আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ, কেশবপুর
বৈরী আবহাওয়ার শঙ্কায় আগেভাগেই বোরো ধান ঘরে তোলার উৎসবে মেতেছেন যশোরের কেশবপুরের কৃষকরা। তবে একই সময় সারা মাঠের ধান পেকে যাওয়ায় শ্রমিক সংকটে পড়েছেন তারা। এলাকাভেদে ৮শ’ টাকায়ও মিলছে না শ্রমিক। ধান ঘরে তুলতে কৃষাণ কৃষাণীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। ধান মাড়াই করে ঘরে তুলতে নারী শ্রমিকেরও কদর বেড়েছে। সরকারিভাবে ধানের বাজার মূল্য নির্ধারণ করা হলেও এখনো খাদ্য গুদাম ক্রয় শুরু করেনি। এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দরপতন ঘটালে কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়বেন।
কেশবপুরের প্রধান অর্থনীতি কৃষি। বছরে দু’তিন বার ধান উৎপাদন হলেও বোরো ধানের ফলন বেশি হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদন খরচও বেশি। সেচ, সার ও কীটনাশকের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। গেল আমন মৌসুমে কাক্সিক্ষত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এ উপজেলায় আগেভাগেই শুরু হয় বোরো আবাদ। তাই বৈশাখের শুরুতেই বোরো ধান কাটা, মাড়াই শুরু হয়েছে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে অনেকটা শঙ্কা নিয়ে দ্রুত ধান মাড়াইয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। বৈশাখে ঝড় ও শিলাবৃষ্টির ভয়ে বোরো ধান পূর্ণ পরিপক্ক হওয়ার আগেই কেউ কেউ ধান কাটা শুরু করেছেন। খুশি হলেও দাম নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। সরকারিভাবে প্রতিমণ ধানের মূল্য ১২০০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও স্থানীয় বাজারে ১ হাজার থেকে সাড়ে ১১ শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ধান।
নতুন মূলগ্রামের কৃষক আব্দুল করিম জানান, তাদের এলাকায় পুরোদমে ধান কাটা ও মাড়াই উৎসব শুরু হয়ে গেছে। তীব্র তাপদাহের মধ্যে আকাশের যে অবস্থা, প্রতিদিন মেঘ ডাকাডাকি করে। শিলাবৃষ্টি হলে একটি ধানও ঘরে তোলা যাবে না। তাই ধান পাকা শুরু হতেই কাটা শুরু করেছি। সমস্ত মাঠের ধান একসাথে পেকে যাওয়ায় শ্রমিক সংকটে রয়েছেন তারা। তিনি গত ১৮ এপ্রিল ২২ শতক জমির পাকা ধান কাটতে সাড়ে ৮শ’ টাকা করে শ্রমিক কিনেছেন।
সাতবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আকবর আলী জানান, সরকার সারের যে দাম বেধে দেয় সেই দামে তো আর সার পাওয়া যায় না। বাড়তি দামে কিনে বোরো চাষ করেছি। ফলন যা হয়েছে এতেই খুশি। বর্তমান বাজার দর থাকলে লোকসান হবে না। এখনও সরকারি গুদামে ধান ক্রয় অভিযান শুরু হয়নি। ধান মাড়াই খরচ যোগাতে কম দামেই ধান বিক্রি করতে হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ১৪ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। এর মধ্যে হাইব্রিড ৫ হাজার ২৫০ হেক্টর, ব্রিধান-২৮ এক হাজার ৪৫০ হেক্টর ও অবশিষ্ট জমিতে উফশী ধানের আবাদ করা হয়। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় প্রায় ২ লাখ মেট্রিকটন। বোরো ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হবে।
উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা সুনীল মন্ডল জানান, সরকারিভাবে ধানের কেজি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা। আগামী ৭ মে সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বলেন, কিছুটা বৈরি আবহাওয়ার মাঝেও বোরোর ফলন ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষক লাভবান হবেন। মাড়াই করার উপযুক্ত ধান মাঠে না রেখে দ্রুত ঘরে তোলার পরামর্শ দেন তিনি। ধানের বাজার দর ভালো থাকায় কৃষকরাও বেজায় খুশি।