কল্যাণ ডেস্ক
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ফর্ম কেনার রীতিমতো হিড়িক পড়েছে। রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ছাড়াও সাবেক আমলা, ক্রিকেটার, ফুটবলার, অভিনেত্রী, সাংবাদিক সবাই লাইন দিয়েছেন।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না গেলে বিভিন্ন আসনে আওয়ামী লীগের অনেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারেন।
এমনকি যারা জোট করার আশায় আছেন তারাও নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকাই চাইছেন।
চারদিনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফর্ম বিক্রি হয়েছে তিন হাজার ৩৬২টি। এতে দলটির আয় হয়েছে ১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা। মঙ্গলবার মনোনয়ন ফর্ম বিক্রি শেষ হয়েছে।
বিশ্লেষক ও আওয়ামী লীগ নেতা এবং প্রার্থী হতে ইচ্ছুকদের সাথে কথা বলে এর বেশ কয়েকটি কারণ জানা গেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ, ফর্ম ক্রেতারা মনে করছেন, বিএনপি যেহেতু নির্বাচনে যাচ্ছে না বলেই মনে হচ্ছে তাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলে জয়ী হওয়া নিশ্চিতই বলা যায়। আর ২০১৪ সালের মতো হলে নির্বাচনে তেমন খরচও থাকবে না। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ও জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হবে। এর বাইরেও কেউ প্রচার পেতে, কেউ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না পেলেও উপজেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকারের আরও যে নির্বাচন আছে তাতে মনোনয়ন নিশ্চিত করার জন্য অথবা রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে জায়গা পেতে এটাকে ব্যবহার করতে চান। আর যিনি মনোনয়ন পাবেন তার সঙ্গে দর কষাকষিরও একটা পথ হবে এই মনোনয়ন চাওয়া।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না গেলে বিভিন্ন আসনে আওয়ামী লীগের অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার আশঙ্কা আছে এবার। কারণ আওয়ামী লীগের অনেক এমপিই এখন এলাকায় জনপ্রিয় নন। বিদ্রোহী প্রার্থীরা সেই সুযোগ নিতে চাইবেন। আর এর বাইরেও বিএনপিসহ আরো অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার আশঙ্কা আছে। আর সেটা হলেও আওয়ামী লীগ নির্বাচনে নতুন এক পরিস্থিতির মুখে পড়তে পারে।
ঝালকাঠি-১ আসন থেকে এরইমধ্যে ১০-১২ জন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তাদের একজন হলেন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা মনিরুজ্জামান মনির। তার কথা, ‘‘দলের হাইব্রিডরা এবারও তৎপর। এইরকম দুই হাজার হাইব্রিডের তালিকা করা হয়েছিলো ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। তাদের মধ্যে এমপিও আছেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এর বাইরে কেউ প্রচার পেতে, কেউ যদি পেয়ে যাই এই মনোভাব থেকে। আবার কেউ মনে করছেন মনোনয়ন পেলেই জিতে যাবেন, শিওর শট। তবে আমাদের বিশ্বাস এবার ত্যাগী এবং জনপ্রিয়রাই মনোনয়ন পাবেন।”
টাঙ্গাইল-২ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি তানভীর হাসান ( ছোট মনির) মনে করেন, ‘‘দেশের সেবা করার আগ্রহ থেকেই হয়তো অনেকে এবার মনোনয়ন চাইছেন। তবে তাদেরই মনোনয়ন চাওয়া উচিত যাদের দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছা এবং অভিজ্ঞতা আছে। আমি ১৫ বছর জার্মানি ছিলাম। দেশে ফিরে মানুষের জন্য কাজ করতে রাজনীতি করছি।”
তার কথা, ‘‘স্বাধীন দেশ সবাই মনোনয়ন চাইতে পারেন। অভিনেতা, খেলোয়াড়, সাংবাদিক সবাই চাইছেন। কিন্তু মনোনয়ন নির্ভর করছে শেখ হাসিনার ওপর।”
চার দিনে ঢাকা বিভাগে ৭৩০টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৫৯টি, সিলেট বিভাগ ১৭২টি, ময়মনসিংহ বিভাগ ২৯৫টি, বরিশাল বিভাগে ২৫৮টি, খুলনা বিভাগে ৪১৬টি, রংপুর বিভাগে ৩০২টি ও রাজশাহী বিভাগে ৪০৯টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন মনে করেন, ‘‘আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। অনেক নেতা। অনেকই এমপি হতে চান। তাই মনোনয়ন চাইছেন। এতে দোষের কিছু নাই। তবে মনোনয়ন তো দেবেন শেখ হাসিনা। এটা নিয়ে তিনি হোম ওয়ার্ক করেছেন। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ নিজস্ব প্রার্থীদের ব্যাপারে নিজস্ব জরিপ আছে তার কাছে। তিনি জনপ্রিয়তা ও যোগ্যতা দেখে মনোনয়ন দেবেন।”
এস এম কামাল হোসেন খুলনার একটি আসনের জন্য নিজেও মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘কেউ কেউ শিওর শট চিন্তা করে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু এবার সেরকম হবে না। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাাচত হওয়ার সুযোগও থাকবে বলে মনে হয় না।”
আজ ২৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডেও বৈঠক বসবে। ওই বৈঠকে মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে। নির্বাচনের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে। জানা গেছে বিএনপির শেষ অবস্থান দেখে মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে। জোটের মধ্য থেকে কাদের নৌকা প্রতীক দেয়া হবে তাও বিএনপির অবস্থানের ওপর নির্ভর করছে।
বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে এলে আওয়ামী লীগ ‘পপুলার’ প্রার্থীদের বেছে নেবে। তা না হলে বর্তমান এমপিদেরই প্রাধান্য থাকবে। তবে নির্বাচন জমাতে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে দলটি নমনীয় থাকবে বলে জানা গেছে।
এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘‘ক্রিকেটার, অভিনেতা-অভিনেত্রী, সাংবাদিক অনেকেই মনোনয়ন চাইলেও তারা পাবেন বলে মনে হয় না। রাজনৈতিক প্রার্থীদেরই প্রাধান্য থাকবে। আর মনোনয়ন চূড়ান্ত হবার পর বিভিন্ন আসনে কোন্দল না হলেও মান অভিমান থাকবে। ”রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার মনে করেন, ‘‘নামহীন, গন্ধহীন এলেবেলে অনেকেই এবার মনোনায়ন ফরম কিনছেন। আমার মনে হয় তাদের বড় একটি অংশ কিনছেন প্রচারের আশায়। আর একটা কারণ হলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলে জয় লাভের সমূহ সম্ভাবনা দেখছেন তারা। আর এর আগে শিওর শটের চিন্তা ছিলো। এবারও বিএনপি না থাকায় সেরকম না হলেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলে জয়ী হওয়ার বেশ একটা সম্ভাবনা আছে। এবার শিওর শট নাও হতে পারে। কারণ অন্যান্য দল থাকবে। আরও কিছু বিষয় আছে।”