ঢাকা অফিস
বাংলাদেশে নির্বাচন দলীয় সরকার না তত্ত্বাবধায়কের অধীনে হবে, প্রধান দুই দলের এই বিরোধের জায়গায় নিজেকে জড়াতে রাজি নন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছেন, ‘এটা রাজনৈতিক দলগুলোর বিষয়। আমাদের আগ্রহ শুধু সহিংসতামুক্ত, অবাধ, সুষ্ঠু, নির্বাচন।’
নির্বাচন সামনে রেখে অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে মত বিনিময় করেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত। পরে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে প্রধান দুই দলের রাজনৈতিক বিরোধের প্রসঙ্গ আসে।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ২০১৪ সালের ভোট বর্জন করা বিএনপি ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিলেও ভোট চুরির অভিযোগ তুলে আবারও পুরনো দাবিতে ফিরে গেছে। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে তারা।
অন্যদিকে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ বলে আসছে, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকতেই নির্বাচন হবে। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফেরানোর কোনো সুযোগ আর নেই। এই বিরোধে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সক্রিয় হয়েছে গত কিছুদিন ধরে। এর অংশ হিসেবে গত সপ্তাহে নির্বাচন কমিশনে গিয়েও বৈঠক করেন পিটার হাস।
বৃহস্পতিবার সকালে তিনি ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গেলে দলের সাধারণ সম্পাদক, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছ জানান। পরে সেখানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহম্মেদ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।
মতবিনিময় শেষে পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেন, “আওয়ামী লীগের সঙ্গে এ বৈঠক, বাংলাদেশে সব দলের সঙ্গে যে সিরিজ বৈঠক করেছি তারই অংশ। আমি অন্য রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ, পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় করেছি, এটা আমি করেছি আমেরিকান রাষ্ট্রদূত হিসেবে।
‘প্রতিটি মিটিংয়ে আমি একই বার্তার পুনরাবৃত্তি করেছি। এটা আমেরিকার পলিসি- আমরা অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সমর্থন করি। কারো দ্বারা কোনো সহিংসতা চাই না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, অবাধ-সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে প্রত্যেকের ভূমিকা পালন করার আছে। সরকারের ভূমিকা আছে, গণমাধ্যমে ভূমিকা আছে, বিচার বিভাগ, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, নিরাপত্তা বাহিনী; অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রত্যেকেরই ভূমিকা পালন করার আছে।
‘আমি আবারও বলছি, যুক্তরাষ্ট্র কোনো নির্দিষ্ট দলকে সমর্থন করে না। আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করি, যে পদ্ধতিতে বাংলাদেশের জনগণ তাদের পরবর্তী সরকার বেছে নেবে।’
‘চাপ যদি থাকে সেটা বিবেকের চাপ’ : পিটার হাসের সঙ্গে সোয়া এক ঘণ্টার বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও। নির্বাচন সামনে রেখে সরকার বিদেশিদের কোনো ‘চাপ’ অনুভব করছে কি না, সেই প্রশ্ন রাখা হয় তার কাছে।
জবাবে কাদের বলেন, “আমরা চাপ অনুভব করব কেন? ফ্রি, ফেয়ার ইলেকশন করা আমাদের কমিটমেন্ট। এখানে চাপ অনুভব করব কেন? যদি বলেন, চাপ, তাহলে বিবেকের চাপ। ‘আমেরিকার সাথে আমাদের বিভিন্ন লেনদেন আছে, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজমান। আমেরিকার মান্যবর রাষ্ট্রদূত আমাদের পার্টি অফিসে এসেছিলেন। তারা আমাদের এই অফিসে আগে কখনো আসেননি। তিনি আসলেন, দেখে গেছেন।’
কাদের বলেন, ‘কথা যেটা, আগামী নির্বাচন। নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা সব সময় বলি, নির্বাচন নিয়ে আমাদের যে বক্তব্য, আমরা যার সঙ্গে আলাপ করি, আমাদের অঙ্গীকার ও বক্তব্য একটি। এটি অত্যন্ত ক্লিয়ার। আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমরা সবার সঙ্গে বলছি। এটা আমাদের কমিটমেন্ট। দেশের জনগণের কাছে কমিটমেন্ট।’
বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে আওয়ামী লীগের ‘দীর্ঘ আন্দোলনের সোনালী ফসল’ হিসেবে বর্ণনা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রকে রক্ষা করা এটা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। এ দায়িত্ব আমরা পালন করে যাচ্ছি।’
পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে এক প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমরা কোনো কমপ্লেইন নিয়ে কথা বলিনি। তার কথা সে বলেছে। আমরা আমাদের কথা বলেছি। মার্কিন অ্যাম্বাসেডর কোথাও তার কথায় কেয়ারটেকার সরকার, পার্লামেন্টের বিলুপ্তি, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ এ ধরনের কোনো কথা বলেনি। কথা হয়েছে- ফ্রি, ফেয়ার ও পিসফুল নির্বাচন।’ মার্কিনিদের পক্ষ থেকে কোনো পরামর্শ দেওয়া হয়নি বলে জানিয়ে কাদের বলেন, ‘সংলাপের বিষয়ে কোনো কথা হয়নি।’