নিজস্ব প্রতিবেদক
পাওনা টাকা আনতে গিয়ে নিখোঁজের এক মাস পর অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক ময়মুর হোসেনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে যশোর সদরের বালিয়াডাঙ্গায় যশোর-মাগুরা মহাসড়কের পাশে একটি ডোবার মধ্যে থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর পাওনা টাকা আনতে যান হাসান আলী বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তির কাছে।
নিহত ময়মুর হোসেন মণিরামপুর উপজেলার আমিনপুর গ্রামের কামাল উদ্দিন সরদারের ছেলে। তিনি যশোর শহরের বকচর প্রাইমারি স্কুল এলাকার মিজানুর রহমানের বাড়ির ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতেন।
ময়মুর হোসেনের স্ত্রী শিরিনা খাতুন জানিয়েছেন, খাজুরা এলাকার হাসান আলী বিশ্বাসের সাথে আগে থেকে তার (ময়মুর) পরিচয় ছিল। শিক্ষকতার চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পরে ময়মুর হোসেনকে বেশি বেতনে একটি চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখায় হাসান আলী। আর ওই চাকরি দিতে ২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা নেন হাসান আলী। কিন্তু চাকরি দিতে ব্যর্থ হয়ে দীর্ঘদিন ঘোরাতে থাকে। ২০২১ সালের ১০ মে ওই টাকার বিপরীতে হাসান আলী রূপালী ব্যাংক খাজুরা শাখার একটি চেক দেন ময়মুর হোসেনকে। এরপরও পাওনা টাকা না দেয়ায় হাসান আলীকে চাপ দিতে থাকেন ময়মুর হোসেন। সে কারণে গত ১০ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার দিকে হাসান আলীর ব্যবহৃত ০১৯২৫-২৮৫৬৫৬ নম্বর থেকে ময়মুর হোসেনের ব্যবহৃত ০১৯১৭৯৩৯৩৭৭ নম্বরে কল করে পাওনা টাকা আনার জন্য খাজুরা বাজারে যেতে বলে। পরদিন ১১ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টার দিকে ময়মুর হোসেন সেই টাকা আনতে হাসান আলীর বাড়িতে যান। অন্য লোকের ব্যবহৃত ০১৪০১৩৮২৮৮৫ নম্বর থেকে স্ত্রী শিরিনার মোবাইলে কল করে জানান তিনি হাসান আলীর বাড়িতে পৌছে গেছেন। আবার একই নম্বর থেকে রাত ৯টা ৪৯ মিনিটের দিকেও স্ত্রীর সাথে তার মোবাইলে শেষ বারের মত কথা কথা হয়। এরপর থেকে ময়মুর হোসেনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। বিভিন্নস্থানে খোঁজখবর নিয়ে কোন সন্ধান না পেয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর তার স্ত্রী শিরিনা খাতুন কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করেন। জিডি করার পরও গত এক মাসে পুলিশ তার কোন সন্ধান পায়নি।
গতকাল মঙ্গলবার পাঁচবাড়িয়া-বালিয়াডাঙ্গার মাঝামাঝি একটি ডোবার মধ্যে মাছ ধরতে যায় কয়েকজন। এসময় ডোবার মধ্যে থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে এবং আশপাশে খোঁজখবর নিয়ে দেখেন একটি লাশ পড়ে আছে। পরে খবর পেয়ে থানা, ডিবি ও পিবিআই পুলিশ সেখানে হাজির হয়। একই সাথে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক-সার্কেল জুয়েল ইমরানসহ কয়েকজন কর্মকর্তা গিয়েছিলেন।
লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ ময়না তদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে।
নিহতের পরিবারের দাবি হাসান আলী বিশ্বাস পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ময়মুর হোসেনকে পাওনা টাকা দেয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে হত্যার পরে লাশটি গুম করে রেখেছিল।
এই ব্যাপারে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোন অভিযোগ বা এজাহার দেয়নি। পাশাপাশি এই হত্যাকা-ে অভিযুক্তদের সনাক্ত ও আটকের জন্য চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক-সার্কেল জুয়েল ইমরান জানিয়েছেন, এই ঘটনায় অভিযুক্ত হাসান আলীকে এর আগে থানা এবং পিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। কিন্তু তার কাছ থেকে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।