লোহাগড়া প্রতিনিধি: নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী লক্ষ্মীপাশা আদর্শ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
পরীক্ষার জন্য প্রশ্নমালা প্রস্তুতের আগে পাঁচ সদস্যের নিয়োগ বোর্ডের বাইরে অনাকাক্সিক্ষতদের উপস্থিতি ও হুমকি-ধমকির অভিযোগে নিরাপত্তার অভাব বোধ করে বিদ্যালয়ের সভাপতি নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, লক্ষীপাশা আদর্শ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে ১৩ জন আবেদন করেন। শনিবার পরীক্ষা গ্রহণের দিন সকাল ১১টার দিকে পরীক্ষার জন্য প্রশ্নমালা প্রস্তুত করার আগে পাঁচ সদস্যের নিয়োগ বোর্ডের সদস্যরা ছাড়াও প্রধান শিক্ষকের রুমে উপস্থিত হন জেলা শিক্ষা অফিসার সাইদুল হক।
বিষয়টি নিয়ে প্রথমে বিতর্ক শুরু হয়। জেলা শিক্ষা অফিসারের উপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকসহ নিয়োগ বোর্ড ও উপস্থিত লোকজনদের বলেন, লক্ষীপাশা স্কুলের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে আমার কাছে এই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রসহ এলাকার মানুষ অভিযোগ করেছেন যে, অযোগ্য কাউকে নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
জেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে আমি দায় এড়াতে পারিনা। দায়বদ্ধতা থেকেই এখানে এসেছি। তিনি আরো বলেন, আমি নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের হয়তো অনুরোধ করতে পারি যে এই বই থেকে কোন প্রশ্ন করেন। আমি চাই একজন ভালো শিক্ষক নিয়োগ পাক।
লক্ষীপাশা আদর্শ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শেখ বদরুল আলম অভিযোগ করেন, জেলা শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে অন্য একটি স্কুলে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিজ পছন্দের কাউকে নিয়োগ দিতে প্রশ্নের বইসহ এখানে এসেছেন। যার নিজের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তিনি কিভাবে নিরপেক্ষ থেকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেবেন?
এর পরই উপস্থিত হন কাশিপুর এসি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও কাশিপুর ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মতিয়ার রহমান। তিনি নিয়োগ বোর্ড কর্তৃপক্ষকে বলেন, জানতে পারলাম লক্ষ্মীপাশা আদর্শ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন করেছেন আনোয়ার হোসেন।
তিনি কাশিপুর এ,সি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। বিধি অনুয়ায়ি একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক অন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন করবার আগে পূর্বের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতির নিকট থেকে এনওসি (নো অবজেকশান সার্টিফিকেট) নিয়ে আবেদনের সাথে জমা দিতে হয়। আমিতো তাকে এনওসি দেয়নি।
উপস্থিত ডিজি প্রতিনিধি, জেলা শিক্ষা অফিসার, লোহাগড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার সহ নিয়োগ বোর্ড কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীদের আবেদন পুনরায় দেখেন। এ সময় কাশিপুর এ,সি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মতিয়ার রহমান কর্তৃক শিক্ষক আনোয়ার হোসেনকে এনওসি প্রদানের সার্টিফিকেট দেখালে মতিয়ার রহমান বলেন, ওই এনওসি তে আমার স্বাক্ষর না।
ওদিকে, কাগজপত্র দেখতে গিয়ে জানা যায়, লোহাগড়া লক্ষীপাশা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কেএম রেজাউল ইসলাম লক্ষীপাশা আদর্শ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন করেছেন কিন্তু তিনিও এনওসি জমা দেননি। অবশ্য কেএম রেজাউল ইসলাম জানান, তিনি এনওসি জমা দিয়েছেন।
সার্বিক বিষয় নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। লক্ষীপাশা আদর্শ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শেখ বদরুল আলম অভিযোগ করে বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার কদিন আগে প্রার্থী কেএম রেজাউল ইসলাম জেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে একান্তে দেখা করেছেন। বিষয়টি দৃষ্টিকটু ও সন্দেহজনক।
তেমনি কাশিপুর এসি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মতিয়ার রহমানের বড় ভাইয়ের স্ত্রী তামান্না খানম প্রধান শিক্ষক পদে প্রার্থী। তাই ওই দুজনে নিয়োগ নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছেন। আমাকে মতিয়ার রহমান হুমকিও দিয়েছেন। নিরাপত্তার অভাব বোধ করে আমি নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করেছি।
নিয়োগ বোর্ডের অন্যতম সদস্য ডিজি প্রতিনিধি জাকির হোসেন সিকদার বলেন, নিয়োগ বোর্ডের বাইরে অন্য কারো উপস্থিতি থাকলে তো আমরা প্রভাবিত হতে পারি। আমরা বই থেকে প্রশ্ন করবো নাকি মাথা থেকে প্রশ্ন করবো সে ব্যাপারে তো কেউ আমাদের গাইডলাইন দিতে পারবে না। নিয়োগ বোর্ড নিয়োগের সুপারিশ করবে। কিন্তু নিয়োগ দেবে পরিচালনা পর্ষদ।