শিক্ষিত লোকের সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা বেশি কারণ সমাজ বা রাষ্ট্রই তাদের শিক্ষিত করেছে। বিনিময়ে তারা কিছু চায়। সমস্যা হচ্ছে এখন শিক্ষিত লোকদের গৃহপালিত পশু বানিয়ে অশিক্ষিতরা চরিয়ে নিয়ে বেড়ায়।
সফিয়ার রহমান: আমাদের রাস্তাটা সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন চলাচলের অযোগ্য। বর্ষাকাল চলে আসায় ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। মুরাদ চাচা তার লুঙ্গি হাঁটুর ওপরে তুলে রাস্তার পাশে ঘাসের পরে পা দিয়ে দিয়ে পথ চলছেন। বুড়ো বয়সে পিছলে গেলে মাজা ভাঙবে। পথিমধ্যে আমাকে পেয়ে বললেন, ‘বাবারে তুমি এলাকার মধ্যে একজন শিক্ষিত ছেলে,আবার শুনেছি কী সব নাকি লেখালেখি কর। নেতাদের ধরে একটু চেষ্টা করদিন বাপু, বুড়ো বয়সে যাতে আরামে চলতি পারি।
মুরাদ চাচার কথা মাথা থেকে মুছে ফেলতে পারছিনে। শিক্ষিত লোকের সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা বেশি কারণ সমাজ বা রাষ্ট্রই তাদের শিক্ষিত করেছে। বিনিময়ে তারা কিছু চায়। সমস্যা হচ্ছে এখন শিক্ষিত লোকদের গৃহপালিত পশু বানিয়ে অশিক্ষিতরা চরিয়ে নিয়ে বেড়ায়। যাহোক কালই বর্তমান ক্ষমতাসীন বাঘা নেতা মেল্লেক গাজীর কাছে যাবো। রাস্তার একটা ব্যবস্থা করতে হবে।
নেতার সামনে কাতারে কাতারে লোক বসে আছে। ঘরে ডুকতেই নেতা হাতের ইশারায় বসতে বললেন। পেছনের চেয়ারে বসে আছি। ঘন্টার পর ঘন্টা পার হচ্ছে,কথা বলার সুযোগ হচ্ছে না। দলে দলে কর্মীরা আসছে নেতার সাথে চোখ, হাতের ইশারায় কী সব কথা হচ্ছে আবার চলে যাচ্ছে। নেতা কর্মীদের দেখলে আগে আমজনতার মনে আশা জাগতো, এখন যুগ বদলেছে, দেখলে ভয় করে। অধৈর্য হয়ে নেতার সামনে গেলাম। নেতা মুখ তুললেন। রাস্তার কথা বলব,এমন সময় আমার প্রবাসি এক ছাত্র অনেক উপহার নেতার জন্য নিয়ে হাজির। নেতা চেয়ার ছেড়ে বুকে বুক মেলালের। কুশল বিনিময় হল। অনেক দামি দামি উপহার দেখলাম। ছাত্র আমাকে সম্মান দেখিয়ে বলল, স্যারের কথা শেষ করেন তারপর কথা বলছি।আমার কথা বলতেই নেতা একগাল হেসে বললেন, আপনার এলাকার লোক দল করবে অন্য, আমার কাছে এসে রাস্তা চাইলে তো হবে না মাস্টের মশাই। দেখি কী করা যায়, আমার মাথায় থাকলো। জেলা সদরে দলের জরুরি মিটিং আছে এখনি বের হতে হবে।
নেতার বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তা ধরে হাঁটছি, ছাত্রও বের হয়ে এসে আমার সাথে যোগ দিল। হাঁটতে হাঁটতে ছাত্র বলল, স্যার আপনি নিয়মিত ফেজবুক চালান, আমরা বাঙালি প্রবাসিরা আপনার ছাত্র হয়েও ফেজবুক বন্ধু হতে পেরে ধন্য। আমাদের সংস্কৃতি নিয়ে হাস্যরসের মধ্য দিয়ে চমৎকার উপস্থাপন করেন। সুন্দর সুন্দর প্রাকৃতিক ছবি দেন। আপনার সব কিছুই শিক্ষনীয় অথচ কত মজার। সারাদিন হাঁড় ভাঙা খাটুনির পর আপনার যা কিছু পাই আনন্দে বুক ভরে ওঠে। বাংলা মায়ের ছবিগুলো বাঙালিরা যখন একত্রিত হই, তখন আপনার কথা ওঠে। দোয়া করি দীর্ঘদিন বেঁচে থাকুন আমাদের জন্য।
থানার মোড়ে এসে জোর করে চায়ের দোকানে নিয়ে গেল। দু’ টো পুরি এককাপ লাল চা খাওয়ালো। বিদায় নেয়ার সময় ফিস ফিস করে বলল, স্যার আপনাদের দোয়ায় লেখাপড়ায় বেশি দূর অগ্রসর হতে না পারলেও বিদেশ গিয়ে অনেক ধন সম্পদের মালিক হয়েছি। এ সম্পাদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এ জাতীয় নেতাদের মন জুগিয়ে হাত করতে হয়।
বাড়ি ফিরে কেন জানি আমার মনটা খারাপ লাগছে। ভাগ্নি পলি কাছে এসে জানতে চাইল, মামা কোন সমস্যা হচ্ছে?
বললাম, বিদেশ থাকা এক ছাত্রের সাথে দেখা হওয়ার পর মনটা খারাপ হয়ে গেলরে। সারাদিন কত পরিশ্রম করে মজার মজার কথা লিখি। দেশের আদি সংস্কৃতির ছবি সংগ্রহ করে পয়সা খরচ করে ফেজবুকে দেই। বিদেশি ফেজবুক বন্ধুরা মজা পেয়ে নাকি কাজের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। ওরা যখন দেশে আসে দামি দামি উপহার বাক্স ভরে নিয়ে আসে। কত জনে তা পায়। নেতা বা সন্ত্রাসীরাও পায়। আমার সাথে পথে ঘাটে যদি দেখা হয়, তবে পাওনা হয় এককাপ লাল চা।
ছি! ছি! মামা তুমি লোভি হয়ে যাচ্ছ। ওই উপহারের পেছনে একটা স্বার্থ আছে। তোমাকে নিঃস্বার্থভাবে এককাপ চা দিয়েছে। এর থেকে বড় পাওয়া আর কিছুতে কি আছে?