সালমান হাসান: কালচে পানির রঙ। ময়লা-আবর্জনা ভাসছে। পাড় বাধতে বসানো এক পাশের ব্লক ধসে পড়েছে দিঘির ভেতর। পায়ে হাঁটা পথেও ধরেছে ভাঙন। তিন পাড়ের হাঁটার রাস্তা দোকানপাটের দখলে। কার-মাইক্রোও পার্কিং করে রাখা হয়। দৃষ্টিনন্দনের বদলে যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্রের প্রাচীন জলাশয় লালদিঘি এখন ময়লার ভাগাড়। দিঘির পানিতে ও পাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ময়লার স্তুপ।
বছর দুয়েকের খুব বেশি হয়নি এই দিঘির পেছনে ব্যয় করা হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। দিঘির সংস্কার, পাড় বাধা, ওয়াকিংওয়ে, সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্টসহ আলী রেজা রাজু মঞ্চ নির্মাণে ওই অর্থ ব্যয় হয়। নাগরিকরা বলছেন, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সংস্কার ও দৃষ্টিনন্দনের সব ব্যয় বৃথা।
গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়)’র আওতায় লাল দিঘির তিন পাড়ে রোড-ড্রেন নির্মাণ হয়। সরকারি অর্থায়নে এই কাজে এক কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ৫৪৭ টাকা ব্যয় হয়। যৌথভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যশোর পৌরসভা ও এলজিইডি।
দিঘির পাড় বাধতে পশ্চিম পাশে বসানো ব্লকগুলো আগলা হয়ে গেছে। যেকোন সময় পাড়টি ধসে যেতে পারে। জেলা বিএনপি কার্যালয় সংলগ্ন এই পশ্চিম পাড়ের হাঁটার পথে ভাঙন ধরেছে। ভারি যানবাহনের চাপে হাঁটার পথে বসানো ক্রংক্রিটের ব্লক ভেঙে দেবে গেছে। এই অংশের হাঁটার পথে ‘ভাজাপোড়ার’ হোটেল বসিয়ে ব্যবসা চলছে। এখানকার বসার কংক্রিটের বেঞ্চটি হোটেলের খদ্দের বসার কাজে ব্যবহার হয়। এর ঠিক পাশেই আলী রেজা রাজু মঞ্চটির চারপাশ জুড়ে প্রশ্রাবের দুর্গন্ধ। অসচেতন নাগরিকদের কেউ কেউ স্থানটিকে এভাবে নোংরা করেছে। একই রকম অবস্থা বিএনপি অফিস সংলগ্ন নির্মাণাধীন পৌরসভা হ্যারিটেজ ভবনের পেছনের অংশ। দিঘি পাড়ের আলী রেজা রাজু মঞ্চটিও পরিচ্ছন্ন নয়। ধুলো ময়লার পুরু স্তর জমে আছে। মঞ্চের মেঝেতে তেল চিটচিটে ভাব।
দিঘির পূর্বপাড় পাড়ের একটি কোন ময়লার ভাগাড়। স্থানীয় বাসিন্দারা সেখানে ময়লা ফেলে স্তুপ করে রাখেন। মঞ্চের পাশের হাঁটার পথটিও চায়ের দোকানে দখল। পূর্বপাড়টি দখল করে রাখে কার-মাইক্রো ও মোটরসাইকেল। মন্দির সংলগ্ন রাস্তার বাঁকে বালু ফেলে রাখা হয়েছে। যেটি মোটরসাইকেল ও সাইকেল চালকদের জন্য হয়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ। পূর্ব দিকের এই পাশটিতেও গড়ে উঠেছে চায়ের দোকান। মোবাইল শোরুমগুলো প্রায়শই বড় আকৃতির ছাতা মেলে মোইবাইল ফোন বিকিকিনির পসরা সাজিয়ে বসে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দোকানপাট কার মাইক্রোর দখলে থাকায় দিঘির পাড় দিয়ে হাঁটা চলা যায় না। পাশের সড়কটি অনেক ব্যস্ততম। দিনভর রিকশা, ইজিবাইক, ভ্যানসহ বিভিন্ন যান চলাচলের বিরতি থাকে না। দিঘির পাড়ের হাঁটার রাস্তাটি তারা আগে ফুটপাত হিসেবে ব্যবহার করতেন। দখলের কারণে সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়ছেন।
জনউদ্যোগ যশোরের আহবায়ক প্রকৌশলী নাজির আহমেদ বলেন, লালদিঘির এখন বেওয়ারিশ একটা অবস্থা। এটির করুণ দশা দেখার কেউ নেই। দখলমুক্ত করে দিঘির চারপাশ উন্মুক্ত করা হয়েছিলো নাগরিক বিনোদনের জন্য। কিন্তু দিঘির চারপাশ আবারো দখল হয়ে গেছে। হাঁটাচলার জন্য যে পথ বানানো হয়েছিলে সেখানে দোকান বসানো হয়েছে। আলী রাজু মঞ্চটিরও যেরকম অবস্থা সেখানে কেউ বসে সময় কাটাবে সেই অবস্থা নেই। মার্কেট ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে পৌরসভাও দিঘির বেশ খানিকটা ভরাট করে ফেলেছে।
তিনি বলেন, দিঘির সংস্কার ও চারপাশের উন্নয়ন নাগরিক আন্দোলনের ফসল। কিন্তু সেটি এখন ভেস্তে গেছে। পরিস্থিতি এখন এমনই নতুন করে আবারো আন্দোলনে নামতে হবে।
যশোর বিভিন্ন নাগরিক আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত ওয়ার্কার্স পার্টির (মার্কসবাদী) জেলা সাধারণ সম্পদক জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, বিভিন্ন সময় পৌরসভা লালদিঘি ভরাটের উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু নাগরিকদের আন্দোলনের মুখে পিছু হটেছেন। পৌর মার্কেট নির্মাণ করতে গিয়ে ভবনের বেশ খানিকটা অংশ ইচ্ছাকৃতভাবে দিঘির মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বিভিন্নভাবে লালদিঘি ধ্বংসের চেষ্টা চলছে। যেটুকু সংস্কার হয়েছে সেটি রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।
এ ব্যাপারে যশোর পৌরসভার সচিব আজমল হোসেন জানান, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দিঘির পাড়ে ময়লা ফেলেন। পুরাতন পৌরসভা সংলগ্ন হরিজন পল্লীর বাসিন্দাদের ফেলা ময়লায় নোংরা হচ্ছে দিঘির পানি।
তিনি বলেন, যেহেতু লাল দিঘি পৌরসভার আওতাধীন। তাই সংস্কারের দায়িত্বও পৌরসভার ওপর বর্তায়। বিষয়টি খতিয়ে দেখে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।