আছিয়া খাতুন ঝিনুক, বটিয়াঘাটা: নদীতে স্রোত বইছে, সঙ্গে বাতাস। চরে ধীরে ধীরে বাড়ছে পানি। এর সঙ্গে মাটি আঁকড়ে ধরে থাকা ১০০ প্লাস্টিকের ড্রাম ভেসে উঠছে। আর ড্রামের ওপর গড়ে তোলা সুসজ্জিত ১০ কক্ষবিশিষ্ট একটি রেস্টুরেন্টও ভেসে উঠছে পানির ওপর। মাঝেমধ্যে বাতাস বইলে বা নদীতে জলযান গেলে সৃষ্ট ঢেউয়ে দোল খাচ্ছে।
এমনই এক মনোরম ও চোখ জুড়ানো দৃশ্যের দেখা মিলেছে খুলনার বটিয়াঘাটার শোলমারী সেতুর নিচে কাজীবাছা নদীতে। সম্প্রতি এই নদীতে চালু করা হয়েছে ভাসমান একটি রেস্টুরেন্ট। প্লাস্টিকের ড্রাম, কাঠ, টিন ও লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই রেস্টুরেন্ট। দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, নামটিও চমৎকার। নজরকাড়া এই রেস্টুরেন্টের নাম দেয়া হয়েছে ‘মেঘবিন্দু ভাসমান রেস্টুরেন্ট’।
দৃষ্টিনন্দন এই ভাসমান রেস্টুরেন্ট দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছে মানুষ। বন্ধুবান্ধব, পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন, শিশু-কিশোরসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ একনজর দেখতে ও ক্যামেরাবন্দী করতে শোলমারী সেতুর ওপরে ও নিচে ভিড় জমাচ্ছে। পাশাপাশি ভাসমান এই রেস্টুরেন্টে বসে আড্ডা জমাচ্ছে। কিনছে পছন্দের খাবার ও পানীয়। বেশির ভাগ তরুণ-তরুণীরা এখানে আসছেন।
বটিয়াঘাটায় কাজীবাছা নদীতে ১৫ এপ্রিল মেঘবিন্দু ভাসমান রেস্টুরেন্টটি চালু করা হয়। বর্তমানে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে রেস্টুরেন্টটি। ১০০টি প্লাস্টিকের ড্রামের ওপর ১০টি কক্ষ তৈরি করা হয়েছে। পানির স্রোতে ড্রামের ভারসাম্য রক্ষায় ব্যবহার করা হয়েছে লোহার অ্যাঙ্গেল। হেঁটে যাওয়ার জন্য অ্যাঙ্গেলের ওপর কাঠের মাচা তৈরি করা হয়েছে। টিনের ছাউনি দেয়া হয়েছে। প্রতি কক্ষে ছয়জন করে ১০টি রুমে একসঙ্গে ৬০ জন বসার ব্যবস্থা রয়েছে ভাসমান এই রেস্টুরেন্টে।
বটিয়াঘাটার জলমার এলাকার বাসিন্দা মেঘনাথ সরকার ও তার কাকাত ভাই শিবেন্দু কবিরাজ এই রেস্টুরেন্টটি পরিচালনা করছেন। তারা দুজনই মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। লেখাপড়ার পাশাপাশি আয় করার উদ্দেশে এই রেস্টুরেন্ট চালু করেছেন।
রেস্টুরেন্টটি খোলার পর আস্তে আস্তে মানুষ আসা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ ঘুরে দেখছে, সেলফি তুলছে। কেউ সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে। আবার অনেকে রেস্টুরেন্টে বসে চা-কফি, পানীয় ও ফাস্টফুড খাচ্ছেন। মাঝেমধ্যে বাতাস বইছে আর নদীতে জলযান গেলে সৃষ্ট ঢেউয়ে দোল খাচ্ছে রেস্টুরেন্ট। মনোমুগ্ধকর এক পরিবেশ সেখানে। মানুষের নজর কাড়তেই ভাসমান এই রেস্টুরেন্ট গড়ে তোলা হয়েছে।
ভাসমান রেস্টুরেন্ট মালিক মেঘনাথ সরকার বলেন, গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে রেস্টুরেন্ট তৈরির কাজ শুরু হয়। বৈশাখের শুরুতেই রেস্টুরেন্টটি চালু করা হয়। এতে ব্যবহার করা হয়েছে ১০০টি প্লাস্টিকের ড্রাম। এটি তৈরিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৯ লাখ টাকা। এখানে ১০টি ঘর করা হয়েছে। আরও চারটি ঘর করার ইচ্ছা রয়েছে। ১৪টি ঘর হলে রেস্টুরেন্টটি পূর্ণতা পাবে।
মেঘনাথ সরকার বলেন, ইউনিক আইডিয়ার ধারাবাহিকতায় রেস্টুরেন্টটি করা। যশোরে ভাসমান সেতু দেখে ভাসমান রেস্টুরেন্ট করার পরিকল্পনা মাথায় আসে। সে অনুযায়ী এই রেস্টুরেন্ট তৈরি করা হয়েছে। এটি মানুষের নজর কেড়েছে। রেস্টুরেন্টটি নদীর চরে করা হয়েছে। জোয়ারের সময় এটি পানির ওপর ভেসে থাকে। আবার ভাটার সময় নেমে যায়।
ছোট পরিসরে হলেও রেস্টুরেন্টটি ‘ইউনিক’। খুলনা বিভাগে এ ধরনের কোনো রেস্টুরেন্ট নেই। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এখানে আসছে, জানান তিনি।
ক্রেতার আগমন দেখলে মনে হয় না যে মাত্র কয়েক দিন শুরু করেছি। মনে হয় বছর গড়িয়েছে। সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রেস্টুরেন্টটি খোলা রাখি। বিকেল ৪টার পর থেকে রেস্টুরেন্টে কাস্টমারের সংখ্যা বেড়ে যায়। নদীর একটি ত্রিমোহনা আছে,পাশেই সেতু। সেতু ওপর থেকে দেখতে ভালো লাগবে, এ জন্যই এখানে করা। পণ্যের দাম সামঞ্জস্য রেখেছি, যে কারণে সব শ্রেণির ক্রেতা আসছে। পানীয়, চা, চার ধরনের কফি, কিছু চায়নিজ আইটেম বিক্রি শুরু করেছি। ঈদে সব ধরনের চায়নিজ আইটেম দিতে পারব বলে আশা করছি।