ঢাকা অফিস: আগামী কাল শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিল। কাউন্সিলের সকল প্রস্তুতিও প্রায় শেষ হয়েছে, এখন অপেক্ষা মাহেন্দ্রক্ষণের।
সময় যতই ঘনিয়ে আসছে নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা আর উৎসব বাড়ছে। সেই সঙ্গে বর্তমান কমিটির নেতাদের মধ্যে পদ পাওয়া ও পদ চলে যাওয়ার ভয়ে ‘বুকটা দুরু দুরু করছে’। মুখে না বললেও অনেকেই বেশ চিন্তিত।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বুকটা কার দুরু দুরু করছে না। সবাই টেনশনে আছে। অনেকেই অনেক কথা বলে। অমুক হয়ে গেছে, তমুক রয়ে গেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সভাপতি ছাড়া এখনও কেউ জানে না। তাই সবার বুকই দুরু দুরু করে।
এদিকে কাউন্সিল ঘিরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে।
আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলের মূল প্রতিপ্রাদ্য ঠিক করা হয়েছে-‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে।’
আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ঘিরে প্রতিবারই নানা গুঞ্জন ওঠে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে সভাপতি পদে যে শেখ হাসিনাই নতুন করে দায়িত্ব পাচ্ছেন তা নিয়ে দলে বা দলের বাইরে কারও মনেই সন্দেহ-সংশয় নেই।
সভাপতি পদের বিকল্প না থাকায় আওয়ামী লীগের প্রতিটি সম্মেলনের মতো এবারও মূল আলোচনা সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আবারও একই পদে থাকছেন নাকি নতুন কেউ দায়িত্ব পাচ্ছেন-তা নিয়ে চলছে চুলচেঁড়া বিশ্লেষণ।
দলের অনেক সিনিয়র নেতা মনে করছেন সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসছে। কিন্তু তা নিয়ে এখনও মুখ খোলেননি দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। সে কারণে এই পদে কে আসছেন সে রহস্যের জট খোলেনি। দলের হাইকমান্ডের নীরবতার কারণে পদপ্রত্যাশীরা প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। বিভিন্ন ইঙ্গিতে নিজের প্রার্থিতার জানান দিলেও প্রকাশ্যে কেউই কিছুই বলছেন না।
বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদকের পদ পান। ২১তম কাউন্সিলে তিনি পুননির্বাচিত হন। এবারও নির্বাচিত হলে ওবায়দুল কাদেরের হ্যাট্ট্রিক হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কে হবেন তা নির্ধারণ করবেন দলের কাউন্সিলররা। কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে তা চূড়ান্ত করা হবে। নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দলের শীর্ষ পদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরই মধ্যে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিটি গঠন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভায় এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন- ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ও মশিউর রহমান।
এবারের কাউন্সিলে কোনো চমক থাকছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাড. জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে, জনগণ ক্ষমতায় বসানোর আগে যে কাউন্সিলটি হয়েছিল,
সেই কাউন্সিলে ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য স্থির করেছিলেন মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। আজ বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০৪১ সালকে সামনে রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় থাকছে এবারের সম্মেলনে। আর আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল মানেই কিছু নতুনত্ব, কিছু চমক অবশ্যই থাকে।
তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে তেমন কোনো পরিবর্তন বা রদবদল আসছে না বলে আভাস দিয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খান। তিনি বলেন, যোগ্যতার প্রমাণ দেখানোয় এবারও কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদের আসতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, নতুন কমিটির দায়িত্বই হবে সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে আওয়ামী লীগকে জয়ী করার জন্য দলের সাংগঠনিক শক্তি গড়ে তোলা। আওয়ামী লীগের এই নতুন কমিটি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও আন্দোলনের নামে নাশকতা প্রতিহত করতে সক্ষম হবে এই কমিটি।
এদিকে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ ছাড়াও আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আরেকটি বিষয় নিয়েও জোর আলোচনা চলছে। বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে এই আলোচনা। বিশেষ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিকে নিয়ে এই আলোচনা। তাদের কেউ দলে আসছেন কি না তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে আগ্রহ ও কৌতূহলের শেষ নেই।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় কমিটির সভায় বেশ কয়েকজন নেতা প্রসঙ্গটি তোলেন। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, এখন সবাই বড় হয়েছে। রাজনীতিতে আসবে কি আসবে না, সেটা তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়। তারা যদি রাজনীতিতে যুক্ত হতে চায়, হতে পারে। এ বিষয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই।
এদিকে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে কাউন্সিলের মঞ্চে স্বপ্নের পদ্মা সেতু ও নৌকা দুটির অবয়ব তুলে ধরা হবে।
সোহরাওয়াদী উদ্যান ঘুরে দেখা যায় আয়োজনের প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। সম্মেলন সামনে রেখে গঠিত ১১টি উপকমিটির কাজও সম্পন্ন হয়েছে। মঞ্চের আশপাশের সাজসজ্জার কাজও শেষ। আজ-কালের মধ্যে নিরাপত্তাবলয়ের আওতায় চলে আসবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকা। ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য, ৪৪ ফুট প্রস্থ ও ৭ ফুট উচ্চতার মঞ্চ বানানো হয়েছে। সংবাদকর্মীদের জন্য রাখা হয়েছে নির্দিষ্ট জায়গা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য বানানো হয়েছে আলাদা মঞ্চ।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও অর্থ-উপ কমিটির আহ্বায়ক কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, কমপক্ষে ১ লাখ লোকের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আমাদের এবারের কাউন্সিলের প্যান্ডেলটা ‘ল’ শেপ হবে। এতে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার লোকের বসার আয়োজন থাকবে। গতবার আমাদের সম্মেলন ছিল দুই দিনব্যাপী।
এবার একদিনের সম্মেলন হবে। প্রথম অধিবেশনের পর দ্বিতীয় অধিবেশনের আগে নামাজ ও খাওয়ার জন্য একটা বিরতি থাকবে। তারপরই আমাদের দ্বিতীয় অধিবেশনে ৭ হাজার কাউন্সিলরের মতামতের ভিত্তিতে নতুন কমিটি করা হবে। সেই অপেক্ষায় আমরা সবাই থাকব।
মঞ্চ সাজ সজ্জা উপ-কমিটির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, মঞ্চে নৌকা ও পদ্মা সেতু দুইটার আদলই থাকবে। এর মধ্যে আমাদের উন্নয়ন, অগ্রগতির চিত্র থাকবে। পেছনে বঙ্গবন্ধু ও নেত্রীর ছবি থাকবে, সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ছবি থাকবে। এছাড়া আমাদের জাতীয় চার নেতার ছবি থাকবে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শামসুল হক ও মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশের ছবি আমাদের মঞ্চের পেছনে থাকবে।