কল্যাণ ডেস্ক: গত বছর ২ এপ্রিল ঢাকায় প্রথম বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কাবাডিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। ফাইনালে কেনিয়ার বিপক্ষে জয় আসে ৩৮-২৮ পয়েন্টে। বছর না ঘুরতেই টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় আসরের ফাইনালে আজ আবার বাংলাদেশের সামনে পড়েছিল সেই কেনিয়াই। তবে এবার জয় এসেছে রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা ছড়িয়ে।
শেষক্ষণে কেনিয়ার দুর্দান্ত লড়াই আশা-নিরাশার দোলাচলে ফেলে দেয় বাংলাদেশকে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ফাইনাল জিতেছে ৩৪–৩১ পয়েন্টে। স্বাধীনতা দিবসের ঠিক আগে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে এল আরেকটি সাফল্য।
কাবাডির দেশ থেকে কাবাডির শিরোপা প্রায় নিয়েই যাচ্ছিল কেনিয়া। বাংলাদেশ দল টেকনিকে এগিয়ে থাকলেও উচ্চতা আর শক্তি কাজে লাগিয়েছে কেনিয়া। তাদের খেলোয়াড়দের আটকাতে বারবার খেই হারিয়ে ফেলছিলেন তুহিন তরফদার, আরদুজ্জামান মুন্সিরা।
অন্যদিকে পয়েন্ট ছিনিয়ে আনতে রবিউল, জাকির, ফেরদৌসরা নিজেদের কোর্টে আসতে পারেননি প্রতিপক্ষের দুরন্ত রক্ষণে ধরা পড়ে। ৪০ মিনিটের ম্যাচের শুরুতে কেনিয়া এগিয়ে যায় ৮-৩ পয়েন্টে।
তবে আস্তে আস্তে কৌশলে বদল আনেন বাংলাদেশের ভারতীয় কোচ সাজু রাম গয়াত। তাঁর শিষ্যরাও ঘুরে দাঁড়াতে থাকেন। প্রতিপক্ষকে আটকানোর ঝুঁকিতে না গিয়ে পয়েন্ট আনায় মনোযোগ দেন স্বাগতিক খেলোয়াড়েরা। একপর্যায়ে স্কোর দাঁড়ায় কেনিয়া ১১, বাংলাদেশ ৯।
পয়েন্ট ছিনিয়ে এনে কেনিয়ার খেলোয়াড়দের আউট করতে থাকেন রাজীব-জাকিররা। প্রথমার্ধে কেনিয়াকে অলআউট করে বাংলাদেশ পায় প্রথম লোনা। এই অর্ধের শেষে ১৭-১৪ পয়েন্টে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ।
বিরতির পর শুরুতেই প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে আটকাতে গিয়ে পয়েন্ট দেন ফেরদৌস। একপর্যায়ে বাংলাদেশ তিনজনের দলে পরিণত হওয়ায় অলআউটের শঙ্কা জাগে। পরক্ষণেই অবশ্য কেনিয়ার ভিক্টরকে আউট করে সমতা আনে বাংলাদেশ। ম্যাচের শেষ মিনিটে কেনিয়ার সেরা খেলোয়াড় ভিক্টর ভুল করলে দুই পয়েন্ট পেয়ে যায় বাংলাদেশ। তবে ঘাড়ের ওপর তখন গরম নিশ্বাস ফেলছিল কেনিয়া। শেষ মিনিটের স্কোরলাইন বাংলাদেশ ৩২ কেনিয়া ২৯।
সবার চোখ তখন ঘড়ির দিকে। ম্যাচটা শেষ হয় ৩৪-৩১ পয়েন্টে। শেষ বাঁশি বাজতেই পল্টন ভলিবল স্টেডিয়ামের গ্যালারি ঠাসা দর্শক মেতে ওঠেন আনন্দে। মাঠে বিজয়ী খেলোয়াড়দের আনন্দের বাঁধ যেন মানছিল না। তুহিন তরফদার-আরদুজ্জামান মুন্সিরা ভারতীয় কোচকে মাথার ওপর তুলে নাচতে শুরু করেন। কোচ, কর্মকর্তা, খেলোয়াড়েরা এরপর লাল–সবুজ পতাকা দিয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠেন। কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা। তবে গত কয়েক বছরে দেশের কাবাডি পিছিয়েছে অনেক। আবার সেই কাবাডিকে টেনে তুলতে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন গত বছর এই টুর্নামেন্ট চালু করেছে। প্রথমবার অংশ নিয়েছিল ৫টি দেশ। এবার ৮টি। ১৯ মার্চ শুরু হওয়া এবারের প্রতিযোগিতার ট্রফি ঘরের ছেলেরা ঘরেই রেখে দিলেন। বাংলাদেশের কাবাডির জন্য যা নতুন অক্সিজেনই।
ফাইনাল শেষে বাংলাদেশ কোচ সাজু রাম গয়াত ছিলেন উচ্ছ্বসিত, ‘ছেলেরা আজ টুর্নামেন্টের সেরাটা খেলেছে। আমার পরিকল্পনা শতভাগ বাস্তবায়ন করেছে। আমি বলেছিলাম, বেশি আক্রমণাত্মক খেলার দরকার নেই। রক্ষণে বেশি মনোযোগ দাও। সেটাই তারা করেছে। টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়নশিপ ধরে রাখার লক্ষ্য আমরা পূরণ করেছি। মর্যাদার বঙ্গবন্ধু কাপটা আমরা ঘরে রেখে দিতে পেরেছি। সামনে আমাদের লক্ষ্য এশিয়ান গেমস।’
তবে কেনিয়া দলের নারী কোচ ল্যাভেন্তার ওগুতা ফাইনালে শেষে ছিলেন ক্ষুব্ধ। তাঁর অভিযোগ, ‘ম্যাচে রেফারির (ভারতীয়) ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। ম্যাচে অনেকবার আমরা রেফারির সঠিক সিদ্ধান্ত পাইনি। শেষ দিকে রেফারি যেটা করেছে, সেটি ভালো করেনি। আমাদের রিভিউর কোনো সুযোগই দেয়নি। বাজে রেফারিংয়ের শিকার হয়েছি। রেফারির বিরুদ্ধে আমরা আন্তর্জাতিক কাবাডিতে অভিযোগ জানাব।’