আব্দুল্লাহ সোহান, মণিরামপুর: মাটির চুলা জ্বলছে, চুলার ওপরে বসানো হয়েছে খোলা। একটু পরপর খোলার ঢাকনা তুলে কড়াইতে তুলে দিচ্ছেন চালের গুড়ার গোলা। কয়েক মিনিট রেখেই গরম গরম চিতই পিঠা নামিয়ে প্লেট ধরিয়ে ক্রেতাদের হাতে দিচ্ছেন। প্লেটের এক পাশে দেয়া হচ্ছে পছন্দ মতো সরিষা ভর্তা, ধনে পাতা ভর্তা, মরিচ ভর্তা ও চিংড়ি মাছের ভর্তা। এমন দৃশ্য মিললো মণিরামপুর পৌরসভার মোহনপুর পোস্ট অফিস পাড়ায়।
মোহনপুরে শীত এলেই যেন আয়ের পথ খুলে যায় এ মৌসুমি পিঠা বিক্রেতাদের। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত অবধী চলে পিঠা তৈরির কাজ। পিঠা তৈরি করে বিক্রি থেকে আয় হয় ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা।
পিঠা বিক্রেতা রুকসানা বলেন, আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ, আর্থিকভাবে তেমন স্বচ্ছল নই। শীত মৌসুম এলেই স্বল্প পুঁজি নিয়ে বাড়তি আয়ের আশায় পিঠা বিক্রি করি। এই পিঠা বিক্রি করি শীতের তিন থেকে চার মাস যাবত। এ কাজে আমার স্বামী আমাকে সহযোগিতা করে। সেও মাঝে মধ্যে আমাকে পিঠা বিক্রি করতে সাহায্য করে।
একাধিক পিঠা বিক্রেতার সাথে আলাপ করে জানা গেছে, শীতের রাতে গরম গরম পিঠার সাথে পরিচিত মণিরামপুরের সবাই। এখানে চিতই পিঠা খুবই জনপ্রিয়। সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে পিঠাপ্রেমীরা ভিড় জমায় পিঠার দোকানে। লাইন দিয়ে পিঠা খায় তারা। কেউ কেউ খেয়ে আবার বাসার লোকজনের জন্য নিয়েও যায়। প্রতিবছর পিঠার দোকান যা শুধু শীত মৌসুমেই বসে। এছাড়াও পৌরশহরের মহিলা কলেজ রোড, বাসস্ট্যান্ডসহ নানা জায়গায় ভ্রাম্যমাণ পিঠা বিক্রির দোকান রয়েছে। এখানে প্রতি পিস চিতই পিঠা বিক্রি হয় ৫, ১০ ও ১৫ টাকা দরে। বিকেল থেকে শুরু হয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে পিঠা বিক্রি।
কলেজ ছাত্রী তাসনিয়া রহমান বলেন, বাসায় পিঠা তৈরি করা এখন অনেক কষ্ট। তাই বাজারের পিঠা তার পরিবারের সদস্যদের জন্য কিনে নিয়ে বাসায় যাচ্ছি। খরচও খুব বেশি না। বাড়িতে বানাতে যে কষ্ট আর আর্থিক খরচ, তারচেয়ে এটাই বেস্ট।’
আরেক ক্রেতা আবু মুছা বলেন, ‘সন্ধ্যার পরে হালকা কুয়াশায় প্রচ- ঠান্ডা অনুভব হয়, তখন ভ্রাম্যমাণ এ পিঠার দোকান থেকে আমি পিঠা খেয়ে থাকি। চিতই পিঠা আমার খুব পছন্দ। শীতের সময় দোকানে পাশে দাঁড়িয়ে পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা।’
পিঠা বিক্রেতা রেজাউল করিম বলেন, পেশায় আমি পল্লী বিদ্যুতের মিটার রিডার। অফিসের কাজ শেষে শীতের মৌসুমে প্রতিদিন সন্ধ্যার পরপরই পিঠা বিক্রি করে থাকি। সন্ধ্যা থেকে রাত অবধী ক্রেতা থাকে।
এ ব্যাপারে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মৌসুমি আক্তার বলেন, স্বল্প আয়ের মানুষের শীত এলে কিছু মানুষের আয়ের পথ খোলে। তাই তারা যাতে নির্বিঘেœ ব্যবসা করতে পারে, সে বিষয়ে সকলের সহযোগিতা করা উচিত। আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।