সয়াবিন লিটার ও কেজি প্রতি ২০ টাকা বেড়েছে
বোতলজাত তেলের সরবরাহ বন্ধ
সালমান হাসান: উনুনে চাপানো কড়াইতে নয়। দামের তাপে টগবগিয়ে ফুটছে তেল। সরবরাহ কমের ভেল্কিবাজি অস্থিতিশীল করেছে যশোরের বাজার পরিস্থিতি। আগুন দামে বিক্রি হচ্ছে একেক লিটার ও কেজি প্রতি সয়াবিন তেল। সপ্তাহের ব্যবধানে বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম একলাফে ২০ টাকা বেড়েছে। ফলে তেলের এই উচ্চদামে দিশেহারা ক্রেতারা। বাজার জুড়ে গুঞ্জন উঠেছে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাড়ানো হয়েছে সয়াবিন তেলের দাম। ক্রেতাদের মত অনেক খুচরা বিক্রেতাদেরও এরকম অভিমত।
ক্রেতাদের ভাষ্য, সয়াবিন তেলের দাম একলাফে ২০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। একদম ইচ্ছামাফিক তাদের এই দাম বাড়ানো। সব রান্নায় তেল লাগে। এই নিত্যপণ্যটি ছাড়া একদিনও চলে না। আর এটি জেনেবুঝেই ক্রেতাদের জিম্মি করে চলছে এই অতিরিক্ত দাম আদায়।
তবে বিক্রেতাদের বক্তব্য অবশ্য অন্যরকম। তাদের দাবি, তেলের সরবরাহ এখন কম। পাইকাররা ঠিকমতন তেল সরবরাহ করছে না। এছাড়া যেটুকু সরবরাহ করছে তার দামও ব্যারেল প্রতি বেশি ধরছে। যার কারণে তেলের এমন দাম বৃদ্ধি। এদিকে, তেল কোম্পানির বিক্রয় কর্মীরাও বোতলজাত তেলের অর্ডার নিচ্ছে না। যার কারণে রিফাইন করা (পরিশোধিত) তেল তারা ক্রেতাদের সরবরাহ করতে পারছেন না। দোকানে যেগুলো অবশিষ্ট আছে সেগুলো আগের দামেই বিক্রি করছেন। এক টাকাও বাড়তি দাম নিচ্ছেন না।
সারা দেশের ভোক্তাদের স্বার্থে কাজ করে ও কথা বলে কনজ্যুমারস্ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সংগঠনটির যশোর শাখার সদস্য আব্দুর রকিব সরকার বলেন, সংশ্লিষ্টরা বলছেন তেলের পর্যাপ্ত মজুত আছে। কিন্তু তেলের দাম কোনভাবেই কমছে না। তিনি বলেন, তেল নিয়ে ব্যবসায়ীরা তেলেসমাতি করছেন। মজুত গড়ে তুলে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে।
যশোরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা গেছে, বিক্রেতারা ১৬০ কেজি দরের খোলা সয়াবিন তেলের দাম নিচ্ছেন ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন তেল এক লিটার ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। অথচ গেল সপ্তাহেও ১ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতলের দাম ছিলো ১৩৫ টাকা। ২ লিটারের বোতল ১৭০ টাকা। কিন্তু গতকাল শুক্রবার ২ লিটারের ১ বোতল সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। পামওয়েলের দামও কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে এক কেজি পামওয়েলের দাম ছিলো ১৫০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়।
যশোর শহরের মোল্লাপাড়ার জনি স্টোরের স্বত্ত্বাধীকারি রকিবুল আলম জানান, কোম্পানীগুলোর বিক্রয়কর্মীরা বোতলজাত সয়াবিন তেলের অর্ডার নিচ্ছে না। সপ্তাহখানেক ধরে বোতলজাত তেলের সরবরাহ একদম বন্ধ। তিনি জানান, বাজার থেকে আগের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে খোলা সয়াবিন তেল কিনতে হচ্ছে। তেলের বড় বড় কারবারিরা আগের চেয়ে বেশি দাম নিচ্ছেন। তাই বাধ্য হয়েই তাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
রেলবাজারে আলাপচারিতায় তৌহিদুল আজিম শামীম নামে এক ক্রেতা বলেন, তেল কিনতে গিয়ে এখন হিমশিম দশা। একেক কেজি তেলে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। বোতলজাত তেলের দাম লিটার প্রতি ২০ টাকা বেড়ে গেছে। এই ক্রেতার মত আরো অনেকে তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
যশোরের বিভিন্ন বাজার ও মুদি দোকান ঘুরে বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে রূপচাদা, ফ্রেশ, তীর, মুসকানসহ বেশ কয়েকটি ব্রান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ বন্ধ। এগুলোর বিক্রয়কর্মীরা নতুন করে অর্ডার নিচ্ছে না।
উপশহর বি-ব্লক বাজারের সুমন ভ্যারাইটি স্টোরের স্বত্বাধীকারী মোহাম্মদ সুমন জানান, বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ বন্ধ। বড় বাজারের যেখান থেকে বিক্রির জন্য খোলা সয়াবিন কিনে আনেন সেখানেও দাম বেশি। যার কারণে খোলা সয়াবিন তেল আগের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন।
চাচঁড়ার ভাতুড়িয়ার আতাউর স্টোরের স্বত্বাধীকারী আতাউর রহমান জানান, খোলা সয়াবিন তেলের দাম ব্যারেলে বেড়েছে ১০০০ টাকার ওপর। তিনি জানান, এক ব্যারেলে ১৮৫ কেজি তেল থাকে। বর্তমানে একেক ব্যারেল সয়াবিন তেল ৩৩০০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে এক কেজি সয়াবিন তেলের কেনা দাম পড়ছে ১৭০ টাকার ওপর। এছাড়া ব্যারেল বাদেও ‘লুজ’ হিসেবে বাজার থেকে কিনে বিক্রি করেন। এক্ষেত্রে কেনা দাম আরো অনেক বেশি পড়ছে। যার কারণে খুচরা তেলের দাম বেড়ে গেছে।
বেশি দামে সয়াবিন তেল বিক্রির ব্যাপারে পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের সহকারী উপপরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবিব বলেন, নিয়মিত বাজার তদারকি অভিযান চলছে। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ প্রমানীত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যশোরস্থ সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তার কার্যালয়ের মাঠ ও বাজার পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বেশি দামে বিক্রির জন্য অনেক বিক্রেতা বোতলজাত সয়াবিন তেলের লেভেল থেকে দাম ঘষে তুলে ফেলছেন। এসব অসাধু বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। গতকালও এই কাজের জন্য জরিমানা করা হয়েছে।