শাহরিয়ার অপু: ফকির লালন শাহর একটি গান ‘একটা নারকেলের মালা তাতে জল তোলা ফেলা করঙ্গ সে’ এ থেকে বোঝা যায় লালন ভক্ত এবং বাউলদের নারিকেলের মালা একটা প্রিয় বস্তু। এর ব্যতিক্রম নয় পরিতোষ বাউল। কিন্তু কে বা জানতো মনের খেলার সাথে সাথে এই নারকেলের মালাই একদিন তার জীবিকা হয়ে দাঁড়াবে। যশোরের শিল্পী পরিতোষ বাউল যার করোনাপূর্ব নেশা ও পেশা ছিল বিভিন্ন স্থানে গান গাওয়ার পাশাপাশি তিনি নরসুন্দরের কাজ।
কিন্তু করোনাকালে বন্ধ হয়ে যায় সব কাজ। আর তার পর থেকে নারিকেলের মালা দিয়ে তৈরি করছেন দৃষ্টিনন্দন চায়ের কাপ, পানপাত্র, বাটি, সাধুবাটি, কলমদানি, ফুলদানি, ছাইদানি, আইসক্রিম খাওয়ার চামচসহ বিভিন্ন সামগ্রি। প্রথাগত প্রশিক্ষণ না থাকলেও শিল্পীসত্তার সৃষ্টিশীলতায় তৈরি করছেন সব কিছু।
নিজের বাড়িতে ছোট একটি চিলেকোটায় বসে নারকেলের মালা দিয়ে তৈরি করেন দৃষ্টিনন্দন ঘরের শোভাবর্ধনকারী তৈজষপত্রসহ বাউল গানের বাদ্যযন্ত্র। ছোট করাত, ছুরি, বাটালি, সিরিশ কাগজ নিয়ে নারিকেলের মালা মসৃণ করেন তিনি।
তিনি জানান, এমনো হয়েছে রাতে কাজ করতে করতে কখন ভোর হয়ে যায় টেরই পাই না। পরিতোষ বাউলের হাতে তৈরি নারকেলের মালার ঘর সাজানোর বিভিন্ন সামগ্রী ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি করেন তিনি।
পরিতোষ বাউল বলেন, আমি এই কাজটা শিখেছি আমার গুরু ফকির আকবর সাইজির কাছ থেকে। দীর্ঘ বিশ বছর আমি তার সান্নিধ্যে ছিলাম। তিনি এই মালা কেটে বাউলী বাসন তৈরি করতেন। সেখান থেকে এই মালার প্রতি একটি আগ্রহ ভালোবাসা তৈরি হয়। কিন্তু একটা পাত্র তৈরি করতে অনেক বেশি সময় লাগে। স্থানীয় বাজার থেকেই শুকনো ও দোমালা নারিকেল কিনে আনি। তাছাড়া অনেক আগে থেকে নারিকেলের মালা সংগ্রহ করে রাখতাম পরে মালার আকার বুঝে এসব সামগ্রী তৈরি করি। প্রতিটা চালান উঠাতে ৩ থেকে ৪ মাস সময় লেগে যায়। এটা অনেক ব্যয়বহুল কাজ, অর্থের অভাবে বড় করে এ ব্যবসা করতে পারছিনা। এসব পণ্য তৈরিতে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরো ভালোভাবে এ কাজ করতে পারতাম।