নিজস্ব প্রতিবেদক
দুর্নীতির মামলায় যশোর বিজিবি’র তৎকালীন সুবেদার মেজর নজরুল ইসলামকে ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গত মঙ্গলবার যশোরের স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ সামছুল হক এই রায় দিয়েছেন। সাজাপ্রাপ্ত নজরুল ইসলাম যশোর ঝুমঝুপুর ২৬ বিজিবির সুবেদার মেজর।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, সাতক্ষীরার কামালনগর গ্রামের রফিকুল ইসলাম চামড়ার ব্যবসা করেন। ২০১৪ সালে ঈদুল আজহার বেশ কিছু চামড়া কিনে স্থানীয়ভাবে লবন মাখিয়ে প্রক্রিয়াজাত করেন রফিকুল ইসলাম। একই বছরের ১৪ অক্টোবর তিনি মোট ৪হাজার ৬৭৭ পিচ চামড়া ট্রাক ভাড়া করে নাটোরের একটি আড়তের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পথিমধ্যে যশোরের ঝিকরগাছায় একদল অপরিচিত লোক ট্রাক থামিয়ে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করায় তারা যশোর বিজিবিকে সংবাদ দেয়। বিজিবি’র সুবেদার মেজর নজরুল ইসলাম ফোর্সসহ চামড়া বোঝাই ট্রাকটি আটক করে যশোর ঝুমঝুমপুর বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে যান। ঝুমঝুমপুর বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাহাঙ্গীর হোসেনকে চামড়ার বৈধ কাজগপত্র দেখালেও তিনি এ চামড়া ভারতে যাচ্ছে বলে অভিযোগে করেন। পাশাপাশি তিনি সুবেদার মেজর নজরুল ইসলামের সাথে কথা বলতে বলেন। চামড়ার মালিক রফিকুল ইসলাম সুবেদার মেজর নজরুল ইসলামের সাথে কথা বলেন। কিন্তু নজরুল ইসলাম তার কাছে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। অনেক কষ্টে রফিকুল ইসলাম ওই রাতে ১ লাখ টাকা জোগাড় করে নজরুল ইসলামকে দিয়ে বাকি টাকা সকালে দিবেন বলে জানান। পরদিন সকালে রফিকুল ইসলাম বিজিবি ক্যাম্পে গিয়ে দেখেন চামড়া নিলামে বিক্রি করে ট্রাক ছেড়ে দিয়েছে। এসময় ঘুষের টাকা নিয়ে নিলামে চামড়া বিক্রির কারণ জানতে চাইলে আসামিরা তার নামে মামলা দিবে বলে হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। এই ঘটনায় রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ওই দুইজনের বিরুদ্ধে ১৭ নভেম্বর দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা করেন। জেলা ও দায়রা জজ অভিযোগটি গ্রহণ করে দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদেশ দেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের উপসহকারী পরিচালক সৌরভ দাস ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট সুবেদার মেজর নজরুল ইসলামকে অভিযুক্ত ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাহাঙ্গীর হোসেনের অব্যাহতির চেয়ে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন।
সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামি সুবেদার মেজর নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাকে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় ৫ বছর সশ্রম কারাদ- ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদ-ের আদেশ দিয়েছেন। রায় ঘোষণাকালে পলাতক থাকায় আসামি নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছেন বিচারক।
