একান্ত সাক্ষাৎকারে ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান
যশোর সদর উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নকে মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূল করে সামাজিক সম্প্রীতি বৃদ্ধির মাধমে মডেল ইউনিয়ন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ২য় বারের নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান। দৈনিক কল্যাণকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। সাক্ষাতকারটি গ্রহণ করেন পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক জেমস্ রহিম রানা ও মনিরুজ্জামান মনির।
৫ বছর নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে জনগণের পাশে থেকে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছেন তিনি। যার ফল হিসেবে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত এই চেয়ারম্যান দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া সত্বেও ইউনিয়নবাসী আবারও তাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছেন।
তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, ইউনিয়নের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতেই জনগণ আমাকে পুনরায় নির্বাচিত করে পরিষদে পাঠিয়েছেন। তাদের আশা আকাক্সক্ষা পুরণে নির্বাচনের আগে দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাবো।
প্রশ্ন : ইউনিয়নবাসীর জন্য আপনার প্রতিশ্রুতি কি ?
উত্তর : আমি বিগত দিনের ন্যায় স্বচ্ছতা নিয়ে কাজ করতে চাই এবং দৃশ্যমান উন্নয়নের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের অবকাঠামো উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে চাই। আমার স্বপ্ন ইউনিয়নবাসীর সহযোগিতায় মাদক নির্মূল, সন্ত্রাস দমন ও সকল ধরনের রাজনৈতিক কলহ মুক্ত করে ইউনিয়নে সামাজিক সম্প্রীতি গড়ে তোলা।
প্রশ্ন : ইউনিয়ন পরিচালনায় আপনার পরিকল্পনা কি ?
উত্তর : ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনায় আমার নানাবিধ পরিকল্পনা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পরিষদের সদস্যদের সাথে সমন্বয় করে ইউনিয়নের জনগণের চাহিদা মোতাবেক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া সরকারি নিয়মনিীতি পালন করে স্থানীয় মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গঠিত ১৩ টি স্ট্যান্ডিং কমিটির সমন্বয়ে পরিচালনা করতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাব।
প্রশ্ন : আপনার ইউনিয়নের প্রধান সমস্যা কি ?
উত্তর : দেয়াড়া অনেক আগে থেকেই একটি মডেল ইউনিয়ন হিসেবে পরিচিত। তারপরও এখানকার শতকরা ৬৫ভাগ মানুষ কৃষি নির্ভর। বর্তমানে ইউনিয়নের প্রধান সমস্যা মাদক এবং সামাজিক সম্প্রীতির অভাব। যে কারণে তাদের অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হচ্ছে। আমি এই পরিস্থিতি উত্তরণে বিগত দিনের ন্যায় মাদকাসক্তদের চিহ্নিত করে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে পুনর্বাসনের চেষ্টা করবো।
প্রশ্ন : বাল্যবিয়ে রোধে আপনার কোন পরিকল্পনা রয়েছে কি ?
উত্তর : আমাদের সমাজে বাল্য বিয়ে একটি সামাজিক সমস্যা। যা রোধ করা খুবই দুস্কর। তারপরও আমি আমার ইউনিয়নকে ১০০ ভাগ বাল্যবিয়ে মুক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এবং আগামী দিনেও তা অব্যাহত থাকবে।
প্রশ্ন : শিক্ষা সম্প্রসারণে আপনার পরিকল্পনা কি ?
উত্তর : শিক্ষা সম্প্রসারণে আমার নানাবিধ পরিকল্পনা রয়েছে। বিগত সময়েও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি সহায়তার পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে শিশুদের জন্য খেলাধুলা সামগ্রী এবং টিফিন বাটি দেয়া হয়েছে। দূরের শিক্ষার্থীদের জন্য বাইসাইকেল এবং গরিব মেধাবীদের বই কিনে দিয়েছি। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নে গেট নির্মাণ, চেয়ার বেঞ্চ তৈরিসহ ইলেক্ট্রিক ফ্যান কিনে দিয়েছি।
প্রশ্ন : সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য আপনার পরিকল্পনা কি ?
উত্তর : সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য আমার পরিকল্পনা হলো, এলাকার ভিজিডি, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবনধী ভাতার সমবন্টনসহ আরএমপি প্রকল্পের মাধ্যমে তাদেরকে স্বাবলম্বী করে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাবো।
প্রশ্ন : সামাজিক অবক্ষয় রোধে আপনার পরিকল্পনা কি ?
উত্তর : সামাজিক অবক্ষয় রোধে বিভিন্ন সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা এবং নৈতিক জ্ঞানের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করব ।
প্রশ্ন : ইউনিয়নবাসীর কাছে আপনার প্রত্যাশা কি ?
উত্তর : ইউনিয়ন বাসীর কাছে আমার প্রত্যাশা হলো সব ধরনের রাজনৈতিক কলহ থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে সরকারি নিয়ম কানুন মেনে চলাসহ সর্বস্তরের জনগনের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করা।
প্রশ্ন : ইউনিয়নবাসীর চিত্তবিনোদনের জন্য কোন পরিকল্পনা আছে কি ?
উত্তর : চিত্তবিনোদনের জন্য ইতোমধ্যে ইউনিয়নে স্বপ্নছোঁয়া ফিউচার পার্ক নামে একটি বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া ঐতিহ্যবাহী বুকভরা বাঁওড়কে দর্শক নন্দিত করে সেখানে একটি মিনি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রশ্ন : আইন শৃঙ্খলা রক্ষা, চোরাচালান দমন ও মাদক নিয়ন্ত্রণে আপনার ভূমিকা কি ?
উত্তর : আইন-শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর সমন্বয়ে বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে চোরাচালান দমন করা হবে এবং মাদক নিয়ন্ত্রণে ইউনিয়নে যে কার্যক্রম চলমান আছে তা অব্যাহত থাকবে।
প্রশ্ন : সরকারি গাছ চুরির প্রবণতা রোধসহ বৃক্ষ রোপণে কি ব্যবস্থা নেবেন ?
উত্তর : এ ইউনিয়নের কোথাও কোন গাছ চুরির ঘটনা ঘটে না বরং আমি নিজেই ১০ হাজার তালের চারা রোপণ করেছি। এছাড়া বাড়ির আঙিনা ভিত্তিক ৩০ হাজার ফলদ গাছের চারা রোপণ করেছি যা ধারাবাহিকভাবে আগামীতেও অব্যাহত থাকবে ।
প্রশ্ন : স্যানিটেশন ব্যবস্থা প্রসার ঘটানোর জন্য আপনার কোন চিন্তা আছে কি ?
উত্তর : স্যানিটেশন ব্যবস্থার প্রসার ঘটানোর চিন্তা অবশ্যই আমার আছে। বিগত দিনে ইউনিয়নের ফরিদপুর ও নতুনহাট বাজারে গণসৌচাগার করা হয়েছে এবং বাকি বাজার গুলোতেও এবার করে দেবো।
প্রশ্ন : জনযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিক কর্মসূচি নেবেন কি না ?
উত্তর : জনযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে অগ্রধিকার ভিত্তিক কর্মসূচি নেয়া হবে ইউনিয়নের নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে। তাদের সমন্বয়ে ইউনিয়নবাসীকে উন্নত সেবা প্রদানের মাধ্যমে মডেল ইউনিয়ন উপহার দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রশ্ন : মডেল ইউনিয়ন গড়তে আপনার ভিন্ন কোন পরিকল্পনা রয়েছে কি ?
উত্তর : দীর্ঘদিন আগে থেকেই দেয়াড়া ইউনিয়ন মডেল ইউনিয়ন হিসেবে চিহ্নিত আছে এবং এটা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করবো। এই ইউনিয়নে ইতোমধ্যেই ২টি আধুনিক সুপার মার্কেট গড়ে তোলা হয়েছে। যার একটি সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন সুপার মার্কেট এবং অপরটি শহিদুল ইসলাম পাহলোয়ান সুপার মার্কেট। এছাড়া ইউনিয়নের ৪ শতাধিক বয়স্ক ব্যক্তিকে চলাচলে সহযোগিতার জন্য লাঠি দেয়া হয়েছে। এ ধরনের উন্নয়নে কাজ অব্যাহত রেখে ইউনিয়নকে সত্যিকারের মডেল ইউনয়নে রূপান্তর করতে যা কিছু করতে হয় তা করবো।
এক নজরে দেয়াড়া ইউনিয়ন
১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত
আয়তন ৩৩ দশমিক ৫৩ বর্গ কিলোমিটার
জনসংখ্যা ৪৯ হাজার ৮০৭
পুরুষ ২৫ হাজার ৬৮৬
নারী ২৪ হাজার ১২১ জন
পরিবার ৮ হাজার ৩৩
জনসংখ্যার ৬৮ ভাগ কৃষি
ব্যবসায়ী ৭ ভাগ
চাকরিজীবী ৫ ভাগ
বেকার ১৩ ভাগ
শিক্ষার হার ৯৬ ভাগ
উপ-ডাকঘর ৪টি
গ্রাম ১৯
কাঁচা রাস্তা ৪২ কিলোমিটার
আধাপাঁকা ২৫ কিলোমিটার
পাকা রাস্তা ১২ কিলোমিটার
স্যানিটারি সুবিধা ১০০ ভাগ
টিউবওয়েল রয়েছে ৯হাজার ৩৬টি
গভীর নলকুপ একটি
স্বাস্থ্য কেন্দ্র ৬টি
কমিউনিটি ক্লিনিক ৫টি
ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র্র ১টি
বীর মুক্তিযোদ্ধা ৬২ জন
প্রাথমিক বিদ্যালয় ২১টি
মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪ টি
কলেজ ২ টি
মাদ্রাসা ৪ টি
এতিমখানা ৩টি
হাটবাজার ৮ টি
ভূমি অফিস
বাঁওড় একটি
মসজিদ ৩১ টি
মন্দির ৮টি