বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও যশোর-৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। লিখেছেন, ‘বিএনপি চেয়ারপার্সন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া’র শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন বিবেচনায়, যশোর-৩ নির্বাচনী এলাকায় ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের সকল নির্বাচনী কার্যক্রম আপাততঃ স্থগিত করা হলো। সকলকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া’র সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনায় দোয়া অব্যাহত রাখতে বিনীত অনুরোধ করছি।’
বেনাপোল পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের ভারত ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লিখেছেন ‘তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতালে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে জীবনের জন্য লড়ছেন, যখন সারা বিশ্বের মানুষ তার জন্য প্রার্থনা করছে, তখন আমরা কী দেখতে পাচ্ছি? শার্শার মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত কিছু স্বার্থপর নেতা, আমাদের প্রিয় নেত্রীর জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার পরিবর্তে, কাফন পরে ব্যানার এবং ফেস্টুন দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে নিজেদের স্বার্থের জন্য মনোনয়নের জন্য প্রতিবাদ করছেন। তারা নিজেদেরকে আত্মত্যাগী নেতা হিসেবে চিত্রিত করতে চান। দলের একজন ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে, আমি আপনাদের কাছ থেকে একজন আত্মত্যাগী নেতার সংজ্ঞা জানতে চাই: ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া, বিপদের সময় দলের পাশে দাঁড়ানো, তারেক রহমানের নির্দেশ অনুসরণ করা বা তার নির্দেশ অমান্য করা, নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনার জন্য এগিয়ে যাওয়া, নাকি দলকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র করা।’
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রাথমিক মনোনয়নপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণার আগে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। সে সময় দলের সবার মুখে ঐক্যের সুরই ধ্বনিত হচ্ছিল। কিন্তু চলতি মাসের শুরুতে দলটি ২৩৭টি আসনের জন্য প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরপরই ঐক্যের সেই সুর বেসুর হয়ে গেছে।
প্রসঙ্গত, যশোরের মোট ৬টির মধ্যে গত ৩ নভেম্বর ৫টি আসনে প্রাথমিক মনোনয়নপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঘোষণার পর মনোনয়নের বিরোধিতা প্রথমে মিছিল-স্লোগানে সীমাবদ্ধ থাকলেও, পরে তা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি পাঠানো পর্যন্ত গড়িয়েছে। কোথাও মনোনয়নপ্রাপ্তদের পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে। এ নিয়ে যশোর জেলা বিএনপি বিভিন্ন আসনে মনোনয়ন বঞ্চিতদের নিয়ে বৈঠক করে। সেখানে দলের শৃঙ্খলা মেনে চলার নির্দেশ দেয়া হয়। এরআগে যশোরে তরিকুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণসভায় এসে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও একই বার্তা দেন। তিনি ধানের শীষের মনোনয়নপ্রাপ্তদের জয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে বলেন। কিন্তু এসব নির্দেশ মানতে দেখা যাচ্ছে না।
