আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ, কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি: ব্রিজ, কালভার্টের মুখ বন্ধসহ মৎস্য ঘেরের অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধের কারণে যশোরের কেশবপুরে ১০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী জীবন যাপন করছে। পানিবন্দি এলাকার নারী পুরুষ ও শিশুরা চর্মরোগসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। বসতবাড়িতে পানি ওঠার কারণে অনেক পরিবার বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। এসব এলাকার মানুষের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে ডিঙি নৌকা ও বাঁশের সাঁকো। জলাবদ্ধতার কারণে ভেঙে পড়েছে গ্রামীণ অবকাঠামো।
ভবদহ প্রকল্পের আওতায় পাঁজিয়া ও সুফলাকাটি ইউনিয়নের কালিচরণপুর, বাগডাঙ্গা, মনোহরনগর, বেতিখোলা, মাদারডাঙ্গা, নারায়ণপুর, পাথরঘাটা, আড়–য়া, ময়নাপুর, সানতলা ও গৃধরনগর গ্রামের কয়েক হাজার জনগণ বিগত ৭/৮ বছর ধরে পানিবন্দি জীবন যাপন করছে। এরমধ্যে বাগডাঙ্গা ও মনোহরনগর গ্রামের মানুষ সম্পূর্ণ পানিবন্দি। অতীতে এসব এলাকার মানুষ জমিতে চাষাবাদ ও খালবিলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। ২০০০ সালের দিকে এলাকার প্রভাবশালীরা বিলগুলি দখল করে মাছের ঘের করেন। এসময় ঘের মালিকরা ব্রিজ, কালভার্টের মুখ ভরাটসহ অপরিকল্পিত বেঁড়িবাধ দিয়ে পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ করে ফেলে। এরপরও ঘের মালিকরা মাছ চাষের জন্যে শুষ্ক মওসুমে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে বিলগুলি ভরাট করে রাখে। ফলে বর্ষাকালে যেনতেন বৃষ্টিতেই পানি মানুষের বসত বাড়িতে উঠে যায়। এলাকায় দেখা দেয় কৃত্রিম জলাবদ্ধতা। প্রায় সারা বছরই মানুষের বসতভিটায় পানি থাকায় এলাকার গ্রামীণ অবকাঠামো একেবারেই ভেঙে পড়েছে। তাই পানিবন্দি জনগণ পানির হাত থেকে রক্ষায় প্রতিটি বাড়িতে ডিঙি নৌকা ও বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে যাতায়াত করছে। খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে হতদরিদ্র পরিবারগুলোর মাঝে। কাজ কর্ম না থাকায় শত শত নারী পুরুষ ও শিশুরা প্রতিদিন বাড়ির সামনে রাস্তার উপর বসে থাকে।
বাগডাঙ্গা গ্রামের অনাথ বন্ধু সরকার, মিহির সরকার জানান, গত আশ্বিন মাস থেকে তাদের গ্রামের প্রতিটি মানুষের বাড়িতে বাড়িতে পানি। আজও পানি নামেনি। এরপরও মনিরামপুর এলাকার ঘের মালিকদের পাশাপাশি পাঁজিয়া ও সুফলাকাটি ইউনিয়নের ঘের মালিকরা দিন রাত স্যালো মেশিন দিয়ে বিলের পানি নিষ্কাশন কার্যক্রম চালানোর ফলে দিন দিন পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি নিষ্কাশন পথ না থাকায় তা উঠে যাচ্ছে মানুষের বসতভিটায়। বসতভিটায় পানি ওঠার কারণে বেতিখোলা গ্রামের ইজ্জেত আলী মোড়ল ৬ মাস আগে পরিবার নিয়ে বাড়ির মায়া ত্যাগ করে অন্যত্র চলে গেছেন। এলাকার নারী-পুরুষ ও শিশুরা সারাদিন পানিতে চলাচলের কারণে জ্বর, সর্দি-কাশি, চুলকানি পাচড়াসহ নানাবিধ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। ৫/৬ বছর ধরে কোন ফসল আবাদ হচ্ছে না। বিল সংলগ্ন এলাকার কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে পানি নিষ্কাশনে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে গেলেও কার্যত কোন সুফল আসেনি।
২৭ বিল পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক বাবর আলী গোলদার বলেন, মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে রাজনীতি চলছে। শ্রী নদী পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশন করতে গিয়ে ঘের মালিক আকবর আলীর বেতিখোলা বিলের ঘেরের বেঁড়ি ভেঙে নতুন করে পানি মানুষের বসতভিটায় উঠে গেছে। ঘের মালিক আকবর আলী বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টির পানির চাপে ঘেরের বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় পানি উঠে গেছে মানুষের বসত ভিটায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋুতুরাজ সরকার বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে চলতি বোরো মওসুমে ভবদহ সংলগ্ন ১৬ বিলের সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমি পতিত থাকার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুন্সি আছাদুল্লাহ বলেন, ভবদহ সংলগ্ন ২৭ বিলের পানি কাটাখালির স্লুইস গেট হয়ে ডায়ের খালের ৮ ব্যান্ড স্লুইস গেট দিয়ে শ্রী নদীতে নিষ্কাশন হয়ে থাকে। কিন্তু শ্রী নদী পলিতে ভরাট হওয়ার কারণে পানি সরছে না। ভবদহ প্রকল্পে শ্রী নদী অন্তর্ভুক্ত আছে। ভবদহ প্রকল্প অনুমোদন না হলে এ সমস্যার সমাধান হবে না।